Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -৫৪)

June 16, 2025

Boros Marika

58
View

রুমে ঢুকেই দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করলো আরিয়ান। চারপাশে নিস্তব্ধতা, কিন্তু মনের ভিতর এক দমকা ঝড়। কিছু না ভেবেই চলে গেল বাথরুমে। ঝর্ণা ছেড়ে দিলো… ঠান্ডা পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে মাথা থেকে শরীর বেয়ে।

চোখ বন্ধ করতেই—
ভেসে উঠলো হেনার মুখ, সেই চোখজোড়া… সেই মুহূর্ত… সেই কান্না মেশানো হাসি…

আরিয়ান হঠাৎই চোখ খুলে ফেললো। গা কাঁপছিল তার। শরীরের চেয়ে মন বেশি কেঁপে উঠেছিল।
তার হাত তখনো কাঁপছিল…
কারণ—
সে মনে করতে পারছিলো ঠিক সেই মুহূর্ত—
যখন নিজের হাতটা রাখতে হয়েছিল হেনার বুকের ভিতরে…
হেনার গা থেকে বের করা ছুরিটা তখনো তার হাতের স্মৃতিতে আটকে আছে।

সে দেয়ালে হাত দিয়ে ভর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। মনে হচ্ছিল—জীবনে আর কোনো মেয়ে ছিল না, তৃষা ছাড়া কাউকে কখনো কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখেনি, আর আজ…

আজকের রাতটা সব কিছু বদলে দিয়েছে।

নেশার ঘোর কেটে গেলে ধীরে ধীরে স্মৃতি ফিরে আসছিল…
আর তখনই আরিয়ানের ভেতরে শুরু হলো তীব্র কষ্টের এক অদৃশ্য আগুন।

সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিল না—
সেই রাতে, সেই মুহূর্তে—
হেনাকে সে তৃষা ভেবে…
তাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিল, আদর করেছিল, আর সব বাধা পেরিয়ে আপন করে নিয়েছিল…
তখন সে বুঝতেই পারেনি, হেনা ছিল হেনা… তৃষা নয়।

এই সত্যি গলার মধ্যে দলা পাকানো বিষের মতো গিয়ে আটকে গেল।

এক লাফে উঠে গেল আরিয়ান।
চোখে ক্রোধ আর ঘৃণার ছায়া… নিজের প্রতি।

সে দেয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে শুরু করলো নিজের হাত দিয়ে বারবার আঘাত করা—
একটা, দুইটা, তিনটা…

“আমি কী করে এটা করলাম! আমি কীভাবে পারলাম!”
তার কান্না মিশে গেল আঘাতের শব্দে।

রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, কিন্তু ও থামেনি… যেন এই আঘাতই তার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত।

ওইদিকে মিস্টার আমান-এর দাদি—উত্তরাধিকার আর ঐতিহ্যের ধারক একজন দৃঢ়চেতা নারী—সবকিছু নিজের হাতে নিয়েই যেন বিয়ের ঘন্টা বাজিয়ে দিলেন।

তিনি চাইলেন, আর দাওয়াত পৌঁছে গেল শহরের সকল নামীদামি মানুষজনের কাছে।
তার চোখে ছিল গর্ব, হৃদয়ে ছিল চ্যালেঞ্জ—এই সম্পর্কটা সমাজকে জানানো চাই।

একটি কার্ড পৌঁছেছিল আরিয়ানের বাসাতেও।
সোনালি কাজের লাল রঙের কার্ড, দারুণ জৌলুসে ভরা, যেন কার্ড নয়, এক নিঃশব্দ ধাক্কা।

কিন্তু—

আরিয়ানের বাবা-মা সেটা লুকিয়ে রাখলো।
সমাজের ভদ্রতার রক্ষাকবচ টিকিয়ে রাখতেই হোক, কিংবা ছেলের হৃদয়ে আর ব্যথা না বাড়াতে—
তারা চুপ রইলো।

আরিয়ান কিছু জানে না… এখনো।
তৃষা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, গাঢ় নীল রঙা শাড়িতে যেন এক জীবন্ত কাব্য হয়ে উঠেছিল। শাড়ির কাপড়টা ছিল পাতলা মসৃণ জর্জেট, যার ওপর সূক্ষ্ম সিলভার কাজ, যা জানালার বাইরে থেকে আসা চাঁদের আলোয় হালকা ঝিকিমিকি করছিল।

তৃষার কোমল শরীরের উপর সেই শাড়ির ঢেউ যেন একেকটা নিঃশ্বাসের মতো খেলে যাচ্ছিল—কখনও কোমরে জড়িয়ে, কখনও বুকের ওপরে ঢেকে রাখা বিনয়ের মতো নেমে আসছিল।

ওর লম্বা চুলগুলো আজ খোলা, হালকা ভেজা মনে হচ্ছিল, যেন স্নান করে তাড়াতাড়ি শুকাতে দেয়নি। ঘাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া একগোছা চুল হালকা হাওয়া পেয়ে কাঁপছিল, আর সেই নড়াচড়ার মধ্যেই এক অপূর্ব আকর্ষণ তৈরি হচ্ছিল।

তৃষার ত্বক ছিল দুধে-আলতা মেশানো স্বচ্ছ, এক ঝলক দেখলেই চোখ আটকে যায়। চোখ দুটো ঘন কালো কাজলে মোড়া, ঠোঁটজোড়া হালকা লিপগ্লস-ছোঁয়া, যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে।

তার এই সৌন্দর্য নিঃশব্দ, বিনয়ী, কিন্তু একধরনের প্রভাবশালী, যা মিস্টার আমান-এর শ্বাস আটকে দিচ্ছিল। রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরুষের চোখে লজ্জা, অস্বস্তি আর অপার মুগ্ধতা একসাথে খেলে যাচ্ছিল।

তৃষা এখনো জানালার দিকে তাকিয়ে, যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে… কিন্তু জানালার বাইরের রাত যত গভীর হচ্ছে, তৃষার ভেতরের রহস্য ততটাই জটিল লাগছে।

চলবে.....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login