📖 ছায়ার পেছনে
অধ্যায় ১: ঘুম ভাঙা ছায়া
রাত ৩:১৭।
চারদিক নিস্তব্ধ। শুধু দেয়াল ঘেঁষে একটা ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে চলেছে।
শাওন হঠাৎ ঘুম থেকে চমকে উঠল। কপাল ঘামে ভিজে গেছে। নিঃশ্বাস ভারী। বুকের ভেতর যেন কিছু একটা ছটফট করছে—কোনো পুরনো দুঃস্বপ্নের মতো, যা সে ভুলতে চায়, অথচ বারবার ফিরে আসে।
পাশ ফিরে দেখে, মায়া ঘুমোচ্ছে। নিঃশব্দে, নিষ্পাপ মুখে।
কিন্তু…
দরজার ওধার থেকে একটা শব্দ আসছে।
না, কোনো শব্দ নয়, যেন চাপা স্বরে কেউ কাঁদছে। খুব হালকা, অদ্ভুত কাঁদন—যেটা গলার ভেতর চেপে রাখা কান্নার মতো। যেন কেউ মুখে হাত চাপা দিয়ে কাঁদছে।
শাওন উঠে বসল। বুকের মধ্যে হালকা একটা কাঁপুনি। ও বুঝতে পারে এটা কোনো স্বপ্ন না, কারণ ঘরের কোল্ড এয়ারে চামড়া ঠান্ডা হয়ে এসেছে।
সে ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে কানে ঠেকায়। কাঁদার শব্দটা আর নেই। নিঃস্তব্ধতা।
হঠাৎ… ঠক ঠক ঠক!
তিনবার দরজায় হালকা টোকা। সঙ্গে সঙ্গে শাওন পেছনে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।
মায়া ঘুম থেকে উঠে পড়ে, ভয় পাওয়া চোখে তাকিয়ে বলে, “শাওন? কী হয়েছে?”
শাওন কাঁপা কণ্ঠে বলে, “তুমি… তুমি শুনতে পাচ্ছো না কিছু?”
মায়া চোখ কচলে বলে, “কী শুনব?”
“কেউ… দরজার ওপাশে কেউ আছে। কেউ কাঁদছিল। আর এখন দরজায় টোকা দিল,” শাওন বলে।
মায়া উঠে এসে দরজার পাশে দাঁড়ায়। কান পেতে থাকে। কিছুই শুনতে পায় না।
সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে ফেলে।
শাওন বলে, “না! খোলো না এখন!”
কিন্তু দরজাটা ইতিমধ্যেই খুলে গেছে…
দরজার ওপাশে কেউ নেই।
তবে মেঝেতে পড়ে আছে একটা ছোট কাগজ—লাল রঙে লেখা:
“তোমার অতীত এখন তোমার ছায়া হয়ে ফিরে এসেছে।”
⸻
পরের দিন
সকালে শাওন থানায় যায়। সে একজন ক্রাইম প্রোফাইলার, এবং তার অফিসে একটি নতুন ফাইল রাখা হয়েছে।
একটি খুন। শহরের এক নির্জন এলাকায়। খুনের ধরনটা অদ্ভুত—ঘরের দেয়ালে রক্ত দিয়ে আঁকা হয়েছে একটি ছায়া। কোনো মানুষের অবয়ব, কিন্তু মাথা নেই। পাশে লেখা:
“শাওন, এই খেলাটা শুরু হলো আজ।”
শাওন স্তব্ধ। কে এই খুনি? তার নাম জানে? কেন?
সে ফিরে আসে বাড়িতে। মায়া তখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, এক কাপ চা হাতে।
শাওন জিজ্ঞেস করে, “তুমি গতরাতের ব্যাপারে কিছু ভাবছো?”
মায়া ধীরে মাথা নাড়ে। “হয়তো তুমি ঘুম ঘোরে দেখেছো।”
শাওন চুপ করে থাকে। সে জানে, এটা স্বপ্ন ছিল না। বরং শুরু—একটা ভয়াবহ খেলার, যার মূল টার্গেট সে নিজেই।
⸻
🔍 ক্লিফহ্যাঙ্গার:
সেদিন রাতেই, শাওন তার ল্যাপটপে বসে খুনের রিপোর্ট যাচাই করছিল। হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় ফাইলের এক ছবিতে।
একটা সিসিটিভি ফুটেজ—খুনের আগের রাতের।
ক্যামেরার কোণে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর অবয়ব… ঘোমটা টানা মুখ, কিন্তু চোখ জ্বলজ্বল করছে।
শাওন চোখ কুঁচকে দেখে। সেই চোখ… এত পরিচিত কেন?
তার বুক কেঁপে ওঠে।
এই চোখ ঠিক মায়ার-র মতো… কিন্তু সেটা অসম্ভব,
📖 ছায়ার পেছনে
🕯️
অতীতের জানালায়
ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১১টা ৪৩।
শাওন অফিসে বসে সিসিটিভি ফুটেজের সেই ছবি আবারো দেখছিল। সেই নারী… অন্ধকার কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা, চোখ দুটো যেন বরফের মতো ঠান্ডা।
“এটা মায়া হতে পারে না,” নিজের সঙ্গেই বলল সে।
কিন্তু হৃদয় বলছে অন্য কথা।
📎 অপরাধ বিশ্লেষণ ইউনিট-এ আজ নতুন একটি রিপোর্ট এসেছে। খুনের জায়গায় আবার একটা চিঠি পাওয়া গেছে, এবার হাতের লেখা একটু নড়বড়ে। চিঠিতে লেখা:
“অন্ধকারে ফিরে তাকাও না শাওন… যাদের তুমি ফেলে এসেছো, তারা এখন ছায়া হয়ে হাঁটে।”
শাওন থমকে গেল। এ তো তার এক পুরনো স্বপ্নের লাইন! একসময় সে কবিতা লিখত, আর এ লাইনটা সে ২০০৮ সালে একটা ডায়েরিতে লিখেছিল।
“কিন্তু সেটা তো কেউ জানে না… শুধু আমি আর—”
তার মুখ শুকিয়ে গেল।
একটি নাম তার মনে পড়ে গেল —
“রাকা।”
⌛ ফিরে দেখা – ২০০৮
রাকা ছিল শাওনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী। দুঃসাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত, আর একটু বেশি অভিমানী। শাওনের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো নাম না পাওয়া ভালোবাসা, কখনো ক্ষণস্থায়ী বিদ্বেষ।
একবার ঝগড়ার পর রাকা হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিল। তখন শোনা গিয়েছিল আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি।
শাওন অনেকদিন ডিপ্রেশনে ছিল, মায়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় অনেক পরে, ধীরে ধীরে।
কিন্তু আজ…
তাঁর সামনে সেই একই লাইন ফিরে এসেছে।
যা সে শুধু রাকাকে বলেছিল।
🕵️ তদন্ত
রাতে শাওন ফোন করল তার পুরনো বন্ধু সজল-কে, যে এখন থানার স্পেশাল ব্রাঞ্চে কাজ করে।
“তুই আমাকে একটা নাম খুঁজে দিতে পারবি? রাকা মির্জা।”
সজল বল্লো একটু অপেক্ষা কর,,আমি দেখে জানাচ্ছি
সজল বলে, “রেকর্ডে মৃত দেখাচ্ছে। তবে গত ছয় মাসে এই নামে একটা ফোন নম্বর নতুন করে একটিভ হয়েছে—ঘাটপাড় এলাকায়।”
শাওনের বুকটা ধক করে উঠল।
🏚️সেখানে রাকাদের পুরনো বাড়ি,,,
সেই রাতে, মায়া যখন ঘুমিয়ে, শাওন চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল।
🌁 ঘাটপাড়ের গলি
বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা নেই। শুধু কোটের কলার তুলে নিল শাওন।
নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছেই তার মনে হলো, কেউ তাকে অনুসরণ করছে। কিন্তু পিছনে তাকিয়ে কিছুই দেখা গেল না।
গলি খুব সরু। পেছনের লাইটগুলো একে একে নিভে যাচ্ছে।
শাওন দরজায় ধাক্কা দিল। দরজা একটু ফাঁকা হয়ে খুলে গেল।
ভেতরটা অন্ধকার।
সে একটা টর্চ জ্বালালো, আর ঠিক তখনই…
একটা ছায়া তার সামনে দিয়ে সাঁ করে চলে গেল।
টর্চের আলোয় দেখা গেল, দেয়ালে ঝুলছে একটি পোর্ট্রেট—একটা মেয়ের।
সেই মুখ… রাকা!
কিন্তু নিচে লেখা:
“আমার নাম এখন আর রাকা নয়। এখন আমি শুধু ছায়া।”
😨 ক্লিফহ্যাঙ্গার
শাওন পেছনে ঘুরতেই দেখে, দরজাটা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে গেছে।
হঠাৎ ঘরে একটা রেডিও চালু হয়, নিজে থেকেই। কণ্ঠটা যেন নারীর, কিন্তু মেকানিক্যালভাবে বিকৃত:
“তুমি যাকে ভুলে গেছো, সে তোমায় কখনো ভুলে যায়নি… শাওন।”
ঘরের বাতি জ্বলে ওঠে। দেয়ালের প্রতিটি কোনায় লেখা:
“মায়া কে?”
শাওনের শরীর বরফ হয়ে যায়।
২য় পর্ব আসছে,,,,,,,