পোস্টস

গল্প

কে কার জন্য

২৪ মে ২০২৪

জাকির সোহান

আফরিন সেজেগুজে বেড়ায় না তবুও সকলের নজর পড়ে তার উপর। দর্শকের বুকের ভিতর একটা ক্ষত তৈরি করা আফরিনের এক পলকের কাজ। এই শহরে সে একলা নয় সাথে পাঁচ বছরের একটা মেয়ে। মেয়ে না হয়ে যদি বাচ্চাটা ছেলে হতো নিশ্চয় সিকিউরিটির ব্যাপারে একটা প্লাস পয়েন্ট হতো তার। কিন্তু কপালের লিখন। একটা কল সেন্টারে কাজ করে সে। স্টুডেন্ট অবস্থায় কল সেন্টারে পার্ট টাইম কাজ করত। এরপর এটাই তার একমাত্র পেশা বেশ ক’বছর ধরে। কল সেন্টারে পার্ট  টাইম কাজ করতে করতে একজনের সাথে প্রেম এরপর বিয়ে এবং কিছুদিন পর বাচ্চা। হঠাৎ স্বামী দিলো তালাক। ব্যস। বাস্তবতার দংশনে অতিষ্ঠ সেই থেকে আফরিন।

   স্টুডেন্ট অবস্থায় বেতন পেত ছ’ হাজার।  এখন বারো হাজার পায় ফুল টাইম করেও। বাচ্চাকে নিয়ে এই টাকায় চলার চেষ্টা করছে। হাঁপিয়ে উঠছে দিনকেদিন। বেশি বেতনের জন্য এই কল সেন্টার ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারছে না বয়সের জন্য। বয়স ত্রিশ হয়নি তবুও এটাই বেশি কর্পোরেট দুনিয়ায়। তার উপর সে বিবাহিত এবং এক বাচ্চার মা। চেহারা সুন্দর এবং পরিশ্রমি তারপরও বেশি বেতনে কোথাও কাজ পাচ্ছে না বলে এখানেই আছে।

   আফরিনের বাচ্চাটার হঠাৎ জ্বর। ডেঙ্গু আতংকে অস্থির সে। পরিচিত এক হসপিটালে গেলো। ডাক্তার কোনো রিস্ক নিতে চাইলো না। বললো, এখন ডেঙ্গুর মওসুম চলছে। ডেঙ্গু হতেও পারে আবার নাও  হতে পারে। আপনার বাচ্চাকে এখানে ভর্তি  করান। আমরা পর্যবেক্ষনে রাখি।

আফরিনের বুকের ভেতরটা মনে হয় ভেঙ্গে গেল। সে জানে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সারে সে হোচট খেলো হসপিটালে ভর্তির  কথায়। তাকে তো পথে বসতে হবে। কোনো উপায় নেই! স্থবির আফরিন। এত জমানো টাকা নেই যে হসপিটালের খরচ মেটাতে পারবে। ঢোক গিললো। তার সামন থেকে ডাক্তার কখন উঠে চলে গেছে সে বুঝতেই পারেনি। চেয়ারে আফরিন আর বাচ্চাটা বেডে শোয়ানো। ডাক্তার কিছুক্ষন পর এসে বলতে লাগলো, দেরি করলে ক্ষতি আপনার। বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু আমরা তো বাড়িতে গিয়ে বারবার চেকআপ করতে পারবো না। তাই হসপিটালেই থাকা ভালো।

 আফরিন  জানে পর্যাপ্ত টাকা নেই তারপরও মিরাক্কেল ঘটার আশায় খরচ জিজ্ঞেস করলো। ডাক্তার জানালো, কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার তো হবেই। ত্রিশ হাজার জমানো আছে। ইস! যদি বিশ হাজার কমায়! ডাক্তারকে খুলে বললো সব। ডাক্তার বললো, আমি চাকরি করি এখানে তাই কিছু করার নেই আমার।

  আফরিন বাচ্চাটাকে হসপিটালে ভর্তি  না করিয়ে শুধু ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য স্যাম্পল দিলো। যদি ডেঙ্গু না হয় তাহলে বেঁচে যাবে এ বিপদ থেকে। বাড়িতে এসে মেডিটেশন করছে নিজকে শান্ত রাখতে। পরদিন  মেডিকেল রিপোর্ট  হাতে পেলো। বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছে। চোখ দিয়ে তার পানি বেরুচ্ছে না। তবে একটা কঠিন সাহস সঞ্চার করলো মুহুর্তে। ডাক্তারকে বললো, বাচ্চাকে হসপিটালে ভর্তি  করাবো তবে একটু হেল্প করতে হবে।

 ডাক্তার বললো, কি ধরনের হেল্প? 

- একটা কিডনি বিক্রি করবো।

- এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে?

- বাচ্চার জীবন বাচাতে চাই।

- কিডনি দিতে পারেন। নো প্রবেøম। ব্যবস্থা করে দিবো।

আফরিনের মুখে স্বস্থির হাসি। ডাক্তার আফরিনকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো- যা আগে করেনি। ডাক্তার বললো, আপনাকে কিডনি বিক্রির ব্যাপারে হেল্প করবো। আপনার বাচ্চাকে ভর্তি  করান। তবে কিডনির পরিবর্তে  নতুন অফার শেয়ার করতে চাই আপনার সাথে।

আফরিন বললো, ওকে।

ডাক্তারের অফার শুনে আফরিন বিস্মিত হয়নি। তবে অফারটা ভয়ংকর মানবিক। সিদ্ধান্ত কাল জানাতে হবে। বাচ্চা হসপিটালে ভর্তি হলো। কিডনি বেচতে হবে নইলে ডাক্তারের অফার মানতে হবে। অসুস্থ বাচ্চার বেডে বসে আফরিন ভাবছে বাচ্চার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। আফরিন ভাবছে মানুষের জীবন, মানবিকতা, চাওয়া-পাওয়া এসব। সে যেনো দার্শনিক হয়ে গেলো। অথচ এমন হওয়ার লক্ষণ তার জীবনে ছিলো না। সারারাত  ঘুমাতে পরলো না সে।

 পরদিন ডাক্তার নিজে যেচে আফরিনের সাথে কথা বলতে এলো। বললো, সিদ্ধান্ত আপনার। শুধু আমার বন্ধুর সাথে একটু কথা বলুন। প্রয়োজনে ওর স্ত্রীর সাথেও কথা বলতে পারেন।

আফরিন এবার আরো বিস্মিত । এব্যাপারে স্ত্রীর সম্মতি আছে! হায়রে দুনিয়া!

 দুপুরের পরপর একজন মহিলা আফরিনের বাচ্চার জন্য অনেক গিফট নিয়ে আসলো সাথে ডাক্তার।

   আফরিন এবং মহিলা- দু’জনে একটা রেস্টুরেন্টে আলাপ করছে। আফরিন বুঝতে পারছে না কি করবে। কঠিন পরিস্থিতি, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। অবশেষে আফরিন রাজি হলো। সঙ্গে সঙ্গে সে একটা বাড়ির মালিক হয়ে গেলো।

বাচ্চা সুস্থ। বাচ্চাকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠলো আফরিন। কিছুদিনের মধ্যে সে গর্ভবতী হলো। মহিলাটার প্রক্সি হিসেবে শুধু একটা সন্তান জন্ম দিবে সে। এক বছরের জন্য তার গর্ভ ভাড়া। একটা সুন্দর ভবিষ্যতের বিনিময়ে একটা বর্তমানকে সুন্দরের নিশ্চয়তা প্রদান।