Posts

গল্প

জনৈক ওসি হারুন এবং একজন চান মিয়ার গল্প

May 25, 2024

Abdullah Noman

149
View
-স্যার, ও স্যার, ওঠেন; ঘুম থেকে ওঠেন।

ওসি হারুন গভীর রাতে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। ঘরে লাল রঙের একটা ডিম লাইট জ্বলছে। তিনি সেই ডিম লাইটের আলোয় দেখলেন, বিছানার পাশে রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারটাতে একটা লোক বসে আছে। লাল আলোতেও লোকটাকে তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন। লোকটার ডান হাত অস্বাভাবিক রকম চিকন। বাম হাতটাও অস্বাভাবিক; একটু বাঁকানো আর লম্বা। পরনে একটা হলুদ রঙের গেঞ্জি আর একটা স্টাইপআলা হাফপ্যান্ট।

ওসি হারুনকে জেগে উঠতে দেখে লোকটা আবার কথা বলে ওঠে,
-স্যার, আর কত ঘুমাবেন। এইবার ওঠেন, আপনার সাথে একটু কথা ছিল; প্রাইভেট কথা।

ওসি হারুন হতভম্ভ হয়ে লোকটার দিকে তাকালেন। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, লোকটা এই গভীর রাতে তার শোবার ঘরে এলো কী করে! তিনি একটা ঢোক গিলে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন; কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। তিনি অনুভব করলেন যে, তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।

লোকটা এবার উঠে দাঁড়াল; বাম হাত দিয়ে বিছানার পাশে রাখা সাইড টেবিলের ওপর থেকে পানিভর্তি গ্লাসটা নিল। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে পানি ফেলতে ফেলতে গ্লাসটা ওসি হারুনের দিকে এগিয়ে দিল; বলল,
-স্যার, পানি খান।

ওসি হারুন গ্লাসটা নিয়ে এক নিশ্বাসে পানিটুকু খেয়ে ফেললেন। তারপর বললেন,
-তুমি? তুমি এই ঘরে এলে কী করে?
-স্যার, আমারে চিনতে পেরেছেন তো? আমি চান মিয়া।
-চান মিয়া? কোন চান মিয়া? আমি কোনো চান মিয়ারে চিনি না।

 লোকটা ওসি সাহেবের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিল।
-স্যার, এত তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলেন। গত সপ্তাহেই না আপনি আমাকে ধরলেন? মনে নাই? আমার মাজায় একটা লাথি দিয়ে বললেন, ‘হারামজাদা, পুলিশের ওপর হামলা করিস; তোর সাহস তো কম না।’
আপনার মার খেয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘স্যার, আমি ফকির মানুষ, তার ওপর আমার ডান হাতে শক্তি নাই আর বাম হাত বাঁকা। স্যার, আমি পুলিশের ওপর হামলা করব কী করে?’
আপনি আমার কথা শুনে আরও রেগে গেলেন; বললেন, ‘শুয়োরের বাচ্চা, মুখে মুখে তর্ক করিস!’ এই কথা বলেই আমার মাজায় আরেকটা লাথি দিলেন। তারপর আপনার লোকরে বললেন যে, আমারে যেন আটকে রাখে।

ওসি হারুন এবার চান মিয়াকে চিনতে পারলেন। সাথে সাথে তিনি বুঝতে পারলেন যে, তিনি আসলে স্বপ্ন দেখছেন। চান মিয়ার তো এই গভীর রাতে তার শোবার ঘরে আসার কথা না। তাছাড়া চান মিয়ার গায়ে হলুদ গেঞ্জি তিনি ডিম লাইটের লাল আলোতে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন; স্বপ্ন না হলে লাল আলোতে চান মিয়ার গেঞ্জির রং হতো কালো। যেদিন চান মিয়াকে ধরেছিলেন সেদিন তার পরনে ছিল হলুদ গেঞ্জি; এ কারণেই স্বপ্নের মধ্যে চান মিয়ার হলুদ গেঞ্জি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন।

মনে মনে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর পরও ওসি সাহেব নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারলেন না। স্বপ্নের মধ্যেই চিৎকার করে উঠলেন,
-হারামজাদা, আমারে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবি না? আমার স্বপ্নের মধ্যেও তোর জ্বালাতন করা লাগবে?
-স্যার, গালি দিয়ে লাভ নাই। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। তারপরও আপনি আমাকে ধরে আটকে রেখেছেন। এখন আমি তার প্রতিশোধ নেব। আমার এই চিকন হাতটা দেখছেন না; এইটা দিয়ে আপনারে দুইটা থাপ্পর মারব। তারপর আমার এই খোঁড়া পা দিয়ে আপনার পেছনে একটা লাত্থি দেব।

চান মিয়ার কথা শুনে ওসি হারুনের রাগ আরও বেড়ে গেল। তিনি হাতের কাছে থাকা তার দামি মোবাইলটা চান মিয়ার দিকে ছুড়ে মারলেন। কিন্তু মোবাইলটা চান মিয়ার গায়ে লাগল না, তার শরীরের ভেতর দিয়ে চলে গেল; পিছনের দেয়ালে লেগে মোবাইলটা ভেঙে যেতে দেখে ওসি সাহেব নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারলেন না। এই প্রথম তার একটু ভয় ভয় লাগতে শুরু করে। তিনি মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, ‘সব মিথ্যে, আমি স্বপ্ন দেখছি, ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।’ তার বিড়বিড় করা দেখে চান মিয়া হো হো করে হেসে উঠল। তারপর বাঁকা বাম হাতটা দিয়ে চিকন ডান হাতটা তুলে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ওসি  সাহেব পাগলের মতো চান মিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

পরিশিষ্ট: পরদিন দুপুরে বদ্ধ ঘরে ওসি হারুনের লাশ পাওয়া যায়; সারা ঘরজুড়ে ভাংচুরের চিহ্ন। রহস্যের সমাধানে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য পুলিশ সুপার ৩ সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সংবাদপত্র মারফত জানা গেছে এখনও তদন্ত চলছে।

Comments

    Please login to post comment. Login