পর্ব ৩: প্রথম দেখা, দুই জগতের সংঘর্ষ
স্কুলের একটা বিশেষ প্রজেক্টে মেহেদী ও তার ক্লাসমেটরা নিম্ন আয়ের বাচ্চাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পেল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের বাস্তবতা বুঝবে, এমনটাই স্কুল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা।
এক গরম সকালে মেহেদী প্রথমবার গিয়েছিল রাকিবের স্কুলে। ছোট্ট বস্তির পথ পেরিয়ে, ধুলোমাখা রাস্তা ধরে সে পৌঁছল ক্লাসরুমে।
তবে তার উপস্থিতি সবাইকে অবাক করে দেয়। গরমের দিনে তার সাদা পোশাক, নতুন ব্যাগ ও মোবাইল ফোন সে নিয়ে হেঁটে আসছে, আর তারা সেই মাটির ধুলোয় লেপে লেগে রয়েছে।
রাকিব তখনো তার ক্লাসে ব্যস্ত, বই পড়ছিল। হঠাৎ মেহেদী প্রবেশ করল এবং বইয়ের একটি পাতা তার হাতে থেকে পড়ে গেল। রাকিব সেটি তুলতে গেলে দুজনের চোখে চোখ পড়ে।
"তুমি কি ভাবছো তুমি কোন ছেলেটা?" রাকিব কটাক্ষ করে বলল, “তুমি এত টাকা-পয়সা আছে মনে হচ্ছে, আর আমরার মত গরিবদের সাথে কেন এল?”
মেহেদী উত্তরে বলল, "আমি দেখতেই এসেছি, তোমাদের জীবন কেমন।"
তাদের মধ্যে কথা বলতে বলতে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হল। রাকিব মনে করল মেহেদী আসলে তাকে ছোট করছে, আর মেহেদী মনে করল রাকিব তাকে অপমান করছে।
তবে হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা ঘটল—এক বাচ্চা পা থেকে পড়ে আহত হলো। মেহেদী দ্রুত দৌড়ে গিয়ে সাহায্য করতে চাইল, রাকিব ও সাহায্য করল। সেই মুহূর্তে দুজনের মন ভাঙা দেয়াল কিছুটা ধসে গেল।
দুজনেই বুঝল, জীবনের কষ্ট ও সংগ্রাম এক হলেও, জীবনযাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি। কিন্তু তারা একই অনুভূতিতে বন্ধুত্বের প্রথম ছোঁয়া পেল।
"তুমি আমার বন্ধু হতে চাও?" মেহেদী কাঁপা কন্ঠে বলল।
রাকিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "যদি তুমি সত্যি বন্ধু হও, তাহলে আমি রাজি।"
এইভাবেই শুরু হল দুই ভিন্ন জগতের মেলবন্ধন।