কিছুক্ষণ নীরবতা। হেনা চুপচাপ তাকিয়ে রইল আরিয়ানের চোখে। বাতাস যেন থেমে আছে।
তারপর হঠাৎই ধীরে, শান্ত স্বরে হেনা বলল,
“সাহেব... তুমি যদি এখন না করো, তাহলে আর কোনো রাস্তা থাকবে না। এই খানে আমরা দুজনেই ফেঁসে গেলাম। তখন কেউ আমাদের বাঁচাতে পারবে না। বলে দিলাম… সময় আর নেই।”
আরিয়ান স্থির হয়ে রইল। ওর চোখে স্পষ্ট দ্বিধা।
মন বলে—না, এটা করা ঠিক হবে না।
কিন্তু যুক্তি আর বাস্তবতা ফিসফিস করে বলে—এটাই শেষ সুযোগ।
তার দম বন্ধ হয়ে আসছে, বুকের ভেতর শূন্য এক ভয়।
হেনার চোখে কোনো কান্না নেই, কিন্তু সেখানেও একটা জেদ, একটা অদ্ভুত বিশ্বাস।
আরিয়ান নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল… যেন নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
আরিয়ান ধীরে ধীরে হাত বাড়াল। পিছন থেকে বাঁধা, তাই এক হাতে কাজ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল।
একটা জটিল অনুভব, যেটা হেনা নিজেও চেপে রাখার চেষ্টা করছে।
আরিয়ান চোখ বন্ধ করে ফেললো। দেখতে পাচ্ছে না, অনুভবেই বুঝতে হচ্ছে চাকুটা কোথায়। এতো কাছে কোনও মেয়েকে সে কখনও অনুভব করেনি, তৃষাকে ছাড়া। কিন্তু আজ তৃষার মুখ আর মনে পড়ছে না, বরং হেনার নিঃশ্বাস, তার শরীরের কাঁপুনি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সে অবশেষে চাকুর হাতলটা স্পর্শ করলো। হেনার শরীর আরও একটু সরে এলো। কিন্তু সে চুপ করে রইলো।
— “ধরেছি…” আস্তে করে বললো আরিয়ান। গলার স্বর কাঁপছে।
তারপর চাকুটা বের করলো।
আরিয়ান চোখ নামিয়ে বললো,
— “এইবার রতন আসুক। এখন আর পালাবো না।”
দূর থেকে কুকুরের ডেকে ওঠা যেন জানিয়ে দিলো—রাতটা আর বেশিক্ষণ নিরাপদ নেই। ঘরের নিস্তব্ধতা খানিকটা কেটে হেনা ধীরে বলে উঠলো,
— “সাহেব, আগে আমার বাঁধনটা খুলে দাও… এরপর তোমারটা খুলে দেবো।”
আরিয়ান সাড়া দিলো না প্রথমে। কিছুক্ষণ থেমে থাকলো, যেন মনের ভিতরে কিছু ভাঙাগড়ার শব্দ হচ্ছিল। তারপর সে হাতের ছুরি দিয়ে ধীরে ধীরে হেনার বাঁধন কেটে দিলো। হেনা হালকা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— “এখন তোমারটা…”
সে দ্রুত ঝুঁকে পড়লো আরিয়ানের পিছনে, সযত্নে দড়িটা কেটে দিলো। বাঁচার একটা উপলব্ধি যেন দুজনের মাঝখানে শ্বাস নিচ্ছিলো। মুক্ত হতেই হেনা দ্রুত এগিয়ে গেলো একটা পুরনো বাক্সের দিকে, যেখান থেকে সে একখানা মোবাইল টেনে বের করলো।
— “এইটায় সব ছবি ছিলো… রতন এটাই ব্যবহার করতো ব্ল্যাকমেইলের জন্য,” হেনা বললো, চোখে একরাশ ঘৃণা।
আরিয়ান চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখলো, হেনা এক এক করে সব ছবি ডিলিট করে দিলো। আর প্রতিটা মুছে ফেলার পর তার মুখে যেন একটু একটু করে স্বস্তির ছায়া ফিরে আসতে লাগলো। শেষ ছবি মুছে দিয়ে সে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে।
— “শেষ। এবার কেউ কিছু প্রমাণ করতে পারবে না। আমি তোমার কৃতজ্ঞ… সাহেব,” তার কণ্ঠটা নরম হয়ে এলো।
আরিয়ান কিছু না বলে একটুখানি মাথা নাড়লো। ভিতরে এক তীব্র সিদ্ধান্ত গড়ে উঠছে।
চলবে......