সভ্যতা গড়ে ওঠে মানুষের হাত দিয়ে,
কিন্তু ধ্বংস হয় সময়ের হাতে।
এটাই ইতিহাসের প্রথম এবং শেষ সত্য।
আমরা যারা নিজেদের “উন্নত” ভাবি,
তাদের পূর্বসূরিরা একদিন আমাদের মতোই বিশ্বাস করেছিল—
“আমরাই চূড়ান্ত,” “আমরাই কেন্দ্র।”
কিন্তু সময় — সে কাউকে কেন্দ্রে রাখে না।
সময়ের কাছে আমরা সবাই ক্ষণিক,
আর সভ্যতা — শুধু একটি চেষ্টা,
নিজেকে অমর প্রমাণ করার।
---
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
যখন আগের সভ্যতা ধ্বংস হলো, তারা কি আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করেছিল?
হয়তো না।
কারণ সভ্যতা কখনো ভাবতে পারে না—
তারও একদিন শূন্যতা হবে।
কারণ সে নিজেই নিজেকে কেন্দ্র ভেবে বসে,
সে বিশ্বাস করে:
তার ভাষা, তার ধর্ম, তার নীতি — সবই চিরন্তন।
কিন্তু ইতিহাস আমাদের শোনায় একটাই গান—
“চিরন্তন বলে কিছু নেই,
অস্তিত্ব নিজেই সময়ের ধারায় ক্ষয়ে যায়।”
---
যা আজ ‘জ্ঞান’, তা কাল হতে পারে ‘মিথ’,
যা আজ ‘আস্তিত্ব’, তা একদিন হবে ধ্বংসস্তূপে লেখা প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
একদিন কোনো ভবিষ্যতের প্রাণী, হয়তো মানব না-ও,
একটা ভাঙা ডিভাইস হাতে নিয়ে ভাববে:
"এরা কারা ছিল?"
"তাদের ঈশ্বর কে ছিল?"
"তারা কেন হারিয়ে গেল?"
---
সত্যের নির্লজ্জ রূপ এই—
মানবসভ্যতা আসলে সময়ের এক প্রহসন।
আমরা জন্মাই, দৌড়াই, গড়ে তুলি, লড়ি, মরার আগে স্মৃতির খণ্ড রেখে যাই—
আর তারপর?
আমরা হয়ে যাই ইতিহাসের শূন্য জায়গায় বসে থাকা নামহীন মুখ।
---
তবে কি আমরা অস্তিত্বহীন?
না, আমরা অস্তিত্বহীন নই,
কিন্তু আমরা অস্থায়ী অস্তিত্ব।
যে অস্তিত্বের কোনো কেন্দ্রীয়তা নেই,
যে অস্তিত্ব কেবল চেতনার প্রবাহে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে সময়ের অতলে।
---
তাই, আমাদের আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত:
"আমরা কেবল বেঁচে থাকব, নাকি টিকে থাকব?"
"আমরা কি এমন কিছু রেখে যাব,
যা শুধুই প্রযুক্তি বা পাথর নয়,
বরং একটা চিন্তার অঙ্কুর?"
---
কারণ সভ্যতা হয়তো ধ্বংস হয়,
কিন্তু চেতনা, যদি শুদ্ধ হয়, তবে
অস্তিত্বের ওপারেও একটা আলোর রেখা রেখে যায়।
---
শেষ কথা:
আজ যা আমাদের অহংকার,
কাল তা কারো জাদুঘরের কাচের নিচে শুয়ে থাকবে—
নির্বাক, নিঃশব্দ, অথচ একদিন খুব গর্বিত ছিল।
আমরা যদি সত্যিই টিকে থাকতে চাই,
তবে পাথরের দেয়াল নয়,
মানুষের অন্তর্দৃষ্টিতে লিখতে হবে আমাদের চিহ্ন।