পর্ব ২: অতিরিক্ত সবকিছু, তবুও একা
ঢাকার উত্তরাঞ্চলের এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের ওপর তলার ফ্ল্যাটে বসে ছিল মেহেদী। জানালা দিয়ে দেখা যেত বিশাল বাগান, পার্কিং এরিয়া আর সেই ব্যস্ত নগরীর কোলাহল। তার হাতে ছিল নতুন আইফোন, পাশে গেমিং পিসি, পরতে তার নতুন ব্র্যান্ডের পোশাক। এই জীবন দেখে অনেকেই ঈর্ষা করে, কিন্তু মেহেদীর চোখে ছিল এক গভীর শূন্যতা।
মেহেদী ছিল দেশের একজন বড় ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে। বাবার কোম্পানি থেকে শুরু করে বড় বড় জমির মালিকানা, সবই তার ছিল। তার কাছে ছিল স্কুলের সেরা শিক্ষিকা, বিদেশ থেকে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা, আর হাজারো সুযোগ। কিন্তু তবুও সে একা।
বাবা সারাদিন অফিস আর মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকতেন, মা থাকতেন বিদেশে চিকিৎসার জন্য। সে তার ছোটবেলার বন্ধুরাও ভুলে গিয়েছে, একা পড়ে ছিল তার কক্ষে। এমনকি জন্মদিনেও আসত না কেউ।
“মেহেদী, তোমার জন্য একটা পার্টি আড়ম্বর করে দিচ্ছি,” বাবা ফোনে বলতেন, কিন্তু আসলেই আসতো না।
একদিন মেহেদী নিজেই তার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি কি সত্যিই সুখী?”
তাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না সে কী চায়, কে তার বন্ধু হতে চায়, কে তার মন খুলে কথা বলার সাথী। মেহেদীর জন্য জীবন ছিল শুধু দায়বদ্ধতা, মান সম্মান আর অতিরিক্ত ব্যস্ততা।
সে স্কুলের ক্লাসে বসে ভাবত—রাকিবের মতো মাটির ঘরের ছেলে কোথায় কেমন আছেন? সে জানত না, এ একদিন তাদের জীবন মিলবে, কিন্তু আজ তার চোখে ছিল কেবল একাকিত্ব আর শূন্যতা।
রাত যখন ঘনিয়ে আসত, মেহেদী তার জানলার আড়ালে বসে থাকত, শহরের ঝলমলে আলো আর তার নিজের নিঃসঙ্গতা নিয়ে মুখোমুখি হত।
“আমি একটা পরিবারের প্রয়োজন,” সে মনের গভীরে স্বীকার করত।
এই ছিল মেহেদীর গল্পের শুরু।