ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা।। পর্ব : ৯
কলমে ঃ জাহান-Jahan
রাত গভীর হয়ে এসেছে। আকাশের বুক জুড়ে জোছনার ছাপ, জানালার ফাঁক দিয়ে রূপালি আলো বিছানায় ঢেলে পড়েছে। ধবধবে বিছানার চাদরের উপর সেই আলো যেন ইকতিদারের শূন্যতা ছুঁয়ে যাচ্ছে। সে চুপচাপ শুয়ে আছে, চোখ দুটি খোলা—কিন্তু সেই চোখে ঘুমের কোনো আমন্ত্রণ নেই। হৃদয়ের মধ্যে এক এলোমেলো ধোঁয়াশা—জীবন, পরিবার, প্রেম, দায়িত্ব, একাকীত্ব—সবকিছুর জটিল অঙ্ক কষছে যেন।
ঠিক তখনই ফোনটা নীরবতা ভেঙে কাঁপতে লাগল।
স্ক্রিনে ভেসে উঠল —
“Ahzab (The Joker 😜)”
ইকতিদার হেসে উঠল।
অনেকদিন পর আহযাবের ফোন।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বজ্রনিনাদের মতো গর্জন:
“এই ব্যাটা! তোকে তো মানুষ ভাবতাম! এতদিন একটা টেক্সটও না?! তুই এখন ভিআইপি নাকি রে? নাকি গ্যালাক্সির এম্বাসাডর?”
ইকতিদার হেসে উঠল, গলায় ক্লান্তির ছায়া:
“ধুর পাগল, এতদিন পর ফোন দিয়ে আবার আমাকেই ধমকাচ্ছিস?”
আহযাব থেমে গেল না, তার জিহ্বায় যেন বারুদের বারুদ:
“গালি না দিলে তো তোকে জাগানো যায় না! শুন, তুই বিয়ে করলি—আমাদের দাওয়াত দিলি না! বুঝলাম, তুই এখন বিজনেস ক্লাসে চড়িস, কিন্তু পুরনো গরিব বন্ধুর কথা ভুলে গেছিস?!"
"চুপ কর আহযাব। কবে কোন বিয়ে করলাম আমি?” — ইকতিদার হেসে ফেলল, যদিও হৃদয়ের এক কোণে ব্যথা বাজল।
আহযাব যেন নাট্যকারের রোল পেয়ে গেল, বলল:
“তাহলে কীসের এত ভাব রে ব্যাটা? আমার বিয়েতে এত মেয়ে ঘিরে ছিল তোকে—একটাকেও পছন্দ হল না? তুই কি মানুষ, না কোনো ভদ্রলোকের ছদ্মবেশে গুহাবাসী সন্ন্যাসী?"
“ভাই, আমি নিজেকেই তো ঠিক চিনতে পারছি না। মা বলে বিয়ে কর, বোন বলে পাত্রি দেখ, আর তুই বলিস শালী খুঁজে দিবি। আমার লাইফটাই যেন একটা মিশ্র ধারাবাহিক!” — হেসে বলল ইকতিদার।
আহযাব এবার কণ্ঠে একটু গাম্ভীর্য টেনে আনল:
“শোন ভাই… আমি তো তোর জন্য সেই কলেজ থেকে পারফেক্ট পাত্রী খুঁজছি। কিন্তু তুই যে নিজেই জানিস না তুই কী চাস! জীবনের প্রেমকে তুই কোর্টে পাঠিয়ে বসে আছিস! নিজেই নিজের বিরুদ্ধ মামলা চালাস!"
“আর আমি তো অপেক্ষায় বসে আছি, কবে তোকে ভায়রা ভাই ডাকব!” — বলে হো হো করে হেসে উঠল।
ইকতিদার হেসে বলল:
“আরে ওটা কলেজ লাইফের শপথ ছিল। এখন তো জীবন শিখাচ্ছে—প্রেম মানে শুধু গোলাপ না, কাঁটারও রাজনীতি থাকে!”
আহযাব এবার পুরো ট্যাঙ্ক খুলে দিল:
“তাহলে শোন—এই নতুন অধ্যায়ের প্রথম পাতায় প্রেয়সীর নাম লিখে ফেল! সময়, কালি দুটোই ফুরিয়ে যাচ্ছে। শেষে হয়তো ছালা থাকবে গাছতলায়, আম কুড়োতে পারবি না! আমার কাছে বেশ কিছু চমৎকার পাত্রী আছে— চাইলে জুম, গুগল মিট, কিংবা ওটাসআপ ডেটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি!"
"আর এখন তো ডেটিং অ্যাপে এক ক্লিকে রাশিয়ান টু নাইজেরিয়ান— সব জাত, ধর্ম, বর্ণে মিলিয়ে তোর জন্য ডিজিটাল বিবাহের সম্ভাবনা বিরাজমান!"
“তুই একটুও হাসিস না। আমার বউ তো সবসময় বলে, তোমার বন্ধুর চোখে কি টিকটিকি কামড়েছে? না কি আরশোলার স্প্রে ঢুকে গেছে?”
“বিয়েতে কত মেয়ে তোকে দেখে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে গেল—শালা আদু ভাইয়ের মতো মুখ করে থাকলি! ধুর, এতো গাধামি তো নোবেল প্রাইজ পাওয়ার মতো!”
“তবে হ্যাঁ ভাই, আমার বউয়ের নামে কিছু বলিস না। বউ মানে জানের জান, পরানের পরান, নিজের বউয়ের দুঃখ মানেই আত্মার জ্বালা!"
ইকতিদার ফুঁসে উঠল:
“শালা, রাখ ফোন! আজাইরা ফালতু বকা ঝকা!!”
আহযাব গম্ভীর কণ্ঠে বলল:
“হু। তোর তো কাজ নাই, আমার আছে। এখন যাচ্ছি বউয়ের আবদারে লাঞ্চ ডেটে। তুই তো এসব বুঝবি না—তোর জীবনে যত প্রেম, সব ফাইল ফোল্ডারে চাপা পড়ে গেছে! আরে, বিয়ের করলে দাওয়াত পাঠাস বিয়েতে ইস্ত্রী উপহার দেব —ভাবিকে বলবো, ঝামেলা করলেই যেন পাছায় সেক দেয়! হাহা!”
বলে ফোন কেটে দিল—একটা ঝাঁকুনি দিয়ে।
ইকতিদার কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকল। মুখে বিরক্তি, কিন্তু চোখের কোণে এক চিলতে হাসি।
আহযাব—পাগলটা ঠিকই তাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল।
অন্যপ্রান্তে আহযাব ফোন রেখে হাফ ছেড়ে বাঁচল।
ভিডিও কলে থাকা মিসেস চৌ হাসিমুখে তাকিয়ে বললেন:
“বুঝলে বাবা, ছেলেটাকে নিয়ে আমি চিন্তায় আছি।”
আহযাব বিনীতভাবে বলল:
“আন্টি, আপনি চিন্তা করবেন না। ছেলেটা একটু ধীর গতি টাইপের, কিন্তু টান দিলে ঠিক গন্তব্যে পৌঁছাবে।
মিসেস চৌ হেসে মাথা নাড়লেন।
“ভালো থাকো বাবা। তোমার তো আবার লাঞ্চ ব্রেক শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
“ঠিক আছে আন্টি। চিন্তা করবেন না—ইকতিদারের বিয়েতে দেখা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ!” — বলে আহযাব হাসতে হাসতে ফোন রাখলো।
( To be continued… )
📣 আপনার মতামত দিন
গল্পটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানান।
লাইক ও ফলো করে পাশে থাকুন যেন পরবর্তী পর্ব মিস না হয়।
🔹 #ভাগ্যাকাশের_ধ্রুবতারা
🔹 #জাহান-Jahan
🔹 ✅ ফলো করুন লেখক #জাহান-Jahan
https://www.facebook.com/share/p/16kGUhZnny/
🔹 👥 যুক্ত হোন আমাদের গ্রুপে
@জাহানের গল্প- উপন্যাস - কবিতা সমগ্র
#followers
#everyone