ঢাকার এক পুরনো অংশে, পুরান ঢাকা এলাকায়, একটি তিনতলা ভবন—নাম "রহিম ম্যানশন"। একসময় জমজমাট ছিল, কিন্তু আজ তা অনেকটাই পরিত্যক্ত। লোকমুখে শোনা যায়, ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে "অলৌকিক কিছু" বাস করে।
নতুন ভাড়াটিয়া
২০২৪ সালের জুন মাসে, একজন তরুণ ফ্রিল্যান্সার, রাফি, কম দামে থাকার জায়গা খুঁজছিল। একজন দালালের মাধ্যমে সে রহিম ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার একটি ঘর ভাড়া নেয়। ভবনের বাকি ফ্ল্যাট প্রায় ফাঁকা, কেবল নিচতলায় এক বৃদ্ধ দম্পতি থাকে, যারা সবসময় তাকে একটাই কথা বলে:
“তৃতীয় তলায় যেও না। বিশেষ করে রাত বারোটার পর।”
রাফি অবাক হয়, কিন্তু গল্পগুলোকে গুজব ভেবেই উড়িয়ে দেয়।
রাতের কান্না
রাফি প্রথম সপ্তাহে শান্তিতে থাকতে থাকে। তবে এক রাতে, হঠাৎ ঘুমের মধ্যে তার কানে আসে কারো কান্নার আওয়াজ। এক নারীর করুণ কান্না, খুব কাছ থেকেই যেন আসছে। সে উঠে দেখে — কিছুই নেই। দরজা বন্ধ, জানালা বন্ধ, নিচে নেমে দেখে, কেউই শব্দ শুনেনি।
পরদিন সে বৃদ্ধার কাছে যায়। বৃদ্ধা কাঁপা কণ্ঠে বলে:
"ও ঘরটা একসময় এক মেয়ের ছিল — নাম ছিল শাফা। সে আত্মহত্যা করেছিল ঠিক এই ভবনে, তৃতীয় তলায়, একা, এক রাত বারোটার পর। তার আত্মা আজও ঘুরে বেড়ায়।"
রাফি বিশ্বাস করে না। কিন্তু তার কৌতূহল বাড়তে থাকে।
তৃতীয় তলার দরজা
এক রাতে, সে সিদ্ধান্ত নেয়, সত্যিটা দেখে আসবে। বারোটার একটু পরেই সে চুপিচুপি সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় তৃতীয় তলায়। করিডোর একদম নিঃশব্দ। বাতি জ্বলে না। কেবল শেষের ঘরের দরজাটা আধা খোলা।
সে দরজার সামনে যায়। ঘরে প্রবেশ করে।
ঘরের ভেতরে হঠাৎ বাতি জ্বলে ওঠে। দেয়ালের চারপাশে লাল রঙে লেখা:
"আমাকে ফিরিয়ে দাও... আমার জীবন... আমার আলো..."
হঠাৎ করেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বাতি নিভে যায়। আর তখন রাফি শুনতে পায় ঘরের এক কোণ থেকে একটা মেয়ের গলা:
“তুমি এসেছো? এবার তোমাকেও যেতে হবে না...”
তারপর কেবল একটা চিৎকার...
শেষের দিন
পরদিন সকালে, রাফিকে কেউ খুঁজে পায় না। তার ঘর খালি। মোবাইল, ল্যাপটপ, সব কিছু ঠিকঠাক। শুধু তার দরজার নিচে একটি কাগজ পাওয়া যায়, হাতে লেখা:
“আমি শাফার সঙ্গে আছি। তৃতীয় তলা এখন আমার বাড়ি।”
এরপর থেকে রহিম ম্যানশন আবার খালি হয়ে পড়ে। কেউ আর সেখানে থাকে না। পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়েও রাফির হদিস পায়নি। শুধু এক জিনিস স্পষ্ট — তৃতীয় তলার সেই কক্ষ এখনও নিঃশব্দ নয়।