এই আলোচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিহাসের এক জটিল ও সংবেদনশীল অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামি ইতিহাসে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় হলেও সময়ের সাথে সাথে তা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিয়া গোষ্ঠীর হাতে সুন্নি সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের কিছু উদাহরণ ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য, তবে এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি বুঝে নেওয়া জরুরি।
🔹 ইতিহাসের প্রেক্ষাপট:
শিয়ারা মুসলিম উম্মাহর একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলেও কিছু সময় ও অঞ্চলভেদে তারা শাসনক্ষমতায় ছিল এবং সেই সময় সুন্নিদের উপর দমন-পীড়নের কিছু প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়।
🔸 উল্লেখযোগ্য কিছু ইতিহাস:
1. ফাতিমি খেলাফত (৯০৯–১১৭১ খ্রি., মিসর ও উত্তর আফ্রিকা):
ফাতিমিরা ছিল ইসমাইলি শিয়া মতবাদের অনুসারী। তারা সুন্নি মুসলিমদের উপর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দমন-পীড়ন চালিয়েছিল।
সুন্নি মাযহাবের প্রসার বন্ধ করা, সুন্নি আলেমদের নির্বাসন ও নিপীড়ন — এসব ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষত, খলিফা আল-হাকিম বিই আমরিল্লাহ অনেক সুন্নি আলেমকে নির্যাতন করেন।
2. সফাবি সাম্রাজ্য (১৫০১–১৭৩৬ খ্রি., ইরান):
শাহ ইসমাইল প্রথম যখন ইরানে শিয়া দ্বীন (দ্বাদশ ইমামীয়) জোরপূর্বক প্রবর্তন করেন, তখন সুন্নি মুসলমানদের ব্যাপক দমন-পীড়ন করা হয়।
সুন্নি আলেমদের হত্যা, বই পোড়ানো এবং সুন্নি মসজিদ ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে।
হাজার হাজার সুন্নি পরিবার ইরান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।
3. আধুনিক সিরিয়া ও ইরাক (আসাদ সরকার ও অন্যান্য):
আধুনিক সিরিয়ার বাথ পার্টি সরকারের অধীনে (বিশেষত হাফেজ আল-আসাদ ও বাশার আল-আসাদ — যারা আলাউই শিয়া মতের অনুসারী), সুন্নি জনগণের উপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
১৯৮২ সালে হামা গণহত্যাতে প্রায় ২০,০০০ সুন্নি মুসলমানকে হত্যা করা হয়। যদিও এটি রাজনৈতিক বিদ্রোহ দমন ছিল, তবে সুন্নিদের উপর ব্যাপক নিপীড়ন ঘটে।
🔹 তবে মনে রাখতে হবে:
সুন্নি ও শিয়া উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিহাসে ভুল-বোঝাবুঝি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
ইসলামের মূল শিক্ষা এসব অন্যায়ের পক্ষে নয় — বরং শান্তি, সহনশীলতা ও ন্যায়ের পক্ষে।
🔸 মূল্যায়ন:
ইতিহাসে কিছু সময় ও পরিস্থিতিতে শিয়া শাসকেরা সুন্নিদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে—এ কথা সত্য। তবে ঠিক তেমনিভাবে, সুন্নি শাসকদের হাতেও বহু সময় শিয়ারা নির্যাতিত হয়েছে। এসব ঘটনার মূল কারণ প্রায়শই রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সামরিক সংঘাত এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা, যা প্রকৃত ইসলামী ন্যায়বিচার ও সহনশীলতার চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
প্রয়োজনে আমি নির্দিষ্ট সময়ের আরও বিস্তারিত তথ্য বা নির্ভরযোগ্য সূত্রসহ তথ্য সরবরাহ করতে পারি।