মো. সজীব সিকদার—যাকে আজ দেশের তরুণ প্রযুক্তিপ্রেমীরা চেনেন একজন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তা ও Weekmotion.com এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তার জীবনজুড়ে রয়েছে সাফল্য, সংগ্রাম, ও প্রেরণার অনেক গল্প। তবে এই সফলতার আড়ালে রয়ে গেছে একটি আবেগঘন ভালোবাসার অধ্যায়, যা আজও তাকে নীরবে কাঁদায়।
২০১৮ সালে এক নতুন পরিচয়
২০১৮ সালের কথা। সজীব তখন JSC পরীক্ষার্থী। একাধারে পড়াশোনা ও অনলাইন আইটি কোর্সে মনোযোগী। সেই কোর্সেই পরিচয় হয় তাপসিনার সঙ্গে—এক সাধারণ কিন্তু মেধাবী মেয়ে, যার জীবনে বাবাকে হারিয়ে মা-ই ছিলো সব। একদিন তাপসিনা ভুল করে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেয় অন্য নম্বরে। আইটি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সজীব সেই টাকা ফেরত এনে দেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব।
বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা
ধীরে ধীরে তারা একে অপরের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে শুরু করে। সজীব যখন হতাশ হতো, তাপসিনা হতো তার অনুপ্রেরণা। সজীব একদিন তাকে বলে, “একটা স্বপ্ন আছে আমার—বাংলাদেশে ইউটিউবের মতো একটা ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম বানাবো, যেখানে মানুষ নিজেদের প্রতিভা ভাগ করে নিতে পারবে।”
দেখতে দেখতে আসে ২০২০ সাল। অবশেষে একদিন দেখা হয় তাদের। সেই দিনের আড্ডা, হাসি আর স্নিগ্ধ চাহনি—সবকিছুই তাদের দুই মনকে এক করে দেয়। ভালোবাসা জন্ম নেয় এক নিঃশব্দে।
একদিন সব শেষ হয়ে যায়…
এরপর হঠাৎ একদিন ফোন বন্ধ, ফেসবুক আইডিও আর চালু নেই। পরিচিতদের মাধ্যমে জানা যায়, তাপসিনার রক্তের দরকার। রক্ত পাওয়া গেলেও, তার অবস্থার অবনতি হয়। এরপর তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কোথায়, তা আর জানা যায় না। যে বাসায় তারা ভাড়া থাকতো, সেটিও ছেড়ে চলে যায়।
সজীব বহুবার চেষ্টা করেও তার খোঁজ পায়নি। আজও ফোন বন্ধ, আইডি নিশ্চুপ।
আজকের সজীব, অতীতের স্মৃতিতে বন্দি
আজ যখন কেউ সজীব সিকদারকে তার প্রেমিকার কথা জিজ্ঞেস করে, সে শুধু একটিই উত্তর দেয়—
"সে আর বেঁচে নেই…"
Weekmotion এর সফলতার পেছনে হয়তো এই না বলা গল্পটাই সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে কাজ করেছে। জীবনের দুঃখ, হারিয়ে ফেলা ভালোবাসা হয়তো সজীবকে বানিয়েছে আরও দৃঢ়, আরও স্বপ্নবাজ।
ভালোবাসা কখনো শুধু কাছে থাকা নয়, কখনো কখনো হারিয়ে ফেলার মধ্যেও ভালোবাসার গভীরতা লুকিয়ে থাকে।