"তন্ময়, তন্ময়, এই তন্ময়।"
"হু।"
"হু কি আবার, ওঠ, এই,তন্ময়।"
তন্ময় উঠছে না দেখে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে, চুল ধরে জোড়ে একটা ঝাকি দিলো কুহু। এই সাতসকালে, কত কষ্ট করে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বাড়ির বাইরে এসেছে কিন্তু এই মহারাজকে দেখো, নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
"ওই কে কে।"
"আরে আমি আমি, চল, ওঠ তাড়াতাড়ি ।"
"কাকি আপনি কে, এতো সকালে জানালার কাছে দাড়ায় আমার চুল ধরে টানেন কেনো? "
"গরু আমি, কুহু। "
"তুই, তুই এতো সকালে। কিরে, ভুলে গেছিস আমাদের এখনো বিয়ে হয় নি।"
"থাপ্পড় চিনো।"
"তাইলে তুমি কি এতো সকালে ঢং করতে আসছো ,কুহেলিকা।"
কুহু চমকে ওঠে নামটা শুনে। কেমন জানো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । নিজের খুব সখের নাম কুহেলিকা। এই নামটা শুধু খাতাপত্তরেই চলে। কেউ এই নামে ডাকে না। কুহু ঠিক করেছিলো ওর সখের পুরুষকে, সখের নামটা দিয়ে বলবে এই নামে ডাকবে আমায়।
"ওই, কই হরায় গেছিস।"
"বকুল ফুল কুড়াবো চল।"
"কি!"
"বের হ তাড়াতাড়ি রুম থেকে,আর একটু আস্তে কথা বল এতো চিল্লালে সবাই উঠে পড়বে। "
"এতো সকালে কেউ বকুল ফুল কুড়াতে যায়,পাঁচটাও বাজে নি।"
কুহু চুপ করে আছে। ওরা হাটতে হাটতে বাড়ির পিছনে চলে আসে। এতো সকাল সকাল একা আসতে ভয় করছিলো,তাই বাধ্য হয়ে তন্ময়কে নিয়ে আসতে হলো। এই বাড়িতে আসার পর থেকে বাড়ির পিছনের বকুল গাছটার উপর চোখ ছিলো কুহুর। কেনো জানো কাউকে ওদিকটায় যেতে দেয় না মামি। কুহুর বকুল ফুল খুব পছন্দের। রুমে অনেকগুলো রাখলে পুরো রুমটা মিষ্টি গন্ধে ভরে যায়।
"কুহু ওই ছেলেটা কে রে। "
"কোন ছেলেটা?"
"আরে তোর ডায়রির সেই চকলেট বয়।"
"কেনো, তোর জেনে কি হবে।"
"না, আসলে ভাবছি। কে এমন সেই বালক, যে আমার বৌয়ের হৃদয় হরন করলো।"
কুহু কিছু বললো না। তন্ময় কিছুটা অবাক। তন্ময়ের মুখে বউ ডাকটা একদম সহ্য হয় না কুহুর। তবে আজ।
" কুহু। "
"হুম।"
"না কিছু না। "
কুহু নুয়ে নুয়ে ফুল তুলছে,এই দৃশ্যটার মধ্যে কি এমন আছে জানে না। কিন্তু কেমন একটা মোহময়ী রুপ।
অনেক আগে একটা মুভিতে দেখা দৃশ্যের কথা মনে পড়লো তন্ময়ের। নাইকার একটা লাইন ছিলো, "ভাইয়া,আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি যদি জানতেন তাহলে ভয় পেয়ে যেতেন। এতো ভালো কি ভাবে বাসি, এই কথা ভাবতেন। " কুহুকেও তো খুবই ভালো লাগে তন্ময়ের।তন্ময়ের ভালোলাগা সম্পর্কে কুহু যদি জানতো, তাহলে কি ভয় পেয়ে যেতো। ওর মধ্যে কিছু আলাদা ব্যাপার আছে যা তন্ময়কে টানে। সেদিন আয়নার সামনে দাড়িয়ে ও নিজের সাথে নিজে কথা বলছিলো। নিজেকে খুব ভালোবাসে কুহু।যে নিজেকে এতো আগলে রাখতে জানে সে কি তন্ময়কে একটু আগলে নিতে পারবে না। তন্ময় তো পারে না নিজেকে ভালোবাসতে, কিভাবে বাসতে হয় তাও জানে না, কুহু কি একটু শিখিয়ে দিতে পারবে না।
অতি ভোরে উঠে তন্ময় বাবু ঘুমে চোখই খুলতে পারছিলো না। তাই এখন ইজি চেয়ারে মুখ হা করে ঘুমাচ্ছে। কুহুর হাসি পাচ্ছে তন্ময়কে দেখে। এভাবে কেউ ঘুমায়। কুহুর কেন জানো আজ আর অসহ্য লাগছে না।ভালো লাগছে। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল তন্ময়ের। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে কুহু। এতো কেনো ভালো লাগছে। হঠাৎ কি মনে হতে কুহু দৌড়ে চলে গেলো নিজের ঘরে। হাতে করে বকুল ফুল নিয়ে এলো।তারপর ধীরে একটা একটা করে ফুল গুজে দিতে লাগলো। একটা কদম ফুলের মতো লাগছে দেখতে তন্ময়কে।
কুহু নিজেকেই নিজেকে প্রশ্ন করে,ভালোবাসা কি এমনই, এই অনুভুতিটার মতো। নিজের মনে নিজেই বলে যায় কুহু।
ভালো বাসা এমনি এক অনুভুতি যেখানে জোরজবরদস্তি চলো না। তুমি জোর করে কাউকে ভালোবাসতে পরবে না। আর কাউকে ভালোবাসলে জোর করে দুরে থাকতেও পারবে না। নিজের মন যেনো উত্তরটা দিয়ে দিলো।
ছুটি শেষ হওয়ার আগেই চলে এলো কুহু। আর কয়েকদিন থাকলে হয়তো তন্ময়ের প্রেমেই পড়ে যেতো। মামিকে ফোন করে জানিয়ে দিলো যে এইমাত্র পৌছে গেছে।
"তন্ময়ের জ্বালায় শেষমেষ কুহু পালিয়েই গেলো। "
কুহুর মামি ওর মামার সাথে হাসতে হাসতে বলছে কথাগুলো।
" ওদের দুটোকে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয় বলো তো। "
মামা প্রথমে চুপ ছিলেন। কিন্তু এবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন।
"কি বলছো না বলছো খেয়াল আছে। কুহুর বাবা হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন। মানছি আমার ভাগনীর চলাফেরা অতি সাধারন। কিন্তু এইটাই তো সত্য। তন্ময়ের মতো অনাথ একটা ছেলের সাথে কুহুর বিয়ে, এও কি কখনো সম্ভব হতে পারে বলে তোমার মনে হয়। এসব সিনেমায়ই হয় বাস্তবে হয় না। "
মামি মুখ কালো করে বসে রইলেন। তন্ময় যে বাহিরে দাড়িয়ে সবটাই শুনেছে, বুঝতে পেরেও চুপ করে রইলেন। কথাটা পছন্দ না হলেও, সত্য। অপ্রিয় সত্য।মামির চোখ ফেটে জল আসতে চায়। এতো ভালো একটা ছেলে আজ অনাথ বলে, এই কথাগুলো শুনতে হলো।
ভার্সিটি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকবে এমন সময় কেউ একজন হাত ধরে ফেললো কুহুর। পিছন ফিরে যাকে দেখলো তাতে ভুত দেখবার মতো চমকে উঠলো কুহু।
"তুই, তুই এখানে কেনো।"
"ওমা আমার ভার্সিটি, আমি আসবো না তো কে আসবে।
ভালোই তো বউ জামাই একই ভার্সিটিতে পড়ছে প্রেম আরো গভীর হবে। "