Posts

বিশ্ব সাহিত্য

শিয়া-সুন্নি সম্পর্ক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ-পার্ট ০২

June 20, 2025

MAHAFUJ

205
View

অবশ্যই………………।
শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের ইতিহাস ও বর্তমান সংকট গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি।

🔍 শিয়া-সুন্নি সম্পর্ক: ইতিহাস ও বর্তমান সংকট

📜 ১. সম্পর্কের ইতিহাস: কিভাবে শুরু হলো বিভাজন?

✦ নবী করিম (সা.)-এর ওফাত (১১ হিজরি / ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ)

রাসুলুল্লাহ (সা.) কারো নাম উল্লেখ করে পরবর্তী নেতা নিযুক্ত করেননি — এটাই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক।

সুন্নিরা বলেন, সাহাবারা পরামর্শ করে আবু বকর (রা.)-কে খলিফা নির্বাচিত করেন।

শিয়ারা বলেন, রাসুল (সা.) ‘গাদিরে খুম’ এ আলী (আ.)-কে নেতৃত্বের জন্য নিযুক্ত করেন।

✦ খিলাফতের চার ধাপ (খুলাফায়ে রাশেদিন)

আবু বকর (সুন্নি মতে বৈধ, শিয়া মতে বিতর্কিত)

ওমর (শিয়ারা সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে দেখেন)

উসমান (শিয়ারা অনেক দিক থেকে বিরোধিতা করেন)

আলী (উভয়পক্ষের সম্মানিত, তবে শিয়াদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)

✦ কারবালা ট্র্যাজেডি (৬১ হিজরি / ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ)

ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত শিয়া-সুন্নি বিভেদের গভীরতম ক্ষত।

শিয়ারা কারবালাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও শহীদত্মার প্রতীক মনে করেন।

সুন্নিরাও হুসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন, তবে মাতম ও আনুষ্ঠানিক শোকাভিযান চালান না।

⚖️ ২. ফিকহ ও তাফসিরে পার্থক্য

বিষয়সুন্নিশিয়া
ইমামতনির্বাচনযোগ্যআল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত (ইলাহি নিয়োগ)
ফিকহহানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলিজাফরি (ইমাম জাফর সাদিকের ফিকহ)
তাকলিদ (অনুসরণ)মুজতাহিদের অনুসরণ সীমিতমুজতাহিদের তাকলিদ বাধ্যতামূলক
তাসবিহ ও সালাতছয় বার তাকবীর, বুকের উপর হাততিন বার তাকবীর, হাত খোলা থাকে
রোজা ও ঈদচাঁদ দেখার পদ্ধতিতে পার্থক্যআলাদা চাঁদ দেখা, কখনো আলাদা ঈদ

⚔️ ৩. রাজনৈতিক সংঘাত ও নির্যাতনের ইতিহাস

✦ মধ্যযুগ:

আব্বাসীয় ও উমাইয়া খেলাফতের সময় শিয়াদের উপর রাজনৈতিক ও সামরিক দমন-পীড়ন হয়।

✦ আধুনিক যুগে:

অঞ্চলসংকট / নির্যাতন
ইরাকশিয়ারা সাদ্দাম হোসাইনের আমলে দমন পেয়েছে; আমেরিকা-পরবর্তী যুগে সুন্নিরা পেছনে পড়ে
বাহরাইনশিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু সুন্নি রাজতন্ত্রের অধীনে বঞ্চিত
পাকিস্তানসন্ত্রাসী হামলায় শিয়া তাবাররা ও মজলিস লক্ষ্যবস্তু
সিরিয়াশিয়া-আলাওয়ি বাশার আল-আসাদ সরকার বনাম সুন্নি বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধ
ইয়েমেনহুতি শিয়ারা বনাম সৌদি-সমর্থিত সুন্নি গোষ্ঠী
আফগানিস্তানতালেবান শাসনে হাজারা (শিয়া সম্প্রদায়) বারবার নির্যাতিত

✦ আইএস (Islamic State):

আইএস সুন্নি চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে, যারা শিয়াদের রাফেজি (অবিশ্বাসী) বলে কুফরি ফতোয়া দেয়।

ইরাক, সিরিয়া, ও আফগানিস্তানে বহু শিয়া মসজিদ, মাজার, মজলিসে আত্মঘাতী হামলা চালায়।

🌐 ৪. বর্তমান সম্পর্ক ও চ্যালেঞ্জ

✦ ইরান বনাম সৌদি আরব — আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা

ইরান: শিয়া রাষ্ট্র, হিজবুল্লাহ, হুতি, বাশার আল আসাদ ইত্যাদিকে সমর্থন করে

সৌদি আরব: সুন্নি নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্ব পরিচালনার অভিপ্রায়; ইসলামি সম্মেলন সংগঠনগুলির নেতৃত্বে

✦ মুসলিম দুনিয়ার সংকট:

এই বিভাজন মুসলিম ঐক্যকে বারবার দুর্বল করেছে।

সাধারণ মানুষকেও দ্বিধাবিভক্ত করেছে, যেখানে প্রকৃত সমস্যা (শিক্ষা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি) উপেক্ষিত।

☪️ ৫. সমাধানের পথ

পদক্ষেপব্যাখ্যা
পারস্পরিক শ্রদ্ধাইতিহাসের বিতর্কে না গিয়ে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে ঐক্য তৈরি
আন্তমধ্যম সংলাপওলামাদের নেতৃত্বে মতবিনিময় সভা ও ইজতেমা
রাজনীতি থেকে দূরে ধর্মধর্মীয় মতবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ
শিক্ষা ও সচেতনতাতরুণ প্রজন্মকে ঐতিহাসিক সত্য এবং সহনশীলতা শেখানো
ধর্মীয় সহনশীলতা‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’ নীতিতে সমাজ গঠন

🔚 উপসংহার:

শিয়া-সুন্নি বিভাজন ইসলামের ইতিহাসের গভীর একটি অধ্যায়, কিন্তু এই বিভাজন ইসলামি ঐক্যের পরিপন্থী নয় — বরং ইসলাম সব মতের মধ্যে সহনশীলতা, ইখলাস ও শান্তির বাণী প্রচার করে।
নবী করিম (সা.)-এর উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো একে অপরের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রেখে সামষ্টিক কল্যাণে কাজ করা।

Comments

    Please login to post comment. Login