**অপ্রকাশিত ভালোবাসা
ছোট্ট শহরে এক কোণে ছিল আরিফের বইয়ের দোকান। পুরোনো বইয়ের গন্ধ আর কাঠের তাকের মাঝে আরিফের জগৎ। প্রতিদিন সকালে দোকান খুলে সে বই সাজাতো, আর বিকেলে চায়ের কাপ হাতে জানালার পাশে বসে রাস্তার মানুষ দেখতো। তবে তার চোখ থামতো একটি মুখের ওপর—মায়ার।
মায়া ছিল শহরের কলেজের ছাত্রী। প্রতি বিকেলে সে আরিফের দোকানে আসতো। কখনো কবিতার বই, কখনো উপন্যাস। বই বাছতে বাছতে তার সঙ্গে আরিফের ছোট ছোট কথা হতো। মায়ার হাসি আরিফের মনে ঢেউ তুলতো, কিন্তু সে কখনো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি। তার ভালোবাসা ছিল নীরব, অপ্রকাশিত।
একদিন মায়া এসে বললো, “আরিফ ভাই, কোনো বই আছে যেটা না বলা কথাগুলো বোঝায়?” আরিফ হেসে বললো, “কবিতার বই ছাড়া আর কী হবে? এই নাও, রবীন্দ্রনাথের একটা সংকলন।” মায়া বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো। আরিফ লক্ষ্য করলো, মায়ার চোখে একটা অদ্ভুত চাউনি, যেন সে বইয়ের পাতায় নিজের মনের কথা খুঁজছে।
দিন গেল, মায়া আসা বন্ধ করে দিল। আরিফের মন ছটফট করতে লাগলো। সে জানতো না মায়ার বাড়িতে তার বিয়ের কথা চলছে। একদিন সাহস করে মায়ার বন্ধুর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানলো, মায়া শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আরিফের মন ভেঙে গেল। সে রাতভর বসে একটা চিঠি লিখলো। তার সব অনুভূতি, না বলা কথাগুলো ঢেলে দিল কাগজে। কিন্তু চিঠিটা পাঠানোর সাহস হলো না।
বছর কয়েক পরে, এক বৃষ্টির বিকেলে মায়া আবার দোকানে এলো। আরিফের হৃৎপিণ্ড থমকে গেল। মায়া বললো, “আরিফ ভাই, আমি বিয়ের পর শহরে ফিরেছি। আপনার বইয়ের দোকানটা ঠিক আগের মতোই আছে।” আরিফ হাসলো, কিন্তু তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন খালি। মায়া একটা বই কিনে চলে গেল। আরিফ সেই চিঠিটা বের করে দেখলো, যেটা এখনো তার ড্রয়ারে পড়ে আছে।
আরিফ জানতো, কিছু ভালোবাসা কখনো বলা হয় না, শুধু মনে থেকে যায়। সে আবার বই সাজাতে লাগলো, আর মনে মনে ভাবলো, “হয়তো এই অপ্রকাশিত ভালোবাসাই আমার গল্প।”
