Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৫১)

June 11, 2025

Boros Marika

62
View

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,
"কাল রাতে… কী হয়েছিল, হেনা?"

হেনা চোখ নিচু করে নিল। গলার স্বরটা নরম হয়ে এল।
সে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। চারপাশের স্তব্ধতা ভেঙে আবার আরিয়ান বলল,
"চুপ কেন? আমি উত্তর চাই।"

তখন হেনা আস্তে বলল,
"তুমি অনেক ভালো সাহেব… সেই জন্যই তো তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি আলাদা… তোমার চোখে লোভ নেই, ছিল না… আমি বুঝেছি।"

আরিয়ান ধৈর্য হারিয়ে বলল,
"আগে উত্তর দাও, হেনা। সত্যি বলতে শেখো।"

হেনা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
"কাল রাতে… জীবনে প্রথম… মনে হলো আমি সত্যিই একজন মানুষের পাশে ছিলাম। কোনো ভয় ছিল না… কোনো অস্বস্তি না।"

তার চোখ ভিজে উঠলো, গলাটা কেঁপে উঠল।
"তুমি ছিলে সেই প্রথম পুরুষ… যার পাশে একটা মেয়ে হেসে ঘুমাতে পারে সাহেব…  সেটা মনে হয়… মন থেকে আসে।"

আরিয়ান আর কিছু বলল না। সে অনুভব করল, এই মেয়েটির ভিতর এক গভীর যুদ্ধ চলছে—নিজের আত্মমর্যাদা, অনুভব আর ভাঙা অতীতের মাঝখানে আটকে থাকা এক নীরব আর্তনাদ।
 

আরিয়ান খানিকক্ষণ চুপ থেকে চোখে চোখ রেখে বলল,
"কাল রাতে… ঠিক কী হয়েছিল, হেনা?"

হেনা মাথা নিচু করে বসে রইল। উত্তর দিচ্ছিল না।
আবার আরিয়ান বলল,
"চুপ কেন? উত্তর দে।"

হেনা ধীরে ধীরে বলল,
"তুমি অনেক ভালো সাহেব… সেই জন্যই তো তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তুমি বাকি সবার মতো না।"

আরিয়ান ধমকের সুরে বলল,
"এই কথাগুলো পরে বল। আগে, আমি জানতে চাই কাল রাতে কী হয়েছিল?"

হেনা চোখ তুলে চাইল, গলার স্বরটা যেন নিঃশ্বাসে মিশে গেল,
 

তারপর একটু থেমে বলল,
"কিন্তু কাল রাতে… জীবনে প্রথমবার, আমি অনুভব করেছি সেই মুহূর্তটা… শুধু একটুখানি শান্তি ছিল, সাহেব।

হেনার কথা শুনে আরিয়ানের চোখ স্থির হয়ে গেল। বুকের ভিতরটা কেমন যেন চেপে ধরল।
হেনা মাথা নিচু করে বলল,
"তুমি বুঝতেই পারছো না, সাহেব… কাল রাতটা আমার কাছে ঠিক কেমন ছিল…"

আরিয়ান আর কিছু বলল না। মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে গেল। নিজের ভেতরেই যেন ধসে পড়ল সে।
তার চোখের দৃষ্টিতে একটা অদ্ভুত অনুশোচনা খেলা করছিল।

তখনই আরিয়ানের বুঝতে আর বাকি রইলো না—গত রাতে সে একটা ভুল করে ফেলেছে। এমন একটা ভুল, যা শুধু হেনার নয়, তার নিজের জীবনকেও বদলে দিতে পারে।

আরিয়ান কিছু বলতে যাবে, এমন সময় হেনা নরম গলায় বলল,
“তুমি ভয় পেও না সাহেব… আমি তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করবো না।
তুমি আমার প্রতি যতটা ভরসা করেছো, আমি সেই বিশ্বাসটুকু নষ্ট করতে চাই না।”

একটু থেমে সে আবার বলল,
“আর যে ছবিগুলো রতন তুলেছে, সেগুলো কোথায় রাখে আমি জানি।
আমি সব মুছে ফেলব। চিন্তা কোরো না, আমি তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেব না।”

আরিয়ান অবাক হয়ে হেনার দিকে তাকিয়ে রইল—এই মেয়ে কীভাবে এতটা সাহস দেখাতে পারল, এতটা ভালোবাসা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে পারল এমন এক জায়গায় থেকেও?

হেনা আস্তে আস্তে বলল, “শোনো... রাত হয়ে আসছে। আর কিছুক্ষণ পরেই রতন আসবে। তখন আর কোনো উপায় থাকবে না…”

এই বলে সে ধীরে ধীরে ঘষে ঘষে এগিয়ে এলো আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান এক মুহূর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে গেল।

হেনা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“সাহেব... ভয় পেও না, কিন্তু আমার বুকের ভেতর, ঠিক বাঁ দিকের পাঁজরের নিচে একটা চাকু লুকানো আছে।
তুমি... তুমি কিছু মনে না করে ওটা বের করে দাও।
এই চাকুটাই আমাদের মুক্তির পথ হতে পারে।”

আরিয়ান থমকে গেল। কণ্ঠ ভার হয়ে এল তার,
“না… আমি পারবো না। আমি কোনোভাবেই তোমার শরীরে হাত দিতে পারি না এইভাবে…”

হেনা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার চোখে, যেন বলছে—এটাই এখন বাঁচার একমাত্র রাস্তা।

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login