⸻
📖 ছায়ার পেছনে
🕯️ অধ্যায় ২ : আড়ালের সত্য
রাত ১টা ১৭ মিনিট।
শাওন এখনও সেই ঘরে আটকে।
ঘরের বাতি আবার নিভে গেছে।
হঠাৎই মেঝেতে কিছু পড়ে গেল—একটা ছোট কাগজের টুকরো। শাওন তা কুড়িয়ে নেয়। আলো জ্বালিয়ে দেখে কাগজে একটা ম্যাপ আঁকা। নিচে লেখা:
“যদি সত্য জানতে চাও, কাল দুপুরে ওল্ড ট্রেন স্টেশন — প্ল্যাটফর্ম ৩।”
শাওন জানে, এটা কোনো ফাঁদ হতে পারে।
কিন্তু সে জানে, যদি কিছু না করে, হয়তো আর কখনও সত্য জানা হবে না।
⸻
🏠 Meanwhile: মায়ার কাছে অচেনা ভয়
মায়া ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘরে শাওন নেই।
মোবাইলে কোনো উত্তর নেই। সে জানে না শাওন কোথায় গেছে, কিন্তু একটা অজানা ভয় যেন ওর বুকের ভিতর ধীরে ধীরে চেপে বসছে।
তখন হঠাৎই দরজায় শব্দ।
কোনো কাগজ নেই, শুধু একটা প্যাকেট। খুলে দেখে, তার ভেতরে একটা পুরনো টেপ রেকর্ডার।
মায়া তা চালু করে।
এক নারীকণ্ঠ ভেসে আসে—মেকানিক্যাল, বিকৃত:
“তোমার স্বামীর অতীত, তোমার বর্তমানকে খেয়ে ফেলবে মায়া। সে সত্যি বলে না… সে শুধু দেখে ছায়া।”
মায়ার চোখ ভয়ে বড় হয়ে গেল।
⸻
🚉 ট্রেন স্টেশনে
পরের দিন দুপুরে শাওন প্ল্যাটফর্ম ৩-তে পৌঁছালো।
জায়গাটা অনেক পুরনো, আর এখন প্রায় পরিত্যক্ত।
দূরে একটা ছায়ামত মানুষ দাঁড়িয়ে। মুখ দেখা যায় না, শুধু একটা কালো চাদর গায়ে।
“তুমি কে?” শাওন চিৎকার করল।
কোনো উত্তর নেই।
শাওন এগিয়ে গেল।
অবশেষে সেই ছায়া কথা বলল:
“রাকা মরে যায়নি। রাকা এখন এমন কিছু জানে, যা অনেকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।”
“তুমি রাকা?” — শাওনের গলা কেঁপে গেল।
না। সেই ব্যক্তি বলে, “আমি রাকার ভাই — রাহুল। ওকে খুঁজতে গেলে তুমি ও মায়া—দুজনেই শেষ হয়ে যাবে।”
“কিন্তু কেন? রাকা কোথায়?”
রাহুল আরেকটা কাগজ বাড়িয়ে দিল।
তাতে লেখা:
“তোমার চারপাশে যাকে তুমি বিশ্বাস করো, সে-ই সবচেয়ে বেশি মিথ্যে লুকিয়ে রেখেছে।”
⸻
🕸️ বিশ্বাসের ভাঙন (ভয়াবহ ও রহস্যময় রূপে)
শাওন দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই এক অদ্ভুত নীরবতা তাকে গ্রাস করল।
মায়া চুপচাপ সোফায় বসে। মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই — শুধু ঠান্ডা চোখে শাওনের দিকে তাকিয়ে।
“আমি সব বলব তোমাকে, মায়া… আমি আজ রাতেই…” — শাওনের কণ্ঠটা ফেটে যাচ্ছিল।
কিন্তু মায়া তাকে থামিয়ে দিয়ে ধীরে বলে ওঠে,
“তুমি কি সত্যিই মনে করো, তুমি যা দেখেছো, তা বাস্তব?”
শাওন থেমে যায়।
তার মনের ভিতর দুলতে থাকে আশঙ্কার ঢেউ।
মায়া এবার পকেট থেকে ফোন বের করে তার সামনে ধরল।
“তাহলে এবার এটা দেখো।”
স্ক্রিনে প্লে বাটন চাপতেই ভিডিওটি শুরু হলো।
অন্ধকার এক গলির কোণায় শাওন দাঁড়িয়ে, কারো সঙ্গে তর্ক করছে… কখনো হেসে উঠছে, কখনো রাগে কাঁপছে। তার দৃষ্টিতে যেন অদৃশ্য কোনো ছায়া।
কিন্তু ক্যামেরার চোখে চারপাশ সম্পূর্ণ খালি।
সেখানে কেউ নেই।
শাওন শুধু… নিজের ছায়ার সঙ্গে কথা বলছে।
ভিডিওতে তার চোখের দৃষ্টি একবারও ক্যামেরার দিকে যায়নি। সে যেন কারো সঙ্গে এমনভাবে মগ্ন, যেন সেই অদৃশ্য অস্তিত্বই তার সত্যি।
আর তখনই ভিডিওর শেষে একটা বিকৃত শব্দ ওঠে —
ভিডিওর মধ্যে নয়,
শাওনের পেছনের ঘরের ভিতর থেকে।
একটা গলা — নারী কণ্ঠ, কিন্তু বিকৃত, তীক্ষ্ণ:
“তুমি ওকে বলেছো সব? নাকি শুধু সেইটুকু, যা আমি দেখাতে চেয়েছিলাম…?”
মায়া এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।
শাওনের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
পেছনে তাকাল সে।
ঘরের কোণার অন্ধকার যেন একটু গাঢ়… একটু ভারী…
আর সেখানে কিছু যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে
⸻
🧠 সত্যি নাকি বিভ্রম?
মায়া জোরে বলে উঠল, “তুমি কি hallucinate করছো? তুমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছো, শাওন?”
শাওন থরথর করে উঠে দাঁড়ালো।
তার মাথায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সে জানে সে যা দেখেছে, তা সত্যি।
কিন্তু মায়ার ভিডিও বলছে — সবই ছিল তার কল্পনা।
তখনই…
ঘরের জানালার বাইরে আবার সেই ছায়া দেখা গেল —
চাদর পরা এক নারীমূর্তি… ঠায় দাঁড়িয়ে।
,,,,,,,,,,,,
⸻
🕯 ডায়েরির ছেঁড়া পৃষ্ঠা
পেছনে তাকাল শাওন।
ঘরের কোণায় কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু বাতাসটা ভারী, গা-ছমছমে।
মায়া ধীরে ধীরে পেছনে সরে গেল, যেন কিছু অদৃশ্য কিছুর উপস্থিতি ওকেও টের পাইয়ে দিচ্ছে।
তখনই হঠাৎ…
“ঠাস!”
আলমারির উপরের তাক থেকে একটা পুরনো খাতা আচমকা মেঝেতে পড়ে গেল।
শাওন এগিয়ে গিয়ে খাতাটা তুলল।
ডায়েরি।
মায়া বলল, “এটা তো আমার না।”
শাওনের চোখ বড় হয়ে গেল।
ডায়েরির গায়ে নাম লেখা: রাকা মির্জা।
⸻
📓 ডায়েরির পাতা
শাওন ডায়েরি খুলে পড়া শুরু করল।
প্রথম পৃষ্ঠাগুলোতে রাকার ব্যক্তিগত দিনলিপি, সম্পর্কের হতাশা, ভাঙা স্বপ্ন — আর সেসবের ফাঁকে কিছু অদ্ভুত লাইন:
“আমি জানি, সে আমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু আমি তাকে ছাড়ব না।”
“সে মায়ার সঙ্গে সুখে থাকবে না। আমি তাদের পাশে থাকব… ছায়া হয়ে।”
“আজ আমি শেষবারের মতো তাকে দেখেছি… কাল আমি হারিয়ে যাবো… কিন্তু হারাবো না।”
শাওনের গলা শুকিয়ে গেল।
মায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে। তার চোখে ভয়… কিন্তু একটা অদ্ভুত শান্তিও।
“তুমি তো বলেছিলে রাকা আত্মহত্যা করেছিল,” মায়া বলল।
শাওন ফিসফিস করে জবাব দিল, “সেই কথাটাও কেউ প্রমাণ করতে পারেনি… শুধু একটা চিঠি ছিল… ঠিক এই হাতের লেখার মতো।”
⸻
🧠 মানসিক বিভ্রান্তি নাকি অলৌকিকতা?
শাওনের মাথার ভিতর একসঙ্গে বাজতে শুরু করল হাজার শব্দ।
সে কি ভুল দেখছে? নাকি সত্যি রাকা ফিরে এসেছে?
তখনই ডায়েরির ভিতর থেকে একটা ছেঁড়া পৃষ্ঠা পড়ে গেল।
সেখানে কাঁচা হাতে আঁকা একটা ছবি —
একটা বাড়ি… গেটের পাশে একটা পুরনো গাছ… আর নিচে লেখা:
“এখানেই শেষ হবে ওদের গল্প। কিন্তু আমার শুরু এখান থেকেই।”
শাওন আঁচ করতে পারল, ছবিটা রাকার পুরনো বাড়ির — সেই ঘাটপাড় যেটা শহরের বাইরের দিকে, এখন পরিত্যক্ত।
সে সিদ্ধান্ত নিল —
আবার যেতে হবে সেখানে। সত্য জানতেই হবে।
⸻
🌑 অন্ধকারের পথে যাত্রা
রাত ১২টা ৪৫।
শাওন ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
মায়া কিছু না বলেই শুধু তাকিয়ে থাকল — ওর চোখে যেন অজানা আশঙ্কা।
রাস্তাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার।
চাঁদের আলো আজ নেই।
গাড়ি থামল একটা সরু গলির মুখে।
একটা পুরনো বাড়ি — জানালার কাঁচ ভাঙা, গেটে জং ধরা, কিন্তু ঠিক ছবির মতো।
শাওন ধীরে ধীরে বাড়ির দরজায় পা রাখল।
হঠাৎ, পেছনে থেকে একটা ফিসফিস কণ্ঠ —
“তুমি অবশেষে এসেছো…”
শাওন পেছনে তাকায়।
কেউ নেই।
কিন্তু দরজাটা নিজে থেকেই খুলে গেল।
⸻
🎭 ক্লিফহ্যাঙ্গার: মুখোশহীন ছায়া
বাড়ির ভেতরে ঢুকে শাওন যা দেখে, তাতে তার গলা শুকিয়ে যায়।
দেয়ালে লটকে থাকা শত শত ছবি —
তার নিজের ছবি…
মায়ার ছবি…
তাদের হাসির মুহূর্ত… কান্নার মুহূর্ত… এমনকি এমন কিছু সময়, যা তারা নিজেদেরও ভুলে গিয়েছিল।
প্রতিটি ছবির নিচে লেখা:
“তোমরা ভেবেছিলে আমি নেই।
তোমরা ভুল করেছো।
তোমরা চাইলেও আমি যাবো না।”
একটা টেবিলের উপর মুখোশ পড়ে ছিল — রক্তে ভেজা।
শাওনের শরীর কাঁপতে থাকে।
তখনই পেছন থেকে দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
আবার সেই কণ্ঠ —
কখনও নারীর, কখনও বিকৃত পুরুষের মতো:
**“তোমার ছায়া এখন আর তোমার পেছনে নেই…
সে এখন সামনে দাঁড়িয়ে আছে…”**