রাত তখন প্রায় ২টা। গ্রামে একটা নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। শুধু মাঝে মাঝে কুকুরের হালকা ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমনই এক রাতে, তরুণী রেশমা তার চাচাতো বোন তনুকে নিয়ে গ্রামে এসেছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে একটু শান্তি খুঁজতে। কিন্তু গ্রামের লোকেরা তাদের আসার দিন থেকেই একটা অদ্ভুত সতর্কবার্তা দিচ্ছিল —
“সন্ধ্যার পর বাড়ির পেছনের শ্মশানের দিকে তাকাস না।”
রেশমা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তনু একটু ভীত হয়েছিল।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বাড়ির পেছনের গাছগুলো যেন অস্বাভাবিকভাবে দুলতে লাগল। বাতাস নেই, তবু পাতাগুলো শিরশির করে কাঁপছে। তনু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখে ফেলল — একজন সাদা শাড়ি পরা নারী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। মাথা নিচু, চুল ছড়িয়ে আছে, আর তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।
"রেশমা! দেখো ওখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!" — তনু কাঁপা গলায় বলল।
রেশমা জানালার কাছে এসে তাকাল, কিন্তু তখন আর কাউকে দেখা গেল না। সে বলল, "তুমি ঘুমাও তনু, এসব তোমার কল্পনা।"
কিন্তু সেই রাতে, রেশমার ঘুম এল না। সে অনুভব করল, কেউ যেন তার ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল। সে চোখ মেলে দেখল — সেই একই নারী, যার চোখ নেই, শুধু দুটি ফাঁকা, কালো গহ্বর।
নারীটি ফিসফিস করে বলল,
“তুমি আমাকে দেখেছো... এখন তুমি আমার সঙ্গী...”
রেশমা চিৎকার করে উঠতে চাইল, কিন্তু কণ্ঠে শব্দ বের হল না। সে যেন জমে গেল।
পরদিন সকালে, তনু উঠে দেখে — রেশমা নেই। খুঁজে খুঁজে যখন সবাই বাড়ির পেছনের শ্মশানে গেল, তখন দেখল — একটা পুরনো কবরের পাশে রেশমার সাদা ওড়না পড়ে আছে। আর কবরের উপর কেউ যেন নতুন করে মাটি চাপা দিয়েছে।
গ্রামের বয়স্ক এক নারী ফিসফিস করে বললেন,
“এই আত্মা একা থাকতে পারে না... প্রতি দশ বছরে একবার নতুন সঙ্গী নেয়... এবার সে রেশমাকে বেছে নিয়েছে।”