ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা.... পর্বঃ৭.
কলমেঃ জাহান-Jahan
রাত ৮ টা।
শহরের বুক চিরে নেমে আসছে নরম বাতাস, কংক্রিটের জঙ্গলে তা যেন অলস হয়ে ঘুরছে...
বহুতলের নিচে নিঃশব্দে থামলো কালো মার্সিডিজ মে-ব্যাচ।
নিরাপত্তাকর্মী হালকা নম্রতায় বললেন—
“স্যার, ম্যাডাম আজ সারা দিন অপেক্ষায় ছিলেন। ফারহিন ম্যাডামও এসেছেন ছেলেকে নিয়ে…”
ইকতিদার এক মুহূর্ত চুপ।
মাথা তুলে তাকাল শহরের অন্ধকার আকাশের দিকে।
অফিস বিল্ডিংয়ের আলো নিভে গেছে অনেক আগেই,
কিন্তু তার হৃদয়ের ভেতর যেন এখনও কোনো জ্বলন্ত বোর্ডমিটিং চলছে।
ড্রয়িংরুম।
জায়ান নিজের খেলনার গাড়ি নিয়ে ‘ভ্রররর!’ আওয়াজ তুলে দৌড়াচ্ছে।
ঘরে একরাশ আনন্দের ঘ্রাণ।
জায়ান (উল্লাসে):
“মামু আসবে! মামুকে আমার নতুন গাড়ি দেখাবো!”
চৌধুরী সাহেব স্মৃতির গন্ধমাখা হাসিতে ডুবে—
“তোর মনে আছে, ছোটবেলায় দুধ খেতে চাইতিস না? কাঁদতে কাঁদতে মা’র কোলেই ঘুমিয়ে পড়তিস…”
আর ইকতিদার তো একগুয়ে যা বলবে তাই...
ফারহিন (হেসে):
“ ইকতিদার তখনও যেমন ছিল , এখনও তাই…”
মিসেস চৌধুরী চুপচাপ এক ট্রে ভাজাভুজি ও চা এনে রাখলেন টেবিলে।
মিসেস চৌধুরী:
“ও যত বড়ই হোক, আমার কাছে তো এখনও খোকাই। এখনই দরজায় দাঁড়িয়ে বলবে— ‘মা, একটু গরম পানি দেবে?’ ”
ঠিক তখনই কলিং বেল।
দরজার ওপাশে।
কাজের মহিলা দরজা খুলতেই…
চোখেমুখে জার্নির ক্লান্তি মাখা ইকতিদার দাঁড়িয়ে।
সিল্ক টাই এখনও গলায়, ঘামের সাথে মিশে অফিস পারফিউমের গন্ধ,
চোখজোড়া ভারী, যেন ঘুম আর ডেটলাইন একসাথে হানাদার হয়েছে।
জায়ান (খুশিতে চিৎকার):
“মামু! মামু!!”
সে ছুটে এসে এক লাফে দাঁড়ায় মামুর সামনে।
ইকতিদার (মৃদু হাসিতে):
“আয় রে মামুর জান… কিন্তু একটু ফ্রেশ হয়ে আসি, মামু আজ খুব ক্লান্ত… পরে তোমাকে কোলে নিয়ে অনেক গল্প করবো—”
জায়ান (ধমকে):
“না! এখনই কোলে নিতে হবে!”
আর কিছু না, শিশুর ভালোবাসায় কোনো পলিসি নেই।
সে হঠাৎ বসে পড়ে, কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ইকতিদার (চমকে):
“জায়ান! ওহ গড… কি হলো তোমার?”
ব্যাগ ফেলে ছুটে আসে, কোলে তুলে নেয়।
ফারহিন (চোখে আগুন):
“তুই কি এতটাই যান্ত্রিক হয়েছিস? শিশুর আবেগও বোঝিস না? মামু বলে ডাকলেও তুই তো এখন একজন কর্পোরেট বস!”
চৌধুরী সাহেব (উদ্বিগ্ন):
“মাথায় লেগেছে বুঝি?”
ফারহিন (আদরে মুখ ধরে):
“আয়, আয়... মুখটা আলোর দিকে ঘুরা তো দেখি...”
ইকতিদার শিশুটাকে বুকে চেপে ধরে।
ইকতিদার (কাঁপা গলায়):
“মাফ কর, মামুর জান… আমি তোমাকর কষ্ট দিতে চাইনি… জানো তো, মামু আজকাল একটু রোবট হয়ে গেছি। কিন্তু এই যন্ত্রের ভেতরেও একটা হৃদয় আছে—সেটা তো তোমার জন্যই বেঁচে আছে…”
ছেলেটা চোখ মুছে হালকা মাথা নাড়ায়।
ইকতিদার (হেসে):
“তোমার প্রিয় ক্যারামেল চকলেট আর খেলনার গাড়ি এখনই অর্ডার করছি… এবার খুশি?”
জায়ানের ঠোঁটে ফুটে ওঠে এক চিলতে চাঁদের হাসি।
---
রাতের নীরবতা।
ইকতিদার নিজের কক্ষে চলে আসে।
পায়ের শব্দ যেন ক্লান্ত কবিতার মতো ভারী।
বাথটাবে শরীর এলিয়ে দেয়।
ঠাণ্ডা পানির ছোঁয়ায় যেন শরীরে বয়ে যায় এক ধরণের অদৃশ্য আরাম,
যেমন কোনো বিজনেস টার্মশিটে স্বাক্ষরের ঠিক আগের মুহূর্তে অনুভূত হয়—
এক অনির্বচনীয় শীতলতা।
(মনোভাবনা)
“এই বিশ্রাম… এই নির্জনতা—আমার জন্য প্রিমিয়াম লাক্সারি। হয়তো কেউ জানেই না, বিশ্রামেরও একটা দরদাম থাকে…”
পনেরো মিনিটের নিঃশব্দে কাটে।
তারপর আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
চোখের নিচে কালি। তবু ঠোঁটে এক ব্যঙ্গ হাহা—
“বাহ, একদিকে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, আর অন্যদিকে এক শিশুর একটুখানি কাঁদা মুখে আত্মপরিচয়ের দোলা…”
রাত—ঘরে আলো জ্বলে।
ল্যাপটপ খুলে বসে ইকতিদার।
সিঙ্গাপুর অফিসের রিপোর্টে চোখ—
ইকতিদার (চোখ ছোট করে):
“শেয়ার ভ্যালু তিন পয়েন্ট কমেছে… নেক্সট রাউন্ডে আবার নতুন প্রেজেন্টেশন সাজাতে হবে। টেকওভার ইনিশিয়েট করাই হয়তো স্ট্র্যাটেজিক হবে…”
ঠিক তখনই ইন্টারকমে মায়ের কণ্ঠ—
মিসেস চৌধুরী (স্নিগ্ধ গলায়):
“বাবা, খেতে আয়। সবাই বসে আছে। তুই এলেই পরিবেশন শুরু করবো…”
ইকতিদার (একটু বিরক্ত, তবু কোমল):
“আসছি মা… এক মিনিট…”
নিজের মনে হাসে।
“ডিল, পিচ, ইনভেস্টর—সবই নিস্তব্ধ হয়ে যায় মায়ের একটি ডাক শুনলে… এই এক জায়গায় আমি এখনও সেই ছোট ছেলে।”
ডাইনিং টেবিল।
সবাই বসে। জায়ান মামুর পাশে।
ইকতিদার এক চামচ ভাত মুখে তোলে।
তার চোখে ধরা পড়ে এক ধরণের নরম আবেগ।
ইকতিদার (মনেই বলে):
“এই এক চামচ ভাত… এই এক টুকরো ভালোবাসা…
এই তো আমার আসল লাইফস্টাইল।
বাইরের দুনিয়ায় আমি হয়তো এক বিলিয়ন ডলারের কর্পোরেট দানব…
কিন্তু এই ঘরের ভেতর, আমি এখনো সেই ক্লান্ত ছেলে—
যে এখনও মা’র এক কাপ গরম পানির জন্য প্রতীক্ষায় থাকে,
আর এক শিশুর নিঃশর্ত ভালোবাসায় খুঁজে পায় নিজের আসল পরিচয়…”
( To be continued… )
📣 আপনার মতামত দিন
গল্পটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানান।
লাইক ও ফলো করে পাশে থাকুন যেন পরবর্তী পর্ব মিস না হয়।
🔹 #ভাগ্যাকাশের_ধ্রুবতারা
🔹 #Jahan-জাহান
🔹 ✅ ফলো করুন লেখক #জাহান-Jahan
https://www.facebook.com/share/p/16kGUhZnny/
🔹 👥 যুক্ত হোন আমাদের গ্রুপে
@জাহানের গল্প- উপন্যাস - কবিতা সমগ্র
#followers
#everyone