Posts

গল্প

ছায়ার পেছনে পর্ব : ৩

June 12, 2025

শিহাবুজ্জামান শাওন

92
View

📖 ছায়ার পেছনে

🕯️ পর্ব ৩ : ভাঙা আয়নার ভিতর

বাড়ির দরজাটা নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গেল।
বাতাস থেমে গেল।
বাইরের কোনো শব্দ নেই — যেন পুরো দুনিয়াটা এই একটা ঘরের বাইরে হারিয়ে গেছে।

শাওনের হৃদস্পন্দন আস্তে আস্তে বেরে যাচ্ছে।

সে ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে পা রাখল — ধুলোয় ঢাকা কাঠের মেঝে, ফাটল ধরা দেয়াল, আর প্রতিটি কোণা যেন কারও নিঃশ্বাসে ভেজা।

হঠাৎ একটা দরজা আধা খোলা দেখতে পেল।
ভেতরে ঢুকতেই…

🖼️ চিত্রশালার মতো ঘর

ঘরটার দেয়াল জুড়ে ঝোলানো শত শত ছবি।

সবগুলোর বিষয়বস্তু এক —
মায়া।

মায়া শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, কাঁদছে বৃষ্টিতে, হাসছে আকাশের নিচে, শাওনের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটছে…

কিন্তু সব ছবি অদ্ভুত।

মায়ার পেছনে সব সময় একটা ছায়া।

একই ছায়া…
একই আকৃতি…
একইভাবে তাকিয়ে থাকা চোখ।

যেন কেউ একজন ওদের প্রতিটি মুহূর্ত দেখছিল, ওদের ছায়ার মতো ছায়া হয়ে থাকত, কিন্তু তারা কখনো  তা টেরও পায়নি।

শাওন ফিসফিস করে বলে উঠল,
“এই ছবিগুলো কে তুলেছে?”

ঠিক তখনই পাশের দরজাটা খুলে গেল, খট খট শব্দ তুলে।

📚 মুখোমুখি অতীত

ঘরে ঢুকেই দেখা মিলল একটা পুরনো কাঠের টেবিল, তার ওপরে ছড়ানো অসংখ্য চিঠি, রক্তে রঞ্জিত কিছু নোট, আর মাঝখানে একটা বড় আকারের আয়না — ফাটল ধরা।

আয়নার সামনে দাঁড়াতেই শাওন যা দেখল, সেটা তার শিরদাঁড়া বরফ করে দিল।

আয়নায় সে একা না।

তার পেছনে মায়া দাঁড়িয়ে… কিন্তু বাস্তবে কেউ নেই।

আর তার চেয়েও ভয়াবহ —
মায়ার মুখ নেই আয়নায়!

শুধু একটা সাদা ফাঁকা মুখ… আর তার চোখের জায়গায় কালি গড়িয়ে পড়ছে।

শাওন এক লাফে পেছনে তাকাল — কেউ নেই।

আবার আয়নায় তাকালো।

এবার তার নিজের মুখ ফ্যাকাশে, চোখ লাল, আর ঠোঁটে এক বিকৃত হাসি।

সে যেন নিজেকে চিনতে পারল না।

🗝️ অতীতের তালা

আচমকা আয়নার নিচে একটা ছোট বাক্স দেখা গেল।
তাতে ছোট একটা নোট:

**“যদি সাহস থাকে, খুলে ফেলো।

সত্য খুলে দেবে তোমার চেনা মুখগুলোর আসল মুখোশ।”**

শাওন বাক্সটা খুলল।

ভেতরে একটা ভিডিও ক্যামেরার মেমোরি কার্ড।

সাথে একটা ফাঁস লাগানো রিবন — যে রিবনটা রাকা মৃত্যুর সময় পরা ছিল।

🎞️ শেষরাতের ফুটেজ

শাওন তার ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে মেমোরি কার্ড ঢোকাল।

ভিডিওতে রাত ৩টা ১১ মিনিট।

ক্যামেরা ঘরের কোণায় সেট করা।

রাকা বসে আছে বিছানায়। সে কাঁদছে।

তার হাতে একটা চিঠি — সম্ভবত সুইসাইড নোট।

কিন্তু তারপর…

দরজা খুলে এক নারী ঢুকল।

মায়া।

ভিডিওতে স্পষ্ট — রাকা চমকে ওঠে, বলছে:
“তুমি এখানে? কেন?”

মায়া তার দিকে এগিয়ে আসে… চুপচাপ।

তারপর ধীরে ধীরে বলে,
“তুমি খুব বেশি জেনে ফেলেছো। শাওনের পেছনে যা আছে, সেটা কারো জানার কথা না।”

এরপর ভিডিও থেমে যায়।

🎭 মুখোশ খুলছে?

শাওন বাকিটা দেখতে পারেনি।

ক্যামেরা ঝাঁকুনি খেয়ে বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট —
মায়া কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে।

সে জানত শাওনের অতীতের এমন কিছু, যা কেউ জানে না।

আর রাকা… সে কী মরে গেছে?
না কি তাকে মায়া নিজে…

না না — শাওনের মাথা ঘুরছে। সে কিছু ভাবতে পারছে না।

ঠিক তখনই ফোনে একটা মেসেজ এল।

“আমাকে খুঁজো না শাওন। সত্য জানলে তুমি মায়াকে আর দেখতে পারবে না।”

— রাকা,,,,

🕯️নিঃশব্দ ভয়

ফোনের পর্দায় লেখা রাকার মেসেজটা শাওনের হাত কাঁপিয়ে দিল।

“আমাকে খুঁজো না শাওন। সত্য জানলে তুমি মায়াকে আর দেখতে পারবে না।”

শাওনের কণ্ঠ শুকিয়ে এলো। সে চিৎকার করে উঠল —
“রাকা! তুই কি… বেঁচে আছিস?”

কোনো উত্তর নেই।

বাড়ির ভেতরে বাতাস থমকে গেছে, সময় থেমে গেছে।

ঠিক তখনই দরজার পাশে ঝুলে থাকা এক ঘড়ির কাঁটা ঘুরে ঘুরে থেমে গেল — ৩:১১ AM।

একই সময়, যখন ভিডিওতে রাকা মারা যাওয়ার আগে শেষবার দেখা গিয়েছিল।

শাওনের মনে হল, কেউ যেন ঠিক এখন, এই মুহূর্তে তাকে দেখছে।

🔦 সিঁড়ির নিচে

হঠাৎ একটা শব্দ।

সিঁড়ির নিচ থেকে যেন কিছু একটা ঘেঁষে গেল — পায়ের পাতার টুপটাপ শব্দ… অথবা নখর?

শাওন ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে নিচে তাকাল।

এক জোড়া চোখ।

লালচে, দীপ্তিমান।

মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

তার ঠিক পাশে একটা দেয়ালে লেখা ছিল রক্তে —

“ছায়া কাউকে অনুসরণ করে না।
সে শিকার করে।”

শাওন পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করল।
কিন্তু কিছু নেই।

🕰️ সময়ের ফাঁদে

ঘরের মধ্যে সে হঠাৎ খেয়াল করল —
প্রতিটি ঘড়িতে সময় থেমে আছে ৩:১১ AM-এ।

ঘড়ির কাঁটা যেন কোনো অলৌকিক নিয়মে আটকে গেছে।

তখনই একটা দরজা খুলে গেল — যেন কেউ দাওয়াত দিচ্ছে।

ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল:

একটা পুরনো স্টেজ।
মাঝখানে একটা চেয়ার, আর তার ওপরে বসে আছে কেউ — মুখ ঢাকা কালো কাপড়ে।

একটা মুখোশ তার হাতে।

শাওন কাছে এগিয়ে গেল।

চেয়ারে বসে থাকা মানুষটা কথা বলল না, শুধু কাঁপতে লাগল।

শাওন মুখোশটা তুলতেই…

🩸 ছায়ার মুখ

ওটা কোনো মানুষ নয়।

ওটা ছিল একধরনের পচা চামড়ায় মোড়া কাঠের পুতুল —
কিন্তু পুতুলটা শাওনের মুখ পরে আছে।

একই মুখ… একদম হুবহু।

আর ঠিক তখনই পুতুলটার মুখ খুলে গেল, আর ভেতর থেকে বের হল এক লম্বা কালো ছায়া —
হাত নেই, পা নেই, মুখও নেই… কিন্তু তার চোখ আছে।

কোনো শব্দ নেই, শুধু নিঃশ্বাসের গর্জন:

**“তুমি ভুল করেছো শাওন।

মায়া যা দেখায়, সেটা সব সময় সত্য নয়।

আর রাকা… সে কখনো মরেনি। সে শুধু বদলে গেছে।”**

☎️ মায়ার ফোনকল

ঠিক তখনই শাওনের ফোন বেজে উঠল।

মায়া কল দিচ্ছে।

শাওন ফোন ধরল, ভয় আর কান্নায় কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“মায়া… আমি… আমি সব দেখেছি। রাকা এখনও বেঁচে আছে, তাই না?”

ফোনের ওপাশে মায়ার কণ্ঠ শুনে শাওনের হাড় ঠান্ডা হয়ে গেল।

“তুমি কোথায় গেছো শাওন? তুমি জানো না, ওই বাড়িতে ঢুকলেই… ফিরে আসা যায় না।”

“মায়া! তুমি জানো সব! তুমি কেন বলোনি কিছু? তুমি—”

“শাওন, আমি চেয়েছিলাম তুমি কিছু না জানো… কারণ এখন ওর চোখ তোমার পেছনে নয়… ও এখন তোমার ভিতরে ঢুকে গেছে।”

ফোনটা কেটে গেল।

🎭 কে আসলে কার ছায়া?

শাওন ধীরে ধীরে আয়নার সামনে দাঁড়াল।

এইবার সে নিজেকে দেখতে পেল না।

কেউ অন্য একজন আয়নায় দাঁড়িয়ে আছে —
শাওনের মুখ, কিন্তু চোখে বিকৃত অন্ধকার, ঠোঁটে অমানবিক হাসি।

সে ধীরে ধীরে বলে উঠল:

**“আমি এখনো জানি না আমি কে —

শাওন?
না কি সেই ছায়া, যে ওর ভিতরে ছিল… এতদিন।

---------

-------++++

বাকি পর্ব খুব তাড়াতাড়ি আসছে,,,,,,,,
যদি এই গল্প টা পরে আপনাদের ভালো লাগে অবশ্যই মতামত যানাবেন,,,,

Comments

    Please login to post comment. Login