Posts

গল্প

উদারতা

June 14, 2025

আখতারুজ্জামান নিশান

53
View


.
.
জিইসির মোড়ে গাড়ি যেখানে পার্ক করা,গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। এখানে টঙ দোকান একটাই। চা খেতে খেতে রাস্তার গাড়ি গুলো দেখছি।আজকে বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ কোন দিন। শহরের রাস্তায় এত মানুষ কেন? মনে হচ্ছে বাসা বাড়িতে কেউ নেই;সবাই বেরিয়েছে।

একটু পরপর গাড়িগুলোর গতি কমে যাচ্ছে। পার্কিং করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অনেকগুলো গাড়ি রাস্তার পাশেই নো-পার্কিং জোনে পার্ক করা।ট্রাফিক পুলিশের মতিগতিও আজ ভালো। নাকি অতিরিক্ত গাড়ি বলেই সেগুলো সামলিয়ে মামলা করার কুল পাচ্ছেনা? এতক্ষণে তো অনেক মামলা হয়ে যাওয়ার কথা!আজকের জন্য স্পেশাল ছাড় চলছে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই চায়ের কাপে আর একটা চুমুক দিলাম।

ঠিক তখনই দুর্ঘটনা ঘটে গেল!

একটা ছেলে দ্রুতগতিতে বাই-সাইকেল নিয়ে এসে পড়ে গেল গাড়ির ওপর। ঘটনাটা দ্রুতই ঘটলো।আমি চায়ের কাপ রেখে তাড়াতাড়ি ছেলেটার কাছে গেলাম। ছেলেটা তাড়াতাড়ি উঠেই গাড়ির দিকে তাকালো। তারপর ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি ছেলেটার চোখের দিকে তকিয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তার ভয়ের কারণ। সাইকেলের ঘষায় গাড়ির দরজার রঙ উঠে গেছে। বাজে ভাবেই রঙটা উঠেছে।

আমি ছেলেটার সাইকেল তুলে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। বললাম,'ভয় পেয়োনা। আমি দেখেছি। তোমার দোষ নাই। দুর্ঘটনাতো ঘটতেই পারে....'

আমার কথা শুনে ছেলেটা আরও  নার্ভাস হয়ে গেল বলে মনে হলো। বলল, 'আপনার অনেক টাকা লাগবে।  আমি আসলে ইচ্ছাকৃত করিনি....'

ছেলেটার চোখে পানি চলে আসার মত হলো। কতই বা বয়স? ষোল বা সতের।

আমি বললাম,'এই বোক ছেলে। কাঁদার মত কিছুই হয়নি। তুমি ব্যাথা পাওনি তো? '

'না। ব্যাথা পাইনি। আপনার গাড়িটা....'

'ব্যাথা না পেলে,সাইকেলে ওঠো। যেখানে যাচ্ছিলে যাও।'

ছেলেটা চলে গেল।

আশেপাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল। তারা এসে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন।একজন তো হ্যান্ডশেকও করলেন। আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম, ' কাজটা ধন্যবাদের আশায় করিনি। আমাদের সবাইকে সহনশীল হতে হবে। এটাই আমি জানি এবং মানি।'

চায়ের দোকানে টাকা দিতে এগিয়ে গেলাম। চায়ের দোকানদার এতক্ষণ আমার পাশেই ছিলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখেছেন। তিনি চায়ের জন্য টাকা নিতে নারাজ। অনেক জোর করলাম। কিন্তু তার ভাষ্য একটাই- রাস্তার পাশের দোকানে তিনি অনেক মানুষ দেখেছেন। গাড়ির মালিকরা গাড়িতে হাত দিলেও গরম হয়ে যায়।এতদিন তিনি তাই দেখেছেন।তিনি ভেবেছেন, গাড়ির মালিক,বড় লোক এমনই হয়। কিন্তু আজকে আমার আচরণ দেখে তার ভুল ভেঙেছে। আমার কাছ থেকে চায়ের দাম নিলে তার পাপ হবে।

অগত্যা চায়ের দাম দেয়া হলো না। আমি এসে গাড়ির দরজার কাছে এসে দাঁড়ালাম।গাড়ির মালিকের কথা চিন্তা করে মন খারাপ হলো আমার। কত টাকা লাগবে কে জানে?

আমি হাঁটতে শুরু করলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে। আগ্রাবাদ যেতে হবে। যে ভীড় আজকে,বাসে উঠতে পারব কিনা কে জানে.........

Comments

    Please login to post comment. Login