ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা.... পর্বঃ৬
কলমেঃ জাহান- Jahan
"স্যার!! স্যার! একটু শুনুন না... প্লিজ... আমি সব শোধ করে দেব। আমি ঋণী থাকবো না, কথা দিচ্ছি স্যার!"
ঐশানির কণ্ঠে কাঁপন। চোখে জল, মুখটা বিবর্ণ। চশমার আড়ালে কষ্টটা যেন ছুঁয়ে যায় চারপাশের বাতাসকেও।
কিন্তু চারদিকে শুধু নীরবতা। অথবা বলা ভালো, ঠোঁটের কোণে ঠাট্টা মেশানো বাঁকা এক হাসি।
ইকতিদার পেছন ফিরে তাকালেন না একবারও।
আসিফের ঠোঁটে হালকা বিদ্রুপের রেখা। যেন সবটাই এক মঞ্চনাটক, আর ঐশানি একজন হাস্যকর অভিনেত্রী।
"আপনারা চাইলে আমাকে বারান্দা থেকেই ফেলে দিতে পারতেন," ঐশানির গলা জোর পেলো হঠাৎ। "তবুও এতটা অপমান— এমন করে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে চাপিয়ে— পাঠানো যেত না স্যার।"
ইকতিদার চুপ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আসিফ তার পকেট থেকে ফোন বের করল, উদাস ভঙ্গিতে স্ক্রল করতে লাগলো।
"আপনারা ভালো থাকুন। কিন্তু দয়া করে আমার একাউন্টে টাকা পাঠাবেন না আর। এতো করুণা আমি চাই না। দয়া করে, লজ্জা দেবেন না আমাকে।"
চোখের কোণে জমে থাকা জল আর ধরে রাখতে পারলো না সে। নীরবে মুছতে মুছতে দরজার দিকে পা বাড়ালো। তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন মেঝেতে ঘৃণার শব্দ তুলছিলো।
যেতে যেতে পেছনে তাকিয়ে একবার বলল—
"ভেবেছিলাম... আপনারা মানুষ। আজ বুঝলাম, কাগজের টাকা বড় হলে আত্মাটাও বিকিয়ে যায়।"
ঐশানি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে, অফিসের মধ্যে নিস্তব্ধতা ভাঙল আসিফ।
"হুহ্! যাক, আপদ বিদেয় হলো। এমন নাটকীয়তা দিন দিন সহ্য হয় না।
ইকতিদার মাথা নাড়লেন নিস্পৃহভাবে।
"বাকিটা টাকা ঠিক সময়ে পাঠিয়ে দিস ঐ একাউন্টে, না হলে আবার আসবে ঝামেলা করতে।"
আসিফ হেসে উঠলো।
"দিচ্ছি দিচ্ছি... তবে এটাও একটা দান সদকা বলেই ধরা যেতে পারে।
এমন কত টাকাই তো যায়... ইকতিদার, মানে ঐশানির হিসেব রাখে কে?"
**
দিনের আলো নিভে এলো। ঐশানি নিজের ছোট্ট ঘরে ফিরে এলো।
চুপচাপ, নিঃশব্দ। চারপাশে কেবল অন্ধকার।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক ঝলক নিজের দিকে তাকিয়ে বলল:
"তুই আজও ভেঙে পড়িসনি, ঐশানি। এটাই তোর শক্তি। তোর চোখে জল আছে, কিন্তু মন এখনো সজাগ। ওরা তো মানুষ নয়... ওরা মুখোশধারী।"
পরদিন, অফিসের করিডরে আলোচনা—
"শুনেছো ঐশানিকে কীভাবে বের করে দেওয়া হলো।
"সে তো খুব মেধাবী ছিলো, শুধু একটু সোজা কথা সোজা করে বলত, তাই অনেকের সহ্য হতো না।"
আসিফের কানে গুজব গুলো ঢুকতেই, সে বিরক্ত গলায় বললো:
"হুহ্! এসব নাটক দিয়ে কেউ কেউ সিম্প্যাথি কুড়াতে চায়। দেখি কদিন টিকে থাকে!"
একদিন হঠাৎ করেই ঐশানির কাছে একটি খাম এলো।
ভিতরে ছিল একটি চেক। বিশাল অঙ্ক।
ঐশানি চেকটা টেবিলের ওপর রাখলো।
কাগজের পিঠে কলম চালিয়ে শুধু লিখলো:
> "মানুষ করুণা দেয় পশুকে, সমানকে নয়।
যা দিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিলাম। কারণ আপনাদের দেওয়া দয়ার চেয়ে, আমার নিজের দারিদ্র ভালো।"
সে চেকটি আবার পাঠিয়ে দিলো অফিস ঠিকানায়।
**
ইকতিদার খাম খুলে দেখে চমকে গেলো।
পেছনে ঐশানির হাতে লেখা লাইনটা চোখে পড়লো বারবার।
একসময় আসিফ বলল,
"স্যার , এ মেয়ে তো রাগে আগুন!
**
বাইরের আকাশে হঠাৎ বৃষ্টি নামে।
ঐশানি জানালার ধারে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চেয়ে থাকে দূরে।
চোখে নেই কোনো অভিমান—
শুধু একরাশ নিঃসঙ্গ দীপ্তি।
ভিতরে ভেতরে সে জানে— অপমান তাকে ভেঙে দেয়নি।
বরং গড়ে তুলেছে এক শক্তিশালী নারীকে,
যার হৃদয়ে এখনো জায়গা আছে...
তবে শুধু নিজের জন্য।
( To be continued… )
---
📣 আপনার মতামত দিন
গল্পটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানান।
লাইক ও ফলো করে পাশে থাকুন যেন পরবর্তী পর্ব মিস না হয়।
🔹 #ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা
🔹 # জাহান-Jahan
🔹 ✅ ফলো করুনঃজাহান- Jahan
https://www.facebook.com/share/p/16kGUhZnny/
🔹 👥 যুক্ত হোন আমাদের গ্রুপে
@জাহানের গল্প- উপন্যাস - কবিতা সমগ্র
#followers
#everyone