Posts

উপন্যাস

ভাগ্যকাশের ধ্রুবতারা।।পর্বঃ২

June 14, 2025

Nusrat Jahan Mou

Original Author জাহান( Jahan)

55
View

ভাগ্যকাশের ধ্রুবতারা
পর্ব:২
কলমেঃ জাহান
সকাল ৫টা। শহরের ঘুম তখনও পুরোপুরি ভাঙেনি। অফিসের গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে গলির মুখে। মিরাজ জানালার কাঁচ নামিয়ে একবার ঘড়ির দিকে তাকাল, আরেকবার মোবাইলে চোখ বুলিয়ে দেখল,

— "মিরাজ ভাই, ঐশানি ম্যাম তো এখনো আসেননি।"

মিরাজ জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
— "আসবেনই এখন। উনি টাইমের ব্যাপারে সিরিয়াস।"

এই কথা শেষ না হতেই ঐশানি ছুটে এল। গায়ে হালকা খয়েরি শাল, চোখে ঘুমটানা ক্লান্তি।

— "সরি, সবাইকে একটু ওয়েট করালাম," হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ঐশানি।

— "না না ম্যাম, আপনি আসলেই হলো," হাসল মিরাজ।

তিনজন গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি ছুটে চলে LM সাইটের দিকে।

চার ঘণ্টার দীর্ঘ পথ। কেউ কিছু মুখে তোলে না। একেবারে নিস্তব্ধতা। ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টা পার করে ফেলেছে।

গাড়ি থামতেই মিরাজ দরজা খুলে নেমে বলল,
— "চলুন, কাজে নামি।"

ঐশানি গলায় ব্যথার ভাব নিয়ে মাথা নেড়ে বলে,
— "হ্যাঁ, শুরু করা যাক।"

তারা সাইটের কাজ পরিদর্শন করতে থাকে। প্রতিটি স্তর, প্রতিটি রড, প্রতিটি কংক্রিটের স্তম্ভ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।

হঠাৎ ১৬ তলায় উঠে ঐশানি থেমে গেল। শরীরটা হঠাৎ ভারী হয়ে আসছে। মাথা ঘুরছে, চোখে অন্ধকার।

— "উফ... মাথাটা..." ফিসফিস করে বলে উঠল সে।

মিরাজ পেছনে তাকিয়ে দেখে, ঐশানি নেই।

— "ম্যাম? ঐশানি ম্যাম! কোথায় গেলেন?" তার কণ্ঠে উদ্বেগ।

মিরাজ তখন ৭ তলায়।

— "মিরাজ ভাই, উপরে যাচ্ছি আমি।"

মিরাজ চারপাশে খুঁজতে থাকে। ১৬ তলার এক কোনায় ঐশানিকে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে যায়।

— "ম্যাম! আপনি ঠিক আছেন?"

ঐশানি মাথা তুলে ক্লান্ত হাসি দিয়ে বলল,
— "কিছু হয়নি। সকালে খাওয়া হয়নি, শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে।"

মিরাজ উঠে এসে বলে,
— "চোখ মুখ একদম বিবর্ণ। আমাদের এখনই অফিসে ফিরা উচিত।"

মিরাজ মাথা নেড়ে বলে,
— "চলুন, আর দেরি নয়।"

তারা গাড়িতে উঠে বসে। ঐশানি চুপ করে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে। তার নাক দিয়ে অল্প অল্প রক্ত পড়ছে। মিরাজ পাশে বসে কিছু টের পাচ্ছে না। ঐশানি মুখে কিছু বলছে না।

— "তাকে বললে চিন্তা করবে, এখন না..." — নিজেকে বোঝায় সে।

দীর্ঘ সফরের পর অফিসে পৌঁছে যায় বিকেল ৪:৩০ মিনিটে।

ইকতিদার তখন মিটিং রুমে বসে টিমের সঙ্গে আলোচনা করছে। দরজায় নক।

— "May I come in, sir?" — ঐশানির কণ্ঠ স্পষ্ট নয়, ক্লান্ত।

ইকতিদার ভ্রু কুঁচকে বলে,
— "Come in."

ঐশানি ও মিরাজ ভেতরে ঢুকে চুপচাপ বসে।

দশ মিনিট পর ইকতিদার বলেন,
— "Miss Aishani, আজকের রিপোর্ট দিন।"

ঐশানি উঠে দাঁড়ায়, মুখে তীব্র ক্লান্তি।

— "জি, স্যার... আজ আমরা সাইটে পৌঁছাই..." কণ্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছে। চোখে অন্ধকার, পা কাঁপছে।

মিরাজ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
— "স্যার, যদি অনুমতি দেন, তাহলে আমি রিপোর্টটা উপস্থাপন করি?"

ইকতিদার চোখ রাঙিয়ে বলে,
— "আমি কি আপনাকে বলেছিলাম? যেহেতু এত শখ, তাহলে করুন।"

— "সরি, স্যার," — কাঁপা কণ্ঠে মিরাজ বলতে শুরু করে।

ইকতিদার ঠাণ্ডা স্বরে বলে,
— "Sit down, Miss Aishani."

ঐশানি ধপ করে বসে পড়ে। কিছু সময় পর সবাই লক্ষ্য করে, তার শরীর এক পাশে ঢলে পড়েছে। মাথা টেবিলের ওপর। রক্তের ফোঁটা পড়ে টেবিল কাপড় লাল করে দিয়েছে।

লিমা চিৎকার করে উঠে,
— "ঐশানি! রক্ত... রক্ত বের হচ্ছে!"

চারদিকে আতঙ্ক। ইকতিদার কাঁপা গলায় বলে,
— "কেউ ডাক্তার ডাকো! কী হচ্ছে এসব?"

আসিফ মোবাইল টেনে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন দেয়।
— "হ্যালো, জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠান! আমাদের অফিসে একজন মহিলা কর্মীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে!"

পাঁচ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে।

মিরাজ এক মুহূর্ত চিন্তা না করে ঐশানিকে কোলে তুলে নেয়।

— "চলুন, সময় নেই," বলে সে।

সাথে যায় লিমা, আসিফ, আরও দু'জন।

হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগে না। চিকিৎসকরা ঐশানিকে নিয়ে যান ইমার্জেন্সি রুমে।

এক ঘণ্টা পর ইকতিদার হাসপাতালে আসে। মুখ থমথমে।

চিকিৎসক বলে,
— "অবস্থা ভয়ানক ছিল। সময় মতো না এলে স্ট্রোক করে ফেলত। শরীর একেবারে দুর্বল, মেরুদণ্ডে চোট পেয়েছে। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে কয়েকদিন।"

এই সময় হাসপাতালের করিডোরে ঐশানির বাবা–মা ঢুকেন। চোখে জল।

— "আমার মেয়েকে দেখতে চাই! কে দেখেছে ওকে?" — কান্নাভেজা গলায় বলেন ঐশানির মা।

ইকতিদার সামনে এগিয়ে এসে বলেন,
— "আন্টি, চিন্তা করবেন না। ঐশানি এখন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছে। উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। একটু সময় দিন।"

ঐশানির মা একবার তাকিয়ে বলে,
— "আমার মেয়েটা কখনও কিছু বলেনি... এত চাপ নিচ্ছিলো বুঝিনি আমরা..."

হাসপাতালের আলো ঝাপসা হয়ে আসে ঐশানির ক্লান্ত মুখে। বাইরে তখন সন্ধ্যার পরত পড়ছে, আর অফিসের সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রহর গুনছে—ঐশানি কি ঠিক হবে?
#ভাগ্যকাশের ধ্রুবতারা
# Jahan(জাহান)
#everyone
# followers

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Nusrat Jahan Mou 5 months ago

    প্রিয় পাঠক মহল মতামত জানাবেন!!