সন্ধ্যা নামতেই গ্রামটা এক অন্যরকম সাজে সেজে ওঠে। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগমুহূর্তে একটা কোমল আলো ছড়িয়ে দেয়, যেন প্রকৃতি নিজেই ভালোবাসার গান গাইছে। এই গ্রামেই থাকে অনুরাধা, গ্রামের স্কুলের এক ছাত্রী। তার চোখে ছিল হাজারো স্বপ্ন, আর মনটা ছিল একটুখানি সাহসী, একটুখানি ঘরোয়া।
অন্যদিকে ছিল অর্ণব। শহর থেকে এসেছিল গ্রামে তার ঠাকুরদার সাথে কিছুদিন থাকার জন্য। পড়াশোনায় খুব ভালো, কিন্তু মনটা কেমন জানি চুপচাপ। ওর কাছে শহরের ব্যস্ততা থেকেও এই গ্রামের শান্ত সন্ধ্যাই বেশি আপন মনে হতো।
একদিন পুকুরপাড়ে বই পড়ছিল অনুরাধা। হঠাৎ হাওয়ায় ওর খোলা খাতা উড়ে গিয়ে পড়ল অর্ণবের পায়ের কাছে। খাতা তুলে দিয়ে অর্ণব মৃদু হাসলো, বলল,
— "তোমার কবিতাগুলো খুব সুন্দর। তুমি কি নিজেই লেখো?"
অনুরাধা একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল,
— "হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে কখনো পড়তে পারো।"
এই একটি কথায় শুরু হলো তাদের বন্ধুত্ব, ধীরে ধীরে গড়ে উঠল এক অনুচ্চারিত প্রেম।
পুকুরপাড়ে বসে কবিতা পড়া, হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া, বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজে যাওয়া— সবকিছু যেন ছিল এক একটি প্রেমের পৃষ্ঠা।
কিন্তু সুখের গল্পে বাঁধা আসবেই। শহরে ফেরার সময় এসে গেল অর্ণবের। বিদায়ের আগে অনুরাধাকে বলল,
— "আমি ফিরে আসব, তুমি কি অপেক্ষা করবে?"
অনুরাধা হেসে বলল,
— "প্রতিটি সন্ধ্যায় তোমার নামে একটি কবিতা লিখে রাখব। তুমি না ফিরলে, আমার কবিতাগুলোর মানে থাকবে না।"
অর্ণব ফিরে গেল। অনেক বছর কেটে গেল।
একদিন এক অনুষ্ঠানে, একটি নামী কবি পরিচিত হল "অনুরাগিনী" নামে। তার কবিতায় শুধু অর্ণবের ছায়া। সেই অনুষ্ঠানে, এক অচেনা দর্শক হাতে এক পুরনো খাতা নিয়ে অনুরাধার সামনে এসে দাঁড়াল।
— "তুমি কি এখনো কবিতা লেখো আমার জন্য?"
অনুরাধা চোখ তুলে তাকাল, অর্ণব।
তারপর শুধু চোখে চোখ রেখে কিছু না বলেও দুই হৃদয় আবার জড়িয়ে গেল এক বন্ধনে।