Posts

গল্প

জীবনের মানে খুঁজুন

June 7, 2025

উত্তম চক্রবর্তী

56
View

শহরের এক ধনাঢ্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অরিন্দম। জীবনের প্রতিটি পরতে ছড়িয়ে ছিল বিলাসিতা- প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা, ঝকঝকে দামি গাড়ি, বিদেশি পোশাক, পাঁচতারা হোটেলের অভিজাত খাবার। বাহ্যিক চাকচিক্যে পূর্ণ হলেও, অরিন্দমের জীবনে সময়ের সবচেয়ে বড়ই অভাব ছিল। ব্যস্ততা যেন তাকে গ্রাস করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গে নিরিবিলি বসে এক কাপ চা খাওয়ার সময়টুকুও তার কাছে একপ্রকার অলীক স্বপ্ন। একমাত্র ছেলের জন্মদিনেও উপস্থিত হতে পারতেন না- স্রেফ একটি কেক পাঠিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করতেন। সম্পর্ক, অনুভব আর আবেগগুলো তার জীবনে কোনো স্থান পেত না, কেবল অর্থ আর কাজই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান।

অসুস্থতা তো আগাম বলে কয়ে আসে না। হঠাৎ একদিন, একটি মেডিকেল রিপোর্ট যেন বাজ পড়ার মতো নেমে এলো অরিন্দমের জীবনে।ডাক্তার বললেন, হৃদযন্ত্রের অবস্থা গুরুতর “অবিলম্বে অস্ত্রোপচার দরকার।” কণ্ঠে আবেগের ছোঁয়া ছিল না, ছিল কেবল কঠোর বাস্তবতার ধ্বনি।

অপারেশনের দিন পাশে ছিলেন তার স্ত্রী অনন্যা এবং একমাত্র ছেলে শুভ। ঈশ্বরের কৃপায় অপারেশন সফল হয়- মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসেন অরিন্দম।
ডাক্তার দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, আপনি দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন, এবার জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে নিন।

এই কথাটাই যেন অরিন্দমের মনে গেঁথে যায়। সেই দিন থেকেই বদলে যেতে থাকেন তিনি। অফিসের কাজ কমিয়ে দেন, পরিবারকে দেন অগ্রাধিকার।
বিলাসবহুল গাড়িটি বিক্রি করে বলেন-
গাড়ি নয়, এবার আমি হেটেই জীবন চালাতে চাই।

ভোরের সূর্যোদয় দেখা নিত্য অভ্যাস। ছাদের পাখির ডাক তাকে দেয় নতুন দিনের আশ্বাস। স্ত্রী অনন্যার সঙ্গে চা খেতে খেতে বলেন, তুমি পাশে আছো বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি। ছেলের সঙ্গে খেলার সময় হারিয়ে যান শৈশবে।

প্রতিবছর একবার করে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান- দেশে বা বিদেশে।
হেসে বলেন-
এখন আর টাকা আয় করছি না, আমি আমার জীবন বাঁচাতে চাই- প্রতি মুহূর্তে।

এই নতুন অরিন্দম যেন সত্যিকারের জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছেন-
প্রিয়জনের সাথে কাটানো সময়ই সবচেয়ে বড় সম্পদ।

একদিন শুভ বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা, আজ তোমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী?

অরিন্দম একটানা তাকিয়ে রইলেন ছেলের চোখে, তারপর হেসে বললেন,
সবচেয়ে দামি জিনিসগুলো টাকায় কেনা যায় না।
একটা সুন্দর শান্ত সকাল, তোমার মায়ের মুখে তৃপ্তির হাসি, তোমার ছোট্ট হাতটা আমার হাতের মুঠোয় আর প্রতিটি মুহূর্তে জীবনের স্বাদ নেওয়ার মতো অবকাশ-
এইগুলোই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এইসবের স্বাদ নিতে আমি একসময় খুব দেরি করে ফেলেছিলাম।

একটু থেমে অরিন্দম আবার বললেন,
আসল কথা, ধন-সম্পদ নয়, সময়ই জীবনের প্রকৃত সম্পদ। সেই সময় যদি প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়, তবেই বুঝি জীবনের মানে জানা যায়, তবেই বুঝি সত্যিকার অর্থে বাঁচা যায়।

তাং- ০৭/০৬/২০২৫ ইং

Comments

    Please login to post comment. Login