সন্ধ্যা নেমে এসেছে কলকাতার গলিতে। মিষ্টি হাওয়া বইছে, অথচ আজকের হাওয়া যেন কেমন যেন অচেনা!
শুভ একটু চুপচাপ ছেলে, বই পড়তে ভালোবাসে। আজ রাতে সে তার প্রিয় লেখক হিমাদ্রি সেনের নতুন উপন্যাস পড়ছিল — "অদৃশ্য ছায়া"। বইয়ের পাতা ওলটাতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি তাকে গ্রাস করল। হঠাৎ সে দেখতে পেল তার ঘরের দরজার ফাঁকে এক ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
— “কে?” শুভ ডাকল, কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
ছায়াটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, আর হঠাৎ করেই কাঁপুনি দিয়ে শুভর চোখে অন্ধকার নেমে এল।
যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল, নিজেকে একটি অপরিচিত শহরে দেখতে পেল। শহরটা যেন একটা বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। সব কিছু সাদা-কালো, একরকম ছায়া ছায়া লাগে সবকিছু। চারপাশে কেউ নেই, শুধু বাতাসে ফিসফিস শব্দ।
“তুমি এখন ছায়ার শহরে,” পিছন থেকে এক কন্ঠস্বর বলল।
শুভ ঘুরে দাঁড়াল। এক বুড়ো মানুষ, সাদা দাড়ি, চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি — “তুমি যেই বইটা পড়ছিলে, সেটার ভেতর ঢুকে গেছো। এখানে যারা আসে, তারা সহজে ফিরে যেতে পারে না।”
— “আমি... ফিরে যেতে চাই,” শুভ বলল।
— “ফিরে যেতে হলে তোমাকে সত্যিকারের ছায়াকে খুঁজে বের করতে হবে, যার গল্প এখনো লেখা হয়নি।”
শুভ এই শহরের অলিগলি ঘুরতে থাকল। সে দেখল প্রতিটি ছায়া যেন কোনো না কোনো মানুষকে অনুসরণ করে, কিন্তু সেগুলো মানুষ নেই — পুরোনো স্মৃতি, ভুলে যাওয়া স্বপ্ন, হারিয়ে যাওয়া সময়।
শেষমেশ, সে একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখল — একা বসে কাঁদছে।
— “তুমি কে?” শুভ জিজ্ঞাসা করল।
— “আমি সেই গল্পের ছায়া, যা কেউ কখনো লেখেনি।”
শুভ তার দিকে হাত বাড়াল, মেয়েটি হাত ধরল। চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ল। সব রঙ ফিরতে লাগল।
হঠাৎ শুভর চোখ খুলে গেল। সে তার নিজের ঘরে ফিরে এসেছে। বইটা তার সামনে খোলা — কিন্তু পাতার মাঝখানে নতুন একটি লাইন যোগ হয়েছে —