Posts

গল্প

ছায়ার পেছনে ৫ম পর্ব

June 14, 2025

শিহাবুজ্জামান শাওন

77
View

📖 ছায়ার পেছনে

🕯️ অধ্যায় ৫ম : স্মৃতির রক্তচিহ্ন

ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে।
সময় যেন আর এগোয় না।
শাওন আয়নার সামনে বসে আছে—নিজেকে নিয়ে বিভ্রান্ত,
মায়া তার পাশে, কিন্তু সে কি সত্যিই মায়া, নাকি কারো ছায়া?

🪞 পুরনো সেই রাত

ফুটেজ বন্ধ হতেই ঘরের বাতি একবার দপ করে নিভে যায়।

আবার জ্বলে উঠলে দেখা যায় শাওনের সামনে এখন একটা ছোট্ট চিরকুট রাখা।

সেখানে লেখা:

**“স্মৃতি যদি বিশ্বাস না হয়, তবে সত্যি কী?

নিজের রক্তেই লিখেছো তুমি গল্পটা,

এখন শুধু শেষ অধ্যায় লিখে ফেলো…”**

শাওন চিরকুটটা হাতে নিতেই আবার ফিরে আসে সেই রাত—
তিনজন একসাথে ছিল।
শাওন। রাকা। আর… মায়া।

তাদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছিল।

রাকা বারবার বলছিল, “মায়া জানে না আসল ঘটনা, ও যেন না জানে!”

কিন্তু শাওনের চোখ তখন অন্ধকারে কিছু একটা খুঁজছিল।

মায়া তখনও জানত না,
তাদের তিনজনের গল্পে একজন নেই…

👁️ সত্যের মুখ

এক রাতে শাওন মায়াকে বলেছিল—

“আমাদের মধ্যে কেউ একজন ছায়া হয়ে যাচ্ছে, মায়া।

আমি আয়নায় তাকালেই দেখি… আমি আর আমি নেই।

কেউ আমার হয়ে কথা বলছে, হাঁটছে, ভালোবাসছে…

অথচ আমি শুধু দেখি।”

মায়া তাকে বিশ্বাস করেছিল, প্রথমে।

কিন্তু তারপর থেকেই মায়া টের পায়—
শাওনের ব্যবহার বদলাচ্ছে।

তার চোখের ভাষা পাল্টে গেছে।

হঠাৎ কখনো সে আবেগী, আবার কখনো পুরো অচেনা!

🩸 রক্তমাখা ছবি

ঘরের এক কোণে রাখা ছিল একটা ধুলো ধরা বাক্স।

শাওন জানে না কেন, কিন্তু সেটার দিকেই তার মন টানছিল।

বাক্স খুলতেই বের হয়ে আসে পুরনো সব Polaroid ছবি।

ছবিগুলোতে তিনজন হাসছে—
শাওন, রাকা, মায়া।

কিন্তু একেকটা ছবিতে রাকার মুখে কালি লেপা, কিছু ছবিতে সে নেই, আর কিছু ছবিতে… মায়া তাকিয়ে আছে ঠিক ক্যামেরার দিকে।

একটা ছবির পেছনে লেখা:

**“শেষবার আমরা একসঙ্গে।

তারপর ছায়া এসে ওকে নিয়ে যাবে।”**

শাওনের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

তার মানে, তারা জানত…
কারো মৃত্যু অনিবার্য!

🧠 বিভ্রান্তি নাকি বাস্তব?

হঠাৎ পেছন থেকে শোনা যায় মায়ার গলা।

“তুমি কি এখনো আমাকে ভালোবাসো, শাওন?”

শাওন ধীরে ঘুরে তাকায়।
মায়া দাঁড়িয়ে, চোখে জল।

কিন্তু তার ছায়া আবার চলছে বিপরীত দিকে।

“তুমি তো বলেছিলে, আমি যা-ই হই, তুমি পাশে থাকবে…
কিন্তু তুমি তো পালিয়ে গেছো, নিজের ভেতরের সেই অন্ধকার থেকে।” — মায়ার কণ্ঠ কাঁপছে।

শাওন ফিসফিস করে জবাব দেয়:

**“তুমি জানো না, আমি কী দেখেছি সেই রাতে…

আমি শুধু বাঁচতে চেয়েছিলাম, মায়া।”**

🧩 সত্য ফাঁস

তখনই হঠাৎ ঘরের একটা দেয়াল ফেটে বেরিয়ে আসে ছোট্ট একটা চেম্বার।

ভেতরে একটা রক্তমাখা আয়না।

আয়নার নিচে রাখা রেকর্ডিং টেপ।

শাওন সেটা চালায়।

ভয়াল কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া যায়:

“সে জানত, রাকা সব জেনে গেছে।

তাই তাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল।

কিন্তু সে কখনই নিজেকে খুনি ভাবেনি।

কারণ তার মনে হয়েছিল —

খুনি হচ্ছে সে,

যার ছায়া সে বহন করছিল।”

শাওন হাঁটু গেড়ে পড়ে যায়।

সে নিজেই রাকাকে ঠেলে দিয়েছিল!

না, ইচ্ছা করে নয়।
কিন্তু তার মাথার ভেতর তখন “আরেকটা কণ্ঠস্বর” বলছিল—
“ও যদি বলে দেয়, সব শেষ হয়ে যাবে। থামাও ওকে।”

🔥 বিচার

মায়া ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসে।

তার চোখে এখন ভয় নেই।
কঠিন রাগ, বিশ্বাসঘাতকতায় পোড়া শূন্যতা।

“তুমি বলেছিলে ভালোবাসো…
তবু তুমি আমার সামনে রাকাকে—”

শাওন তাকে থামিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে:

**“আমি আর আমি ছিলাম না, মায়া।

আমি তখন নিজের ছায়া হয়ে গিয়েছিলাম…

আর সেই ছায়া,

তোমার ভালোবাসাকে খুন করেছে।”**

মায়ার চোখে জল নেমে আসে, কিন্তু সে পেছনে সরে যায়।

সে শুধু বলে:

**“তোমার ছায়ার বিচার হবে… আয়নার ওপারে।

কারণ এই দুনিয়ায়, ভালোবাসার ছায়া যদি বিশ্বাসঘাতক হয়,

তবে সে আর মানুষের রাস্তায় হাঁটতে পারে না।”**

🖤 শেষ দৃশ্য

শাওন এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

সে জানে — আরেকবার তাকালেই তার আসল সত্তা দেখা যাবে।

সে কি সাহস করবে?
নাকি চিরকাল ছায়া হয়ে বাঁচবে?

আয়নার নিচে লেখা আছে:

**“নিজেকে দেখো একবার…

তারপর ফিরে এসো, যদি থাকতে চাও।”**

ঘরটা নিস্তব্ধ।
একটা অদৃশ্য ঠাণ্ডা যেন জমে আছে বাতাসে।

শাওনের সামনে দাঁড়িয়ে সেই রহস্যময় আয়নাটা।
যেটা শুরু থেকেই ওর স্মৃতি, ভালোবাসা, ভয় আর পাপকে লুকিয়ে রেখেছে।

🔍 আয়নার সামনে

শাওনের মনে হচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে একা নয়।

পেছনে কারা যেন হাঁটছে, ফিসফিস করছে…
কখনো রাকার গলা,
কখনো মায়ার কষ্টমাখা কান্না,
আর কখনো তার নিজের ভেতরের সেই দ্বিতীয় কণ্ঠ।

সে আয়নার দিকে এগিয়ে গেল…

তখনই আয়নাটা গাঢ় কালো থেকে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগল।

আর আয়নায় দেখা গেল —
একটা অদ্ভুত ‘নিজেকে’।

👁️ আয়নার মানুষটা

আয়নায় শাওনের প্রতিফলন বলছে না, বরং দাঁড়িয়ে দেখছে।

চোখে কোনো স্পষ্ট ভাব নেই,
ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি,
আর হাতে ধরা সেই রক্তমাখা রুমাল,
যেটা রাকার মৃত্যুর পর গায়েব হয়ে গিয়েছিল।

আয়নার শাওন বলে উঠল:

**“তুই অনেক দেরি করেছিস আসতে, শাওন।

আমি এতদিন এখানে একা অপেক্ষা করছিলাম।”**

আসল শাওন থমকে যায়।

সে জিজ্ঞেস করে:

“তুই কে?”

আয়নার ছায়া-মূর্তি হাসে।

**“তুই যে নিজেকে মানুষ ভাবিস,

সেটাই তো ভুল।

আমি তোর আসল রূপ—

ভয়, অবিশ্বাস, লোভ, ঈর্ষা…

সবকিছুর ছায়া।”**

🕸️ বিভক্ত সত্তা

শাওনের মনে পড়ে,
তার সব ভুল সিদ্ধান্তগুলো এই ছায়াটার ছায়াতেই হয়েছিল।
• রাকার প্রতি অবিশ্বাস,
• মায়ার কাছে সত্য লুকানো,
• নিজের ভুল ঢাকতে গিয়ে অন্যের জীবন কেড়ে নেওয়া…

সে বুঝে ফেলে,
এই আয়নাটা শুধু একটা কাচ নয়।
এটা তার আত্মার একটা দ্বার,
যেখানে সত্য আর ছায়া আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

💥 শেষ সংঘর্ষ

শাওন এক ধাক্কায় আয়নার দিকে ছুটে যায়।

তার মনে শুধু একটাই কথা—

“এই ছায়াকে আমি আর নিজের মধ্যে রাখতে পারব না!”

তবে ছায়ামূর্তি আয়না ভেদ করে বেরিয়ে আসে!

দুই শাওন মুখোমুখি দাঁড়ায়।

একটা বলে:

“আমি ভালোবাসা দিয়েই বদলাতে চাই সব কিছু!”

অন্যটা বলে:

“ভালোবাসা দুর্বলতা। আমি শুধু বাঁচতে চেয়েছিলাম—তাতে কে মরল, তাতে কী যায় আসে?”

⚖️ ফয়সালা

ঠিক তখনই ঘরটা আলোয় ভরে যায়।

পেছনে মায়া দাঁড়িয়ে।

তার হাতে সেই ক্যামেরাটা।

সে বলে:

**“আমি জানি, আসল শাওন কে।

আমি জানি, কার চোখে এখনো কান্না জমে থাকে…

আর কার চোখে শুধু আগুন।”**

সে ক্যামেরার লাইট জ্বালায়—

আর আসল শাওনের ছায়া মিলিয়ে যেতে থাকে আলোতে!

ছায়া চিৎকার করে বলে:

“ভালোবাসা কখনো কাউকে রক্ষা করতে পারে না!”

মায়া বলে:

**“ভালোবাসা শুধু রক্ষা নয়…

এটা চেহারা চিনে ফেলে।

ছায়াকে আলাদা করে দেয় মানুষ থেকে।”**

☀️ নতুন সকাল

আয়নাটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

ঘরটা আবার আলোয় ভরে ওঠে।

শাওন হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।

তার সামনে দাঁড়িয়ে মায়া।

তারা দু’জন তাকিয়ে থাকে একে অন্যের চোখে।

কোনো কথা নেই,
শুধু বোঝাপড়া—
ভুল, ক্ষমা, আর একসাথে নতুন করে শুরু করার ইচ্ছা।

🌒 শেষ বাক্য

ঘরের দরজায় লেখা হয়ে যায় এক লাইন অদ্ভুত শব্দ:

**“ছায়া কখনো চিরস্থায়ী নয়।

আলো যদি সত্য হয়, ছায়া হারিয়ে যাবে।”**

Comments

    Please login to post comment. Login