নিরাজ—একজন একা সময় কাটানো কলেজছাত্র, যার পুরো জীবন ফিকশন বই, কল্পবিজ্ঞান, এবং একাকিত্বের মধ্যে বন্দি। তার একমাত্র আনন্দ—পুরনো ধূলিধূসরিত লাইব্রেরি থেকে ফিকশন বই তুলে নিয়ে পড়া।
একদিন, সে এক অচেনা পুরনো বই খুঁজে পায়: "সময়-স্রোতের প্রান্তে"।
বইয়ের ভেতরে এক জায়গায় লেখা:
> "যদি রাত ১২টা ৩ মিনিটে, একা এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঠিক তিনবার নিজের নাম উল্টো করে বলো—তবে সময় পিছিয়ে যাবে, শুধু একবারের জন্য..."
নিরাজ হাসতে হাসতে সেটা করে—মনে মনে ভাবলো একটু পাগলামি না করলে জীবন কেমন ফিকে!
ঝড় ওঠে, ঘড়ির কাঁটা হঠাৎ থেমে যায়... আর চোখ খুলতেই সে দেখে সব কিছু বদলে গেছে। চারপাশে আধুনিক কিছু নেই—না মোবাইল, না গাড়ি। গাছগুলোও যেন তার চেনা নয়।
সে বুঝতে পারে, সময় তাকে পিছনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কোথায়।
এই নতুন সময়ে নিরাজের হঠাৎ দেখা হয় তামারা নামের এক মেয়ের সঙ্গে—বিচিত্রভাবে পরিচিত লাগে, যদিও কখনও দেখা হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিরাজের সঙ্গে তামারার বন্ধুত্ব গাঢ় হয়, ভালোবাসায় রূপ নেয়।
কিন্তু এখানেই ঘটে আশ্চর্য ঘটনা।
নিরাজ দেখে, এই সময়ে আরো একজন “নিরাজ” রয়েছে—হুবহু তার মতো দেখতে, কিন্তু সে সময়ের মানুষ, আর সে তামারাকে একেবারেই পছন্দ করে না। সে খুব ঠাণ্ডা, রূঢ়, অসহ্য স্বভাবের।
তবু তামারা বারবার সেই ছেলেটিকে বোঝাতে চেষ্টা করে—
> “তুমি একসময় আমাকে ভালোবেসেছিলে… তুমি পাল্টে গেলে কেন?”
কিন্তু সে ছেলেটা পাল্টায় না।
এই সময়ের নিরাজ (পুরানো সময়ের) কখনোই জানে না, তার ভবিষ্যতের সংস্করণ এসেছে অতীতে।
তামারা বুঝতেও পারে না, কাকে সে ভালোবেসেছিল।
বইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, টাইম ট্রাভেল একবারই করা যায়।
নিরাজ বাধ্য হয়ে সময়ের স্রোত ভেঙে ফিরে আসে বর্তমান কালে—হাত-পা গুটিয়ে পড়ে থাকে, কষ্টে ডুবে, চোখে তামারার চেহারা ভাসে।
তামারা সেই সময়ে রয়ে গেছে, ভুল বোঝাবুঝিতে হারিয়ে গেছে তার ভালোবাসা।
নিরাজ ভাবে,
> “যদি এই সময়েও তামার মতো কেউ থাকে? যদি আমি তাকে ভালোবাসি, তবে হয়ত সময়ের অন্য আমি তাকে ঠিকঠাক ভালোবাসবে।”
সে শহরের আনাচে কানাচে খুঁজে বেড়ায়—চোখে একটাই ছবি, তামার।
একদিন ক্লান্ত, ভেজা দৃষ্টিতে রাস্তার ধারে বসে থাকে। হঠাৎ মেঘলা বৃষ্টি নামে—
ঝাপসা চোখে দেখে, একটা মেয়ে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টিতে একাকী।
চেহারা... একেবারে তামার মতো!
নিরাজ ছুটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়ায়। মেয়েটার নাম তাইরা।
তারা বন্ধু হয়, গল্প হয়, সময় কাটে।
তাইরা ধীরে ধীরে নিরাজকে ভালোবেসে ফেলে।
কিন্তু নিরাজ ভাবে—
> “চেহারা এক, কিন্তু চিন্তা তো এক নয়... এই মেয়েটা সেই তামারা নয়। যে ভালোবাসা আমি খুঁজছি, সেটা তাইরার ভেতর নেই।”
আর ঠিক একইভাবে,
তামারাও বুঝতে পারে—নিরাজের ভেতর যে চিন্তা, অনুভব, গভীরতা খুঁজছিল সে... তা নেই।
তামারা জানে না, কেউ সময় ভেঙে তাকে ভালোবেসে গিয়েছিল।
নিরাজ জানে, সেই ভালোবাসা কখনও প্রকাশ পায়নি।
চারটা জীবন, দুইটা সময়, একটাই অপূর্ণতা।
একটা ভালোবাসা জন্ম নিয়েও শেষ হয়নি।
> "ভালোবাসা কখনও কখনও সময় পেরিয়ে আসে না... থেকে যায়, সময়ের বাইরে—চিরদিনের জন্য, একদিনের মতো।"