গল্পের শুরুটা আজ থেকে দশ বছর আগে এমনই এক ঘোর বর্ষার সন্ধ্যায়,
আজো বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে বৃষ্টি,,,
এমনি এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় প্রথম পরিচয় হয়েছিল তিন্নির সাথে রাতুল এর,,
গাড়িটি ধীরগতিতেই চলছিল কিছু দূর যেতেই, বৃষ্টির বেগ একেবারেই কমে গেল, হঠাৎ ই বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগল, ঝিরি ঝিরি বাতাস এর সাথে বৃষ্টিস্নাত বকুল ফুলের মিষ্টি সুবাস,
আহ্ প্রকৃতি যেন আজ কি মোহনীয় সাজে সেজেছে,, রাতুল এবার গাড়িটি থামিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল, চোখ বন্ধ করতেই মনে হল কে যেন বলছে,, রাতুল সাহেব একেবারে ভিজে গেছেন গাড়িতে উঠে আসুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি,, রাতুলের চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল, মনে হচ্ছে এই তো সেদিন,,
শুধু মাঝে কেটে গেছে দশটা বছর,
হ্যাঁ সেদিন,,,,
রাতুল সেদিন সবেমাত্র টিউশন থেকে বেরিয়েছে, ছাত্র র বাসা থেকে বের হতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, মোড়ের মাথায় আসতেই ভিজে একাকার অবস্থা, প্রিয় ছাতাটিও ছেড়ে এসেছে সে আজ, প্রকৃতিও যেন তার প্রতিশোধ নিচ্ছে তাকে ছেড়ে আসার, মোড়ের মাথায় এসে দাড়িয়ে পড়ল সে, যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু বৃষ্টি ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না, একটা রিকশাও চোখে পড়ে না , অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মনে হলো, এবার পা দু'টোকেই চালিয়ে ভিজেই বাড়ি ফিরতে হবে,
কিন্তু বিপত্তি ঘটল এক যায়গায়,সে ভিজলে কোন সমস্যা নাই, সমস্যা মানিব্যাগে কয়টা টাকা আর নোকিয়া ১১০০মডেল এর সেট এই জিনিসটি ভিশন দামি, কিন্তু ভিজলে সব শেষ, মোড়ের দোকান থেকে একটা পলিতে যক্ষেরধন গুলো লো গুঁজে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেই রওনা দিল, কিছু দূর এগিয়ে যেতেই বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলো সাথে মিষ্টি একটা কন্ঠ কে যেন বলছে রাতুল সাহেব গাড়িতে উঠে আসুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি, রাতুল অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরল কারণ এই শহরে তার পরিচিত তেমন কেউ নেই তাও আবার একজন মেয়েমানুষ,
রাতুল দাঁড়িয়ে পড়তেই তার গা ঘেঁষে একটা গাড়ি এসে থেমে গেল গাড়ির গ্লাসটা খুলতেই রাতুল দেখল এক সুন্দরী রমণী হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে রাতুল সাহেব একেবারে ভিজে গেছেন গাড়িতে উঠে আসুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি, রাতুলের মাথায় কিছুই আসছে না রাতুল শুধু অপলক বৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না শুধু একটা স্নিগ্ধ দৃষ্টি তাকে যেন আকৃষ্ট করছে, মেয়েটির শান্ত কথাই রাতুলের যেন ধ্যান ভাঙ্গলো,কি হলো উঠে আসুন! উহু:আপনাকে তো আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি আমি তিন্নি আপনার ছাত্র রিফাত এর মামাতো বোন, আপনাকে দু একবার দেখেছি যখন রিফাতকে পড়াতেন কিন্তু সামনাসামনি কখনো দুজনার দেখা হয়নি, আর দেখবেনই বা কি করে আপনার দৃষ্টি তো শুধু টেবিল অব্দি আবদ্ধ থাকতো, যাইহোক উঠে আসুন একেবারে ভিজে গেছেন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি,
রাতুল আর না করলো না উঠে পড়ল গাড়িতে, এই ঘোর বর্ষায় এমন আবেদন কি আর হাতছাড়া করা যায়?
আজো বৃষ্টি হচ্ছে সেই বকুলতলা, শুধু মাঝে কেটে গেছে দশটা বছর এই দশটা বছরে কত কিছুই না পরিবর্তন হয়েছে যে রাতুলের হাতে ছিল শুধু খাতা কলম আর মাস শেষে টিউশনির কয়টা টাকা সেই রাতুলের আজ গাড়ি বাড়ি সব হয়েছে ছোট একটা কোম্পানির মালিক সে, বেঁচে থাকার জন্য আর কি চাই তবুও যেন রাতুল আজ শূন্য, এএসব ভাবতে ভাবতে আবার গাড়ি চালিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছে সে মোড়ের দিকে চোখ পড়তেই, রাতুল এর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল এ কাকে দেখছে সে, এ যে তিন্নি,,,,!
শুধু বয়সটা বেড়ে গেছে,দশ বছর আগে তিন্নি ছিল ২৩ বছরের অনন্ত যৌবনা, আর এখন মাঝ বয়সী রমনী, চোখে মুখে বিষন্নতা, কিন্তু মায়াবী ভাবটা এখনো যায়নি, যে কেউ প্রেমে পড়তে পারে, কিন্তু কি ভাবছে এসব রাতুল? তিন্নি কোথা থেকে আসবে? সে তো আর বেঁচে নেই! চোখের সামনে সেদিন সব শেষ হয়ে যেতে দেখেছে সে জানামতে তিন্নির তো কোন জমজ বোন ছিল না, তাহলে কে এই ভদ্র মহিলা?