একটা ছোট্ট গ্রাম ছিল পদ্মাপারের ধারে। সেই গ্রামে থাকত এক কিশোরী—নাম তার মায়া। মায়া ছিল খুব চঞ্চল আর কৌতূহলী। সবসময় নতুন কিছু শেখার আগ্রহে ভরপুর। তবে গ্রামে মেয়েদের লেখাপড়ার তেমন চল ছিল না। মায়ার পরিবারও গরিব, তাই মেয়েটার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পড়ার পর।
তবুও মায়া থেমে থাকেনি।
প্রতিদিন বিকেলে সে নদীর ধারে গিয়ে বসত, একটা পুরনো বই নিয়ে—যেটা একদিন বাজার থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। বইটার শেষ পৃষ্ঠাগুলো ছেঁড়া, কিছু লেখা অস্পষ্ট। কিন্তু সেই বইটাই ছিল তার পৃথিবী।
একদিন গ্রামের স্কুলের নতুন শিক্ষক, তানভীর স্যার, হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশে এলেন। দেখলেন, একটা মেয়ে মন দিয়ে বই পড়ছে। তার পাশে কলম দিয়ে কিছু লিখেও রাখছে মাটি খুঁড়ে।
স্যার এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কী পড়ছো মা?”
মায়া মাথা নিচু করে বলল, “একটা পুরনো গল্পের বই। কিছুই বুঝি না সবসময়। কিন্তু জানেন স্যার, শেষ পাতাগুলো নাই। আমি নিজেই শেষটা বানিয়ে লিখি প্রতিদিন।”
তানভীর স্যার মুগ্ধ হলেন।
পরেরদিন থেকে স্যার প্রতিদিন মায়ার সঙ্গে বসতেন নদীর ধারে। তাকে গল্প পড়াতেন, বোঝাতেন, কখনও কখনও নিজের গল্প বলতেন। ধীরে ধীরে মায়া তার মধ্যে লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেল।
বছরখানেক পর, একদিন সেই গ্রামের বাজারে একটা ছোট পুস্তিকা বিক্রি হচ্ছিল—নামের উপর লেখা "শেষ পাতার গল্প – মায়ার লেখা"।
গল্পটা ছড়িয়ে পড়ল শুধু গ্রামে নয়, শহরেও। মায়া আজ একজন প্রতিষ্ঠিত লেখিকা।
তানভীর স্যার একদিন বলেছিলেন,
“একটা ছেঁড়া বই যদি কারো জীবনের গল্প হয়ে উঠতে পারে, তবে একটুও অবহেলা কোরো না—শেষ পাতা থেকেও শুরু হতে পারে নতুন অধ্যায়।”