১. শুরুর পথ – স্বপ্নে ছাওয়া
“ডাক্তার হবো” — এই স্বপ্নটা ছিল তন্ময়ের ছোটবেলা থেকেই। বাবার হাতে কাঁচি লাগার পর পাড়া-প্রতিবেশী যখন "ডাক্তার ডাকো!" বলে চিৎকার করছিল, তখন ছয় বছরের তন্ময় ভাবছিল, "একদিন আমি হবো এমন একজন, যাকে ডাকা হবে বিপদের সময়।"
তন্ময়ের পরিবার গরিব না, ধনীও না। বাবা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, মা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের সংসারে স্বপ্নগুলো অনেক বড়, কিন্তু আয়তনে সীমিত।
---
২. যুদ্ধের শুরু – মেডিকেল ভর্তি যুদ্ধ
এইচএসসি শেষ হতেই শুরু হলো দৌড় – কোচিং, মডেল টেস্ট, ঘুমহীন রাত, চায়ের কাপ, মোটা মোটা বই, আর চারপাশে প্রতিযোগিতা।
তন্ময়ের বন্ধুরা একে একে হারিয়ে গেল কৌশল আর প্রশ্ন ফাঁসের রাজনীতিতে। কেউ বলল, “ঘুষ দিলে সহজে হয়ে যাবে।” কেউ হাল ছেড়ে দিল।
কিন্তু তন্ময় লড়ল – নিজের সততা আর কষ্ট দিয়ে।
---
৩. সাদা অ্যাপ্রোন – সুখ না দুঃস্বপ্ন?
অবশেষে স্বপ্নপূরণ — সে ভর্তি হলো সরকারি মেডিকেলে। সাদা অ্যাপ্রোন পরার দিনটায় মা কেঁদে ফেলল, বাবা মুখে কিছু না বলে ছেলের পিঠে হাত রাখল।
কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তন্ময় বুঝে গেল, মেডিকেলের সাদা অ্যাপ্রোনের ভেতরটা যতটা গর্বের, ততটাই বিষণ্নতা আর ক্লান্তিতে ভরা।
---
৪. ক্লাস, প্র্যাকটিকাল আর আত্মহনন
সকালে ৮টার ক্লাস, দুপুরে প্র্যাকটিকাল, বিকেলে লাইব্রেরি, রাতে ঘুমহীন স্টাডি। ব্যাচমেটদের মুখে হাসি থাকলেও চোখে হতাশা। কারো প্রেম শেষ, কেউ পারিবারিক চাপের নিচে, কেউ নিজেকেই খুঁজে পাচ্ছে না।
তন্ময় মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতো, "এটাই কি আমি চাইছিলাম? এই ক্লান্ত মুখটা?"
এক সিনিয়র আত্মহত্যা করল — পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে। সবাই পোস্ট দিল ফেসবুকে “Rest in peace ভাইয়া”, তারপর আবার বই খুলে বসে পড়ল।
---
৫. ইন্টার্নশিপ – যখন মানুষকে মানুষ মনে হয় না
পড়াশোনার পর ইন্টার্নশিপ — আরও এক চ্যাপ্টার। হাসপাতালের করিডোরে গন্ধ, কান্না, রক্ত আর মৃত্যুর ছায়া। ডিউটিতে সিনিয়রের গালাগালি, রোগীর আত্মীয়ের ধমক, আর নিজের ভিতরের প্রশ্ন — “আমি কি যথেষ্ট মানুষ হতে পেরেছি?”
এক রাতে এক শিশুর মৃত্যু দেখে তন্ময় নিজে নিজে কাঁদতে লাগল, বাথরুমের আয়নায় মুখ ঢেকে বলল, “আমি পারছি না আর…”
---
৬. শেষের দিক – অন্ধকারেও আলোর খোঁজ
একদিন এক বৃদ্ধ রোগী তন্ময়ের হাতে ধরে বলল, “বাবা, তুই থাকলে আমি বেঁচে থাকবো।”
তন্ময় বুঝল, জীবন কেবল নিজের কষ্টের গল্প না, মানুষের আশার আলোও বয়ে আনতে হয়।
তবুও… ডিপ্রেশন রয়ে যায়। রয়ে যায় মাঝরাতে নিঃশব্দ কান্না। কিন্তু তন্ময় এখন জানে, সে একা না। এই লড়াই অনেকের।
---
শেষ কথাঃ
মেডিকেলের পথ যেন সোনালি আলোর নিচে লুকানো কাঁটার বিছানা। এখানে যারা হেঁটে চলে, তাদের হাসির পেছনে থাকে না বলা অনেক কান্না।
তবুও তারা চলে — কারণ তারা জানে, কারো না কারো জীবন এই হাঁটার ওপর নির্ভর করছে।