বিক্রমপুরের রাজা একদিন শিকারে বেরিয়ে ডাকাতদের হাতে আকস্মিকভাবে নিহত হলেন। তখন তার স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। রাজার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবরে রাজ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজপ্রাসাদ ভারী হয়ে ওঠে কান্নার ধ্বনিতে, আর প্রজাদের মনে শুরু হয় উদ্বেগ—কে হবে পরবর্তী রাজা? কে সামলাবে এই বিশাল রাজ্যপাঠ?
রাজার ছিল এক ছোট ভাই, যিনি শারীরিকভাবে কিছুটা প্রতিবন্ধী—এক হাত ছোট ও শক্তিহীন। বুদ্ধিতেও ছিলেন সাধারণের চেয়ে পিছিয়ে। তবে তার স্ত্রী ছিলেন বিপরীত—বিচক্ষণ, দৃঢ়চিত্ত ও অসীম ধৈর্যের অধিকারিণী। বড় রাণী তখন এতটাই শোকাকুল ও দুর্বল ছিলেন যে রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাই প্রজাদের অনুরোধে এবং দরবারের সর্বসম্মতিক্রমে ছোট রাণী সাময়িকভাবে বিক্রমপুরের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
কয়েক মাস পর, বড় রাণীর সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলো। রাজপ্রাসাদের নিয়ম ছিল, রাজবংশের বড় সন্তানই হবে ভবিষ্যৎ রাজা। সবার দৃষ্টি ছিল সেই সন্তান জন্মের দিকে। কিন্তু সব আশা মুহূর্তেই নিভে গেল—বড় রাণী জন্ম দিলেন এক মৃত সন্তানের। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানের এই নির্মম পরিণতি সহ্য করতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন।
ছোট রাণী তখন তাকে প্রাসাদের এক নির্জন কক্ষে স্থান দিলেন, এবং তার দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত করলেন বিশ্বস্ত পরিচারিকাদের। ধীরে ধীরে রাজপ্রাসাদ এবং প্রজারা যেন বড় রাণীর অস্তিত্ব ভুলে যেতে লাগল। ছোট রাণী তখন রাজ্যের দায়িত্ব এককভাবে নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি জন্ম দিলেন দুই পুত্রসন্তানের। তার শাসনে রাজ্য শান্তি, সমৃদ্ধি আর সুব্যবস্থার পথে এগিয়ে যেতে লাগল। প্রজারা তাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ‘জননী রাণী’ নামে ডাকতে শুরু করল।
সবকিছু ঠিকভাবেই চলছিল—যতক্ষণ না একদিন রাজপ্রাসাদের দরজায় উপস্থিত হলো এক অচেনা তরুণী। তার চোখে ছিল অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস, মুখে রহস্যময় এক হাসি। সে জানালো, সে এসেছে রাজ্যের প্রকৃত অধিকার ফেরত নিতে।
প্রাসাদের বাতাস থমকে গেল। কেউ জানে না, সে কে। কেউ বোঝে না, তার এই দাবি কতটা সত্যি…
কিন্তু তার মুখের রেখায়, চাহনিতে, এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের পূর্বাভাস যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।