আজকে ইসলামী আন্দোলনের একটা রাজনৈতিক সভা হয়েছে ঢাকায়। হিউজ গ্যাদারিং দেখলাম। ইন্টারেস্টিং হলো চরমোনাইয়ের পীরের ওই সভায় জামায়াতের উপস্থিতি ছিল। ইসলামী আন্দোলনের মতে, কম্যুনিস্ট যদি দেশ দখল করে সেখানে ইসলাম আসতেও পারে, কিন্তু জামায়াতে ইসলাম যদি কোথাও ক্ষমতাবান হয়, সেখানে কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম আসবে না। অপরদিকে জামায়াত ইসলাম চরমভাবে পীর ও মাজারবিরোধী। পীরের মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দেয়াকে ধর্মীয় কর্তব্য মনে করে ওরা। আকিদাগতভাবে চরম বিরোধী এই দুইদলের এক মঞ্চ শেয়ার করা যুগপৎভাবে বিস্ময়কর ও অভাবনীয়।
ওই মঞ্চে এনসিপি বা গণ অধিকার পরিষদের মতো ডানপন্থী দলগুলো অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করেছে দেখলাম। বিশেষকরে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠক তারা এখনো মেনে নিতে পারে নাই। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকরা এক প্ল্যাটফর্মে এসে যদি বিএনপিকে হারিয়ে দিয়ে ক্ষমতার পাদপ্রদীপে চলে আসে দেশটা কিভাবে শাসিত হতে পারে?
ক. দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর শিক্ষা, ক্ষমতায়ন, চাকরিবাকরি ও অধিকার সংকুচিত হবে।
খ. বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা উঠে গিয়ে ধর্মবিষয়ক শিক্ষার জোয়ার শুরু হবে। চারুকলা, ভাস্কর্য, সঙ্গীত, নৃত্য, থিয়েটার, ফিল্ম স্টাডিজ সবার আগে বাতিল বলে গণ্য হবে।
গ. ভিন্নধর্মের মানুষেরা স্বাধীন সত্তা নিয়ে বাঁচতে পারবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠের যেমনখুশি ইচ্ছাটা তাদেরকে মানতে বাধ্য করা হবে।
ঘ. বৈশ্বিক সংযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।
ঙ. লোকদেখানো ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শাসন ক্ষমতায় যেতে চায় তারা। কিন্তু তাদের দুর্মর অভীষ্ট লক্ষ্য হলো সৌদ বা খোমেনিদের মতো আজীবনের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার খিলাফা। তাদের ভাষায় গণতন্ত্রের মতো পশ্চিমা তাগুতি রাজনীতি তাদের একেবারেই পছন্দ নয়।
এবং
চ. সর্বোপরি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিতে পাওয়া সংবিধান চিরতরে রহিত হয়ে যাবে।
স্বাধীন সত্তাবিহীন এনসিপির কী হবে, কী ফল করবে; সেটির প্রেডিকশন দিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ তাদের ডাকে সাম্প্রতিককালের বড় কোনো জমায়েত আমরা দেখিনি। এখন এইবেলা বিএনপির উচিত হবে হেফাজত-চরমোনাই-জামায়াতকে দেখিয়ে দিতে বড়ধরনের মাস প্রসেশন করা। খালি আত্মবিশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিক ময়দানের চিড়ে ভিজবে না। বরং তা কাল হতে পারে।
ফুটনোটস: লাস্ট রেজিমে বিএনপির অবর্তমানে চরমোনাই পীরের হাতকে শক্তিশালী করেছে শেখ হাসিনা। ওই সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রায় সবখানে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করত হাতপাখা। পীরদের মুখে তখন তাদের ভাষায় শেখ সাহেবের বন্দনাও শুনতাম। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়া দেয়া ওই আওয়ামী লীগকে ৫ আগস্ট হটিয়ে দিতে জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনেরও স্টেক আছে। সুতরাং ক্ষমতার ছিটেফোঁটা স্বপ্ন দেখবার অধিকার তাদের আছে। আজকের সমাবেশ ওই অধিকারে বেশ খানিকটা উত্তাপ ছড়ালো বৈকি!
লেখক: সাংবাদিক
২৮ জুন ২০২৫