Posts

গল্প

ছায়ার পেছনে পর্ব :৪

June 13, 2025

শিহাবুজ্জামান শাওন

64
View

📖 ছায়ার পেছনে

🕯️ পর্ব ৪ : মায়ার মুখোশ

বাড়ির ভিতরে একার মতো দাঁড়িয়ে শাওনের মনে হচ্ছিল —
সে এখন আর এই জগতের কেউ নয়।

সে একটা আয়নার ভিতর ঢুকে গেছে।
আর আয়নার ওপাশে সময় থেমে থাকে না — ওটা খেয়ে ফেলে।

মোবাইলের স্ক্রিন বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ একটা অজানা নাম্বার থেকে কল এল।
শাওন কাঁপা হাতে ধরল।

ওপাশে কেউ কিছু বলল না, শুধু একটা সাস্পেন্ডেড ফ্যান ঘোরার আওয়াজ, আর তারপর…

“তোমাকে খুঁজছি শাওন। তুমি ছায়ার থেকে পালাতে পারবে না।”

🕯️ মায়ার অতীত

ঠিক তখনই বাড়ির এক কোনা থেকে শোনা গেল মায়ার গলা।
না, ফোনে নয় — বাস্তবেই।
 

“তুমি যদি আমার কাছে ফিরে না আসো, শাওন… তবে আমিও আমাকে আর ফিরে পাবো না।”

শাওন পেছনে তাকাল — মায়া দাঁড়িয়ে আছে।
তার চোখে জল। তার কণ্ঠে বেদনা।
কিন্তু একি?
তার ছায়াটা…
আলাদা ভাবে নড়ছে!

মায়ার দেহ একদিকে দাঁড়িয়ে, আর তার ছায়া যেন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে শাওনের দিকে।

শাওন কাঁপা কণ্ঠে বলল:
“তুমি মায়া তো?”

মায়া বলল না কিছু। শুধু বলল:

“আমি ছিলাম… যতদিন তুমি আমাকে ভালোবেসেছো।
কিন্তু তুমি যে কারো ছায়া হয়ে গিয়েছো, সেটা আমি বুঝিনি।”

🧩 ছায়ার খেলা

ঘরের ভেতরের বাতি হঠাৎ নিভে গেল।

ঘোর অন্ধকার।

হঠাৎ আশপাশে ছায়ার কণ্ঠস্বর:

**“প্রেমকে তুমি বিশ্বাস বলো,

কিন্তু বিশ্বাস কীভাবে ভেঙে পড়ে, সেটা দেখনি এখনো…”**

তখনই ঘরের দেয়ালে লাল আলোয় ভেসে উঠল তিনটা নাম:
• মায়া
• রাকা
• শাওন

তার নিচে একটা প্রশ্ন:

“কারা মরেছে, আর কে বেঁচে আছে?”

আর তারপর একটা নির্দেশ:

“তুমি যদি ভুল বলো, তোমার ছায়াটা আর তোমার থাকবে না।”

🕵️ সত্যের পথ

শাওনের মনে পড়তে লাগল… প্রতিটি ঘটনা…
• রাকা বারবার কিছু লুকোচ্ছিল।
• মায়ার চোখে ছিল না ভয়, ছিল অদ্ভুত এক দৃষ্টি।
• আর সে নিজেই, নিজের ছায়া নিয়ে ভয় পেতে শুরু করেছে।

হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠল:

**“তোমরা সবাই আমার সঙ্গে খেলা করছো!

আমি শাওন, আমি কাউকে মারিনি! আমি শুধু সত্য জানতে চাই!”**

ঠিক তখনই বাতি জ্বলে উঠল।

ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা মডেল থিয়েটার — ছোট্ট স্টেজে তিনটা পুতুল দাঁড়িয়ে:
• একটার গায়ে মায়ার জামা।
• একটায় রাকার রক্তমাখা পোশাক।
• আর একটায়… শাওনের মুখ।

সাথে লেখা:

**“শেষ খেলায় তোমাকেই ঠিক করতে হবে —

কে ছিল ছায়া,
কে ছিল ভালোবাসা,
আর কে ছিল বিশ্বাসঘাতক?”**

🎭 বডি-সুইচ?

হঠাৎ একটা দরজা খুলে গেল।

মায়া দাঁড়িয়ে।

কিন্তু এবার তার চোখে আলো নেই।

সে ধীরে ধীরে বলল:

**“তুমি সত্যি জানতে চাও?

তাহলে আয়নার ভেতরে এসো।

কারণ তোমার ভিতরেই লুকিয়ে আছে সেই ছায়া,

যে রাকাকে শেষবার দেখেছিল —
মেরে ফেলার ঠিক আগে।”**

শাওনের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
সে কী তাহলে খুন করেছে?
না কি… তার ভেতরে সত্যিই কেউ ঢুকে আছে?

তার মাথা ঝিমঝিম করছে।

ঠিক তখনই তার হাত কাঁপতে কাঁপতে একটা পুরনো চিঠি বের করল।

চিঠিটা…
রাকা লিখেছিল।
আর প্রাপক ছিল — মায়া।

চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিল:

**“ও যদি জানে, তুমি কে ছিলে, তাহলে ও কখনো ভালোবাসবে না।

কারণ তুমি সেই ছায়া,

যাকে আমি ডাকতাম… আমার প্রিয় শাওন।”**

🕯️আয়নার ওপারে

শাওন বসে আছে ঘরের মেঝেতে।
তার হাতের মুঠোয় চেপে ধরা রাকার চিঠি।
আর মনে একটাই প্রশ্ন —
“আমি কে?”

চারপাশে শব্দ নেই।
শুধু একটা সাদা ঘর… যেন হাসপাতালের মতো।

আয়নার সামনে বসে থাকা নিজের ছায়াটার দিকে তাকিয়ে সে ফিসফিস করে বলল,
“আমি যদি শাওন না হই, তাহলে কে আমি?”

আয়নাটা ধীরে ধীরে কালো হয়ে উঠল।

তার মধ্যে মুখ ফুটে উঠল —
রাকা!

তার চোখ লাল, ঠোঁট রক্তে ভেজা।

রাকা বলল:

**“তুই তো জানতিস সব।

আমি তোকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম…

কিন্তু তুই ছায়া হয়ে গেলি, শাওন।

তুই নিজের ভেতরেই হারিয়ে গেছিস।”**

🔐 স্মৃতির দরজা

শাওনের মাথায় বাজ পড়ার মতো স্মৃতি ফিরে আসতে লাগল।
• একটা অন্ধকার রুম।
• মোমবাতির আলোয় দাঁড়িয়ে আছে রাকা আর মায়া।
• তার সামনে রাখা একটা আয়না —
যেটার মধ্যে কেউ একজন তাকিয়ে আছে, কিন্তু… তার মুখ নেই।

আর তারপর…
চিৎকার।
রক্ত।
আর ছায়া।

সে হঠাৎ মনে করতে পারল…
একটা রাতে রাকাকে সে ধাক্কা দিয়েছিল…
কিন্তু কেন?

সে কী রাকাকে খুন করেছিল?

না কি…
সে নিজেও সেই রাতে মারা গিয়েছিল?

🕸️ সময়চক্র

ঘরের মধ্যে হঠাৎ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল একটা কুয়াশা।

ঘরের মাঝখানে একটা ঘড়ি।

সে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না, উল্টো যাচ্ছে —
পেছনের দিকে।

ঘড়ির নিচে লেখা:

“যদি সময় ফিরে আসে, তবে স্মৃতি হবে শাস্তি।”

ঘড়ির প্রতিটি কাঁটার সঙ্গে শাওন যেন হারিয়ে যাচ্ছিল সময়ের ভেতরে।

সে নিজেকে দেখতে পেল —
মায়ার সঙ্গে প্রথম দেখা।
রাকার সঙ্গে হাসাহাসি।
তারপর… একটা কালো ঘর, আর সেই আয়না।

তার শরীর ঠান্ডা হয়ে এল।

💀 মুখোশ খুলে গেল

হঠাৎ সে একটা ভাঙা আয়নার সামনে দাঁড়াল।

আর সেখানে নিজের প্রতিবিম্বের বদলে দেখল —
একটা অন্ধকার ছায়ামূর্তি,
যার চোখে আগুন, আর ঠোঁটে বিকৃত হাসি।

সে বলল:

**“তুই তো অনেক আগেই মরে গেছিস, শাওন।

এখন তুই শুধু এক বিশ্বাসঘাতক স্মৃতি —

যা মায়ার ভালোবাসার ভেতর ঢুকে বেঁচে আছে।”**

শাওন চিৎকার করল:

“না! আমি শাওন! আমি মায়াকে ভালোবাসি! আমি কাউকে খুন করিনি!”

ছায়ামূর্তি হাসল:

**“তাহলে আয়নার ওপারে তাকাও।

নিজেই নিজের চোখে দেখো,

কে বাঁচে আর কে ছায়া হয়ে যায়!”**

🖼️ সত্যের মুখোমুখি

একটা দরজা খুলে গেল।

সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়া।

তার হাতে এক পুরনো ভিডিও ক্যামেরা।

সে বলল:

“এই ক্যামেরার ভিতরে আছে সেই রাতে যা ঘটেছিল।
তুমি যদি সাহস থাকলে দেখো…
আর যদি সত্য জানার সাহস না থাকে —
তবে এখানেই শেষ করো সবকিছু।”

শাওনের হাত কাঁপছিল।
কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিল — দেখতে হবে।

সে ক্যামেরার ফুটেজ চালু করল।

স্ক্রিনে ফুটে উঠল রাকার ভয় পাওয়া মুখ।

সে ফিসফিস করে বলছে:

**“তুই তো বলেছিলি, আমরা ওকে শুধু ভয় দেখাবো…

কিন্তু তুই… সত্যিই ওকে…”**

ভিডিও হঠাৎ থেমে গেল।

আর শেষ দৃশ্যে দেখা গেল আয়নার মধ্যে মায়া আর শাওন — কিন্তু একসঙ্গে না, বরং একটা আরেকটার ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

🎭 কে ছায়া?

শাওনের মাথায় যেন বিস্ফোরণ হল।

সে বোঝার চেষ্টা করছিল —
সে কি শাওন?
না কি সে কেবল মায়ার মনে গেঁথে থাকা সেই ছায়া, যে মায়ার সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল?

ঠিক তখন মায়া বলল:

**“তুমি এখনো জানো না, আমি কে।

আমি শুধু সেই প্রেম,

যে ছায়ার ভিতরও তোমায় খুঁজে পেয়েছিল।

কিন্তু তুমি…
তুমি কখনই শুধু শাওন ছিলে না।”**

Comments

    Please login to post comment. Login