পর্ব ১: টাকার নিচে ভালোবাসা চাপা
রফিক মিয়া ছিলেন গ্রামের একজন ধনী ব্যবসায়ী। দুইটা দোকান, এক বিঘা জমি, আর ব্যাঙ্কে মোটা অঙ্কের টাকা—সবই ছিল তার। কিন্তু একটা জিনিস ছিল না—সন্তানের হাসির গুরুত্ব।
তার একমাত্র ছেলে সাব্বির প্রতিদিন বলত,
“আব্বু, একটু খেলো আমার সাথে। গল্প শোনাও।”
কিন্তু রফিক মিয়া বলতেন,
“সময় নাই, টাকার পেছনে দৌড়াতে হয়। এই খেলাধুলা করে টাকা আসে?”
ছেলের মন ভেঙে যেত। মা না থাকায় বাবাই ছিল তার পৃথিবী। কিন্তু সেই পৃথিবী কেবল টাকা আর হিসাবের খাতা নিয়ে ব্যস্ত।
পর্ব ২: ছেলের চোখে অশ্রু
সাব্বির দিনে দিনে চুপচাপ হয়ে যেতে লাগল। স্কুলে ভালো করত, কিন্তু কারও সাথে মিশত না।
একদিন স্কুলে শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে?”
সবাই বলল মা, বাবা, দাদা...
সাব্বির বলল,
“আমার বাবা টাকার মতো... কাছেই থাকেন, কিন্তু ছুঁতে পারি না।”
শিক্ষকের চোখে জল এলো। তিনি বিষয়টা বুঝলেন।
সেদিন রফিক মিয়াকে ডেকে শিক্ষক বললেন,
“আপনার ছেলের হাসি হারিয়ে যাচ্ছে। টাকা দিয়ে সব কেনা যায় না, আবেগ কেনা যায় না।”
পর্ব ৩: মোড় ঘোরা মুহূর্ত
একদিন রফিক মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দোকান বন্ধ, আয় বন্ধ। তখন দেখলেন—চাকর-বাকর, আত্মীয়-স্বজন কেউ পাশে নেই। শুধু তার ছেলে সাব্বির প্রতি রাতে ওষুধ খাইয়ে দেয়, পা টিপে দেয়, পাশে বসে বলে,
“আমি আছি, আব্বু।”
রফিক মিয়ার চোখে জল এলো। এতদিন তিনি যা বোঝেননি, এখন স্পষ্ট দেখলেন—সন্তানের ভালোবাসার মতো বড় ধন আর নেই।
তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হলেন। সুস্থ হয়েই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
“মাফ করে দে বাবা। তোকে বুঝতে দেরি হয়ে গেছে।”
পর্ব ৪: নতুন বাবা, নতুন জীবন
সেই থেকে রফিক মিয়ার জীবন বদলে গেল। দোকান খুলতেন সকাল বেলা, কিন্তু দুপুরে ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতেন। সন্ধ্যায় দুজনে বসে গল্প করতেন, আর মাঝে মাঝে বলতেন,
“আজ টাকাটা নয়, ছেলের হেসে ওঠাটাই সবচেয়ে লাভ।”
গ্রামবাসী বলত,
“এই সেই লোভী রফিক? এখন তো দেখছি আদর্শ বাবা!”
সাব্বিরের মুখে তখন সারাক্ষণ হাসি।
রফিক মিয়া বুঝেছিলেন, শুধু টাকা নয়, ভালোবাসাই আসল সম্পদ।
শেষ কথা ও শিক্ষা:
লোভ যতই থাকুক, একদিন জীবন চোখে আঙুল দিয়ে শেখায়—সবচেয়ে বড় ধন সন্তানের ভালোবাসা।