Posts

গল্প

পোকার গান

May 24, 2024

সানজিদা সিদ্দিকা

Original Author সানজিদা সিদ্দিকা

228
View
লেবু রং আলো নিয়ে জোনাকি উড়ে এসে গায়ে বসেছে, আলো জ্বালিয়ে আমাকে দেখে আবার উড়ে যাচ্ছে। আজ অন্ধকার যেন একটু বেশি-ই কালো। এমন অন্ধকারে ঝোপের মাঝে শুয়ে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। মানুষের পৃথিবীতে ঘুম এলে জেগে উঠে পৃথিবীর প্রাণ ও প্রাণিজগত। উহু! শুড়শুড়ি লাগছে রে বাবা, একটু আস্তে! নাভির কুয়া হতে একটি কিড়ে পোকা  বহুপদী পা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বুকের উপরের দিকে আসছে। থামো! থামো! প্লিজ, মুখের দিকে এসো না। কিড়ে পোকাটি কথাটি শুনতে পেলো কিনা বুঝলাম না। তবে তার গতিপথ বদলে বুকের বাঁ পাশ বেয়ে ধীরে নেমে গেলো।আজ এখানে বিশাল আয়োজন। কত সব নাম না জানা পোকা একে একে আসছে। ওরা কি তাহলে জেনে গেছে আসল বিষয়। ওদের একটা ভালো দিক হলো নিজেদের মধ্যে আমাকে নিয়ে কোনো কথা বলছে না।  যে-ই আসছে, খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এরপর নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে চলে যাচ্ছে।আমার স্বগোত্রীয়রা যতো দেরীতে জানবে ততোই ভালো। আরো কিছুক্ষণ থাকা যাবে এ আলো আঁধারের মায়াজগতে। আজ সূর্যোদয় দেখা যাবে অন্যরকম আবেশে।আকাশের তারাগুলো আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার দৃষ্টিতে বিষণ্নতা। হয়তো তারাদের সবসময় এভাবে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ জ্বালা করছে। 
এই যে, তারা মহোদয়গন আপনারা চোখে একটু মদের ঝাপটা দিতে পারেন। চাইলে খেতেও পারেন। ভয় নেই খসে পড়বেন না। মাতাল হলে কেউ খসে পরে না। নিঃস্ব হলেই খসে পরে। এ কথা আপনাদের চেয়ে কারো ভালো জানার কথা নয়। এই তো, নিন আমার পাশেই রয়েছে বোতলটি। আহ! দুঃখিত, এক ফোটাও নেই বোতলে। বোতলটিও ভেঙে গেছে মদিরতাকে ভেঙে।
তারাদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে,আঁধারের মায়বী পর্দা সরিয়ে ভোর এলো। খেয়ালই করিনি। যদিও বলেছিলাম আজ অন্যরকম ভোর দেখবো। আসলে জীবনে যে জিনিস যত বেশী খেয়াল দিয়ে উপভোগ ও অনুভব করতে চেয়েছি সেটাই তখন হারিয়ে গেছে অন্য অনুভবের মাত্রায়।ভোর হতেই পাখিরা এসে গান গাইছে। প্রথমে যে কাকটি এলো। কাকটি দুপায়ে কপালে নৃত্য করে ফিরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর আরো কাক এনে হাজির। শরীরে এখন পিঁপড়াদের দলগত কুচকাওয়াজ। কাকগুলো একবার পিঁপড়াদের ঠোকরাচ্ছে আবার আমাকে ঠোকরাচ্ছে। উফ! কাকের ঠোঁট ভীষন ধারালো। মাছিরা ভন ভন করে চোখে, মুখে বসছে। এমনকি নাকের ফুটোতেও উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকারে উঁকি দেয়ার শখ তাহলে সবারই আছে। আজ এখানে ভোজের আয়োজন হবে। দিনের আলোর সব পোকারাই আসতে শুরু করেছে। 
অবেশেষে পোকাদের সম্মলিত গানই ডেকে আনলো প্রথম মানুষটিকে। লোকটি আমাকে দেখেই চিৎকার। তার চিৎকারে পোকারা স্তব্ধ হয়ে গেলো মুহূর্তের জন্য। ছিটকে পড়লো এদিক সেদিক। লোকটি দৌড়ে লোকালয়ে যেতেই পোকারা আবার একত্রিত হলো। গুঞ্জনের মাত্রা বেড়ে গেলো। এভাবেই কাটলো কিছুক্ষণ। এরপর দ্রুতগতিতে দূর-দূরান্ত হতে দুই পায়ে কিলবিল কিলবিল করে এসে ঘিরে ধরলো নানা রকম ছোটো বড়ো  মানুষ।
মুখে তাদের আহাজারি, প্রশংসা, কুৎসা, ভর্ৎসনা, উহু, আহা, ইশ...
এখন হিমাঘরে অপেক্ষায়। নিঃস্তব্দ শীতল। কোথাও কোনো মানুষ নেই... নেই কোনো পোকার গান।

Comments

    Please login to post comment. Login