Posts

গল্প

মা কেন চাকর?" সকল পার্ট

June 8, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

65
View

পার্ট ১: ছেলেটার স্বপ্ন

আলিফ ছোটবেলায় খুব দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছে। বাবাকে হারিয়েছিল সে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। তারপর থেকে মা – আম্বিয়া খাতুন – একাই তাকে বড় করেছেন। দিনমজুরি, বাসাবাড়িতে কাজ, কখনো ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজে রাত জেগে রুটি বানানো—মা কোনো কাজই ছোট মনে করেননি। একটাই স্বপ্ন ছিল তার—আলিফকে মানুষ বানাতে হবে, অফিসে বসে টাই পরে কাজ করতে হবে।

আলিফের মুখে হাসি দেখার জন্য মা নিজের মুখে অর্ধেক চাল খেয়ে বাকি অর্ধেক ছেলের জন্য রেখে দিতেন। কখনো জুতো ছিঁড়ে গেলেও ছেলের জন্য নতুনটা কিনে, নিজে হাঁটতেন খালি পায়ে।

পার্ট ২: বিসিএস অফিসার

আলিফ বড় হয়ে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে। সে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়। গর্বে গ্রামের মাটিও যেন খুশিতে কাঁপে। মাকে শহরে নিয়ে যায়। সে চায়, মা আর কাজ করবেন না। কিন্তু মায়ের মন পড়ে থাকে গ্রামের মানুষের দুঃখ-কষ্টে।

নতুন শহরে গিয়ে আলিফের জীবন বদলে যায়। বড় পদ, বড় অফিস, বড় কথা। একসময় নিজের স্ত্রী আর বন্ধুদের কাছে মা যেন লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়—একজন অশিক্ষিত গ্রামীণ মহিলা, যার মুখে আঞ্চলিক ভাষা, হাতে শাড়ির খুঁট।

পার্ট ৩: লজ্জার মুখোমুখি

একদিন অফিসে পার্টি হয়, আলিফের বন্ধুরা আসে। মা খুব আনন্দ করে ছেলের পছন্দের পায়েস রান্না করেন। এক বন্ধু মজা করে বলে,
“ভাই, আপনার মা তো একদম গ্রামের কাজের মেয়ের মতো দেখাচ্ছে!”

সবাই হেসে ওঠে। আলিফ কিছু বলে না। চোখ নামিয়ে ফেলে। পরদিন থেকে সে মাকে বাইরে বের হতে নিষেধ করে।

মা বোঝেন, ছেলের সফলতা তার চোখে লজ্জা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দুঃখে রাতের খাবার খান না, নীরবে কাঁদেন। কিন্তু ছেলের সামনে কখনো চোখের পানি ফেলেন না।

পার্ট ৪: মায়ের চুরি

একদিন আলিফ দেখে, মা বাইরে কোথাও যাচ্ছেন ভোরবেলা। সে অনুসরণ করে দেখে, মা একজন ধনী বাড়িতে বাসন মাজছেন।

চোখে পানি নিয়ে আলিফ জিজ্ঞেস করে,
“মা! তুমি চাকরির কাজ করো? কেন?”

মা মাথা নিচু করে বলে,
“বাবা, তোর বউয়ের মেকআপের দাম দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তোর জন্য নতুন জুতা আনতে চেয়েছিলাম। হাতে টাকা ছিল না। তাই ভাবলাম কিছুদিন কাজ করে টাকা জোগাড় করব। তোকে আবার পুরোনো জামা পরতে হবে—এটা আমার ভালো লাগে না।”

পার্ট ৫: বুকে ছুরির মতো

আলিফের দম বন্ধ হয়ে আসে। চোখে অন্ধকার নেমে আসে। মা তাকে চাকরের মতো কাজ করছেন শুধুমাত্র তার স্বপ্ন পূরণের জন্য!

সে হাঁটু গেঁড়ে মায়ের সামনে বসে পড়ে। মায়ের হাত চেপে ধরে।
“মা, আমি সফল হয়েছি শুধু তোমার কারণেই। তুমি চাকর না, তুমি আমার রাজমাতা। আমি তোকে লজ্জা দিলাম, এটা আমি কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।”

মা কাঁদেন না। শুধু বলেন,
“মা হওয়ার মানে তো ত্যাগ। তোরা মানুষ হলে, আমি তৃপ্ত।”

পার্ট ৬: পরিণতি

সেই দিন থেকেই আলিফ অফিসে মায়ের পরিচয় দেন—“এই আমার মা, আমার সবকিছুর শুরু ও শেষ।”

বন্ধুরা চুপ, স্ত্রীর চোখে শ্রদ্ধা, আর আলিফের হৃদয়ে চিরদিনের ভালোবাসা।

মা আর কোনোদিন কাজ করতে যান না। তিনি এখন ছেলের বাসায় পূর্ণ মর্যাদায় থাকেন, মাথা উঁচু করে।

মায়ের জন্য আলিফ বাড়ির সামনে একটা ফলক লাগান:
“এই বাড়ির প্রতিটা ইটের নিচে আমার মায়ের ঘাম ঝরেছে।”

শেষ বার্তা:

মা কখনো চাকর হয় না। তিনি আলোর মতো, যিনি নিজের সবকিছু পুড়িয়ে ছেলেমেয়ের জীবন আলোকিত করেন।

Comments

    Please login to post comment. Login