ঝরে পড়া নক্ষত্রের কাছে ক্ষমা
রাত্রির হাড়ে হাড়ে জমে থাকা ধোঁয়ার শব্দে লিখি—প্রতিটি পঙ্ক্তি যেন বাতাসে ঝুলে থাকা ছিন্ন অঙ্গ, যার নাম তুমি অথচ অস্তিত্ব কেবল অলক্ষ্যে বয়ে যাওয়া কুহকের ন্যায়। স্মৃতির ঠোঁটে একদলা নোনতা রক্ত!
আমি এখন এক মৃত প্রহর—ঘড়ির কাঁটাগুলো ছায়া হয়ে পড়ে থাকে চোখের নিচে, সেখানে ঘুম নেই, কেবল জেগে থাকার ভান—যেমন চাঁদ জলে নামে কিন্তু ছোঁয় না পাথর। ভোর যখন আসে না, তখন আকাশ কেবল একটি অন্ধ দরজা; যার ওপাশে নক্ষত্রেরা কাঁদে—তারা জানে না কাকে খুঁজছে, তবুও ঝরে পড়ে অনর্গল। একটি অনুচ্চারিত দীর্ঘশ্বাসে গড়ে তুলি তোমার মুখের প্রতিচ্ছবি—নাক নেই, চোখ নেই, তবু চেয়ে থাকে ভেতরের দিকে এমনভাবে, যেন আমিই আয়না।
এভাবেই একদিন সমস্ত কাল যখন নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন আমার জিহ্বায় কেবল থাকবে এক বিন্দু লবণ—তোমার নাম নয়, তার স্বাদটুকু, যা থেকে আমি শিখেছিলাম—কীভাবে অভিমান হয়ে ওঠে প্রার্থনার প্রতিলিপি।
অন্তর্বর্তী অতলস্পন্দন
ক্ষণজন্মের অতলে বিরাজ করে না কোনো রেখা—শূন্যের বহুভুজে অনন্তের তলদেশে ঘুরে বেড়ায় এক অদৃশ্য রশ্মি, যা নিরীক্ষণের পরিধিকে ছিন্ন করে, এক ধ্বংসাত্মক স্থবিরতার প্রতিচ্ছবি বুনে যায়।
শব্দের অতীত অলীক, ভাষার সীমা অগ্রাহ্য—অমলিন সময়ের নির্জন প্রান্তরে আলো মলিন, অন্তর্বর্তী অতলস্পন্দনে বদ্ধ এক মৃদু নিঃস্বরণ, যা শুষ্ক মৃত্তিকায় জমে ওঠে আড়ালে। আমি নই পদচিহ্নের মধ্যস্থিত; শুধু ছায়ার পৃষ্ঠতলে গাঢ় এক ধূলিকণা, বিন্দুবিদ্ধ জলতরঙ্গের অন্তর্গত, যা দুঃখের অতলস্পর্শী মাধুর্যে ভাসমান।
আমি না কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব, না কোনো ভাষার প্রতিধ্বনি, শুধু এক অনন্ত গূঢ়ের ঘূর্ণায়মান স্রোত, যা আত্মার গভীরতম অন্তঃক্ষেত্রে স্পন্দিত হয়, নিঃসঙ্গতা ও সমগ্রতার এক অভেদ্য জ্যোতি হয়ে।