Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৫৩)

June 14, 2025

Boros Marika

55
View

হেনার কণ্ঠ যেন গভীর রাতের মতো নিস্তব্ধ, তবুও তার মধ্যে ছিলো এক অব্যক্ত আতঙ্ক।

— "সাহেব, তুমি পালিয়ে যাও।"
আরিয়ান এক ঝটকায় বললো,
— "তুই চল, আমি তোর ঠিকানায় পৌঁছে দিবো। একা রেখে যাবো না।"

হেনা মাথা নেড়ে বললো,
— "না সাহেব, তুমি যাও। কারণ এই এলাকায় সবাই তোমাকে কাস্টমার হিসাবেই দেখবে, তাই সমস্যা হবে না। কিন্তু আমি… আমি বন্দী। এই বস্তিতে আমার প্রতিটা পা চেনা… আমি বের হলেই কুকুরের দল হুমড়ি খেয়ে পড়বে। তুমি ঠেকাতে পারবে না।"

আরিয়ান চুপ করে গেলো। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো হেনার চোখের সেই নীরব কষ্ট, যেটা সে এতক্ষণ চেপে রেখেছিল।

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে সে বললো,
— "তাহলে এক কাজ কর। আমি এখানেই থাকি, রতনের জন্য অপেক্ষা করি। আজ রাতে এই যন্ত্রণা শেষ করে ফেলবো।"

হেনা হঠাৎ এগিয়ে এসে তার মুখ চেপে ধরলো।
— "পাগল হয়ো না সাহেব… ও রতন! ও শেয়ালের চেয়ে ধূর্ত, আর কুকুরের চেয়ে হিংস্র। ওর পেছনে অনেক লোক… তুমি বাঁচতে পারবে না। প্লিজ, তুমি যাও।"

আরিয়ান এবার ধীরে বললো,
— "তাহলে আমিও বন্দী, তোর মতো।"

হেনার চোখ ভিজে উঠলো, কিন্তু সে শক্ত গলায় বললো,
— "না সাহেব, আমি চাই না তুমি আমার মতো বন্দী হও।"
হেনা বললো, সাহেব ছুরিটা দিয়ে যাও। আরিয়ান এর কাছ থেকে ছুরিটা নিয়ে, হেনা নিজের শরীরে আঘাত করলো।
আরিয়ান উত্তেজিত হয়ে ধরে বসলো।

রাত তখন গভীর। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকাদের একটানা শব্দ আর হালকা বাতাসে পর্দা দুলে উঠছে। সেই নিস্তব্ধতার মাঝেও হেনার রক্ত ঝরার শব্দ যেন আরিয়ানের বুকের মধ্যে বাজছিল।

আরিয়ান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
হেনার চোখে জল, কিন্তু মুখে এক অনাবিল শান্ত হাসি।

— "তুই অনেক কষ্ট করলি…" আরিয়ান বলল হালকা গলায়।
হেনা ঠোঁট কামড়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
— "সাহেব, তোমার জন্য সব করতে পারব।"

আরিয়ান তখনও ছুরি হাতে তাকিয়ে আছে হেনার রক্তাক্ত কাঁধের দিকে।
— "তুই… নিজেকে কষ্ট দিলি কেন?"
— "এইটাই আমার মুক্তির পথ সাহেব। যখন ওরা দেখবে আমি কষ্টে, তখন আর সন্দেহ করবে না। আর তুমি বাঁচবে।"

আরিয়ান আর কিছু বলতে পারল না। নিজের হাতেই হেনাকে আবার আগের মতো বেঁধে দিলো, যতটা সম্ভব কোমলভাবে। আর হেনা চোখ বন্ধ করে সহ্য করলো, যেন কোনো অভ্যস্ত যন্ত্রণার মতো।

— "আসি তাহলে…"
— "ভালো থেকো সাহেব। আমার কথা ভুলে যেও না।"

আরিয়ান চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল অন্ধকার গলির পথে।
পেছনে হেনা তখন একা, একটুখানি হাসি ঠোঁটে, কিন্তু চোখে অশ্রুর ভার।

এই মুহূর্তটা যেন তাদের দু’জনের জীবনের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ সবচেয়ে চিরন্তন আলাপন।
বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে তখন স্তব্ধ আরিয়ান। দরজা খুলতেই সামনেই বাবার মুখ—কঠিন, চিন্তিত।
— “শুনে যাও, আরিয়ান…!”
মূহূর্তেই মায়ের কণ্ঠ ভেসে এলো,
— “কে এসেছে, তাড়াতাড়ি দরজা খোলো!”

মা ছুটে এসে দরজার কাছে, আর পরমুহূর্তেই ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন—
— “কই ছিলি রে বাবা! গতকাল থেকে সারারাত নিখোঁজ, ফোন বন্ধ… কিছু না বলে চলে গেলি! আমি তো ভাবছিলাম তোর কিছু হয়ে গেছে…”
তোর পোশাক এমন কেনো?

রাত তখন প্রায় দু’টা।
আরিয়ান স্তব্ধ, চোখ নামিয়ে রাখে। মনে মনে নিজেকেই প্রশ্ন করছিল— “এখন যদি বলি কোথায় ছিলাম, তাহলে আরও বড় ঝড় উঠে যাবে… না, এখন নয়…”
তাছাড়া বলবো টা কি? যে আমি পতিতালয় ফেঁসে গেছি। আমার বিয়ের দিন থেকে আজ অবধি, সব কিছুই অন্য রকম হচ্ছে।
এরপর... 
সে কিছু না বলেই মায়ের কাঁধে মাথা রাখল। বাবার চোখে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, কিন্তু তিনিও চুপ।

আরিয়ান জানে—সে আবার এক নতুন ঝামেলার দিকে হাঁটছে, কিন্তু এবার আর পেছনে ফেরার পথ নেই।

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login