সমালোচনা নিয়ে আমাদের জন্য জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গরা সেরা সেরা উক্তি লিখে গেছেন। যা বর্তমান সময়ের জন্য অনেক মূল্যবান। আজ আমি সমালোচনা নিয়ে সেই সব বাছাইকৃত উক্তি তুলে ধরবো। (১) যে তোমার সমালোচনা করে, সে তোমাকে শক্তিশালী করে। কারণ সমালোচনা তোমাকে তোমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। -ফ্রিডরিখ নিটশে। (২) সমালোচনা থেকে পালিয়ে লাভ নেই; বরং নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলো, যাতে তুমি তা গ্রহণ করতে পারো এবং সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারো। -জন স্টুয়ার্ট মিল (৩) সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু গ্রহণ করা কঠিন। যারা সমালোচনা গ্রহণ করে, তারাই জীবনে সাফল্য অর্জন করে, কারণ তারা জানে কীভাবে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। -জর্জ বার্নার্ড শ`। (৪) যে ব্যক্তি নিজের আত্মাকে জানে এবং নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, সে কখনোই সমালোচনার ভয়ে পিছু হটবে না। বরং সে সমালোচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়। -প্লেটো। (৫) সবাই আমার ভুলটাই দেখে, কেউ ভাবে না আমি কতটা চেষ্টা করি ঠিক থাকার। সমালোচনার আগে যদি একবার মনটাকে ছুঁয়ে দেখতে পারতে,তাহলে হয়তো বুঝতে, আমি কেবল বোঝার মতো একজন, বিচার করার নয়। (৬) প্রকৃত জ্ঞান সেই ব্যক্তি অর্জন করে, যে তার নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে এবং সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে।” অর্থাৎ, সমালোচনা আমাদের চিন্তার পরিসর বাড়ায় এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। -সক্রেটিস। (৭) কারো সমালোচনা করতে কিন্তু যোগ্যতা লাগে না। কিন্তু সমালোচিত হতে যোগ্যতা লাগে। (৮) যেইদিন থেকে তুমি সমলোচনা নেওয়ার মত মন মানসিকতা তৈরি করতে পারবে, সেই দিন থেকে তোমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। (৯) পাশে লোকে তোমাকে নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু করে দিবে, তখন তোমাকে বুঝে নিতে হবে তুমি সঠিক পথে আগাচ্ছো। অন্যের দোষ খোঁজা নিয়ে উক্তি- (১) অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলার আগে নিজের আত্মাকে পরীক্ষা করো। কারণ তোমার নিজের ভুলগুলো বুঝলে, তুমি অন্যের ভুলে মনোযোগ দেবে না। -সক্রেটিস। (২) অন্যের দোষ না খোঁজে, নিজের দোষ নিয়ে যদি মানুষ চিন্তা করত তাহলে সমাজে এত বৈষম্য থাকতো না। (৩) তোমার মন যখন নিজের দোষ দেখার জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তুমি অন্যের দোষ খোঁজা থেকে বিরত থাকবে। -র্যাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন। (৪) অন্যের দোষ খোঁজা যত সহজ, নিজের দোষ ঢাকা তার চেয়ে কয়েক গুন কঠিন। (৫) নিজের বিবেক যখন পরিষ্কার থাকবে, তখন তুমি অন্যের ভুল নিয়ে চিন্তা করবে না। সত্যিকারের নৈতিকতা হলো নিজের ভুলগুলো ঠিক করা, অন্যের নয়। -ইমানুয়েল কান্ট। (৬) মানুষ অন্যের দোষ খোঁজে সারাদিন যেই সময় নষ্ট করে, তার অর্ধেক যদি নিজের মেধা কাজে লাগানোর কাজ করতো তাহলে সে উন্নিত উচ্চ শিখরে পৌছাতে পারতো। (৭) যারা অন্যের দোষ খুঁজে, তারা প্রায়ই নিজেদের অবহেলিত দোষগুলোকে ভুলে যায়। একজন প্রকৃত জ্ঞানী নিজেকে সংশোধন করে, অন্যকে নয়। -জ্যঁ-জ্যাক রুশো। বদনাম নিয়ে উক্তি- (১) অন্যের বদনাম তোমার উপর প্রভাব ফেলবে না যদি তুমি নিজেকে ভালোভাবে জানো এবং নিজের নৈতিকতায় স্থির থাকো। বদনাম হলো এমন একটি ছায়া, যা সত্যকে আড়াল করতে পারে না। -সক্রেটিস। (২) বদনাম এড়াতে হলে তুমি কিছুই করো না, কিছুই বলো না এবং কিছুই হও না।” অর্থাৎ সমাজে কিছু করলেই বদনাম আসতে পারে, কিন্তু তাই বলে নিজেকে থামানো উচিত নয়। -অ্যারিস্টটল। (৩) যে অন্যকে বদনাম দেয়, সে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি অন্যের বদনামে কান দেয়, সে নিজের নৈতিক স্থিতি হারায়। -কনফুসিয়াস। (৪) যে সমাজ তোমাকে বদনাম দেয়, সে হয়ত তোমার ক্ষমতা, সাহস, এবং নৈতিকতা দেখে ভয় পায়। বদনামকে নিজের উপর প্রভাবিত করতে দিও না। বরং তোমার সত্যিকারের পরিচয় দিয়েই উত্তর দাও। -ফ্রিডরিখ নিটশে। (৫) মানুষ যা বলবে তা নিয়ে চিন্তা করলে কখনো শান্তি পাবে না। বরং তুমি নিজের পথের উপর দৃঢ় থেকো এবং বদনামের ভয়ে পিছু হটবে না। -মার্কাস অরেলিয়াস। (৬) বদনাম হলো তোমার সাহসিকতার জন্য সমাজের প্রতিক্রিয়া। যারা ভয়ে গুটিয়ে থাকে, তারা কিছুই অর্জন করতে পারে না। বদনাম হলো সেই মূল্য, যা সাহসী মানুষই দেয়। -জর্জ বার্নার্ড শ। কুটনামী নিয়ে উক্তি- (১) কুটনামি একজন মানুষের আত্মার দূষণ, যা অন্যদের ক্ষতির চেয়ে নিজের মানসিক ক্ষতিই বেশি করে। -কনফুসিয়াস। (২) কুটনামি মনোভাব দিয়ে কখনো সত্যিকারের বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। (৩) যে মানুষ সত্যিকারের সৎ, সে কখনো কুটিল হতে পারে না। কুটনামি হলো দুর্বল মনের প্রতিচ্ছবি। -লাও জু। (৪) কুটনামি একটি তিক্ত ফল, যা ক্ষণিকের আনন্দ দিলেও অন্তরকে চিরকালের জন্য তিক্ত করে তোলে। -রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন। (৫) কুটনামি হলো সেই সাপ, যা অন্যকে কামড়ানোর আগে নিজেকেই বিষাক্ত করে তোলে। -ফ্রিডরিখ নিটশে। পরনিন্দা নিয়ে কিছু হাদিস- (১) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলে, আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তার গোপন দোষ প্রকাশ করবেন। -(তিরমিজি)। (২) পরনিন্দা হলো একজন মানুষের মনুষ্যত্বকে হ্রাস করে এবং তার সৎ চরিত্র নষ্ট করে। -হযরত আলী (রাঃ)। (৩) গীবত/পরনিন্দা হলো আগুনের মতো, যা একজন মানুষের ভালো কাজগুলোকে পুড়িয়ে ফেলে। -হযরত হাসান বসরি (রহ.)। (৪) নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অন্যের প্রতি কোন খারাপ কথা না বলে। -হাদিস (সহীহ বোখারি)। গীবত ও চোগলখোরী নিয়ে হাদীস- (১) নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -(সহীহ বোখারি ও সহীহ মুসলিম)। (২) যে ব্যক্তি চোগলখোরীর মাধ্যমে দুই বন্ধুর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে, তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। -হযরত হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান (রাঃ)। (৩) চোগলখোরী সেই বিষাক্ত আগুন, যা হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং সম্পর্কের সমস্ত ভালোবাসাকে পুড়িয়ে দেয়। -হযরত হাসান বসরি (রহ.)। (৪) চোগলখোর সেই ব্যক্তি, যে দুই হৃদয়ের মাঝে দেওয়াল নির্মাণ করে এবং মনের শান্তিকে ধ্বংস করে দেয়। -ইমাম গাজ্জালি (রহ.)। (৫) কোনো চোগলখোরের কথা মেনে চলো না, যে সমাজে শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং মিথ্যাচার প্রচার করে। -(সুরা ক্বলম, আয়াত ১১)। অহংকার নিয়ে ইসলামীক কিছু কথা- রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামিদের বিষয়ে খবর দেব না? তারা হলো বাতিল কথার ওপর ঝগড়াকারী, হঠকারী ও অহংকারী।
কেন মানুষ অহংকার করে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করে, যখন সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনটি বস্তু মানবের ধ্বংসের কারণ—প্রবৃত্তি বা নফসের পূজা, লোভ ও আত্ম-অহংকার। তিনি আরও বলেন, ‘অহংকারই হলো সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক। এবং তুমি তোমার মুখ মানুষের দিকে অবজ্ঞার সাথে ফিরিয়ে দিও না এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব ঘৃণ্য ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। নবী (সাঃ) বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানার সমান অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। নবী (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ পছন্দ করেন না অহংকারী, বেশি কথা বলা, অহংকারকারী, এবং যারা নিজেদের বড় মনে করে। নবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারের কারণে এক ইঞ্চি জমিও উঁচু করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে এক ইঞ্চি নিচু করে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার হৃদয়ে অণু পরিমাণ অহংকার রাখে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ- “আকাশে উঁচু হয়ে চল না এবং মাটিতে গর্বভরে হেঁটো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো অহংকারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না।” হিংসা নিয়ে ইসলামীক কিছু কথা- আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করা হলো—অহংকার কাকে বলে? তিনি বললেন, মানুষকে হেয় জ্ঞান করে।হিংসা ও অহংকার হচ্ছে সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। অহংকার ও হিংসা হলো আত্মার একটি রোগ যা মানুষকে আল্লাহর সামনে ছোট করে দেয়। হিংসা হলো সেই আগুন, যা প্রথমে অন্যকে পোড়াতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকেই ভস্ম করে ফেলে।অন্যের সুখ দেখে যে হিংসা করে, সে কখনো নিজের সুখ খুঁজে পায় না। শান্তি পেতে হলে আগে হৃদয়টা বিশুদ্ধ করো!হিংসাও অহংকার হলো জ্ঞানের অভাব, কর্মের অভাব, এবং বাস্তবতার অভাব। অহংকার এবং হিংসা হলো শয়তানের একটি বৈশিষ্ট্য যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।