Posts

চিন্তা

মবোক্রেসি ও বিপ্লবের বয়ান!

July 4, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

81
View

মবোক্রেসির চূড়ান্ত রূপ দেখবার আর কী কী বাকি? এখনো যেকোনো দাবি-দাওয়ায় যমুনা কিংবা শাহবাগ আটকে যায়। সর্বশেষ পটিয়ার থানা গুড়িয়ে দেয়া এবং পুলিশকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার হুমকির পরও বিপ্লবের দাবিদাররা বলতেছেন, তাদের জোরজবরদস্তিকে মব বলা যাবে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোতলকাণ্ডের পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দায়, দরদ কিংবা পালনবাদের আলাপ শুনিনি।

আজকে তিনি আবার সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব না! 
আমরাও ঢালাওভাবে তা বলি না। কিন্তু ভায়োলেন্সে যারা জড়িত তাদের নিন্দা করা ফরজ।

মিস্টার আলম বলছেন, জুলাই বিপ্লবে দেশকে আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করা মুক্তিকামী ছাত্র- জনতাকে মব বলে জুলাইকে বিষোদগার করা বন্ধ করুন।

আইনের ব্যত্যয় ঘটলে, সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটলে আইনের আশ্র‍য় নিন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জুলাই বিপ্লবের পক্ষের ছাত্র-জনতাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কিন্তু, মুজিববাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আপনাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

এর অর্থ কী? একটা সফল গণ-আন্দোলন হয়ে যাওয়ার পরও মুজিবের অনুসারীদের ঠেকাতে শীর্ষ সহিংসতা চালিয়ে নেওয়া হবে? বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সাংস্কৃতিক বদলের রাজনীতি দিয়ে মুজিববাদকে নাগরিকবাদে রূপান্তর করা যাবে না?

মাহফুজ আলম বলেন, বাংলাদেশে প্রথম 'মব' ভায়োলেন্স হইসিল বিহারি জনগোষ্ঠীর উপর। তারপরে মব হইসে ছাত্র ও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অথচ মুজিববাদবিরোধীদের উপর। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি ইন্ধনে গত ৫৩ বছর মব হইসে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর। মবের ডেফিনিশন স্ট্রেইচ করলে তথাকথিত জনতার আদালত, জনতার মঞ্চ '৯৬, ২৮শে অক্টোবর, শাহবাগ- সবই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স।

তাই তো বলি পাকিস্তানের প্রতি এত প্রেম কোথায় লুকায়িত থাকে। বিহারী জনগোষ্ঠীর উপর মব হয়েছিল, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের প্রাণহানি আপনাদের কাছে কোনো ঘটনা না, ওটা ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র? বোধের কী বিস্ময়কর অধপাত!

মাহফুজ আলম ফুটনোটে আরো বলেন,  মব মানে বিপ্লবী উদ্দেশ্যহীন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা লালন করা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী। জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য পরিস্কার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অতুল এবং তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত।

মাহফুজ আলমের শেষ লাইনগুলো বরাবরের মতো বুকিশ বয়ান। যেটি কেতাবে আছে কিন্তু কাজী সাহেবের গোয়ালে নাই। তিনি তত্ত্বগতভাবে মব আর বিপ্লবীর মাঝে স্পষ্ট মার্জিন টেনেছেন। কিন্তু মবোক্রেসি বন্ধের উপায় বাতলে দেন নাই। দেশে মবোক্রেসি না থাকলে সেনাবাহিনীকে বারবার বলতে হতো না যে, মব ভায়োলেন্স সহ্য করা হবে না।

মোদ্দাকথা এমন যেন না হয় আপনাদের দ্বারা গড়ে উঠা ভাবীকালের অধিকতর নতুন আধিপত্যবাদ হটিয়ে দিতে ভিন্নতর ডাবল স্ট্রেন্থ মবকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। ইনিয়ে-বিনিয়ে যতই তত্ত্বকথা শোনান, গেল ১১ মাসে মব ঠেকাতে পারেন নাই, কোমড় ভেঙে দেয়া পুলিশকে দাঁড়াতে দেন নাই, মিলিটারিকে সিভিল প্রশাসনে রেখে দিয়ে তাদের শৃঙ্খলা বিনষ্ট করেছেন -এটাই বাস্তব, এটাই সত্যি। সত্য বড়ই কঠিন। কিন্তু রবিঠাকুরের মতো করে আপনাদের এই কঠিনেরে ভালোবাসতে পারছি না। হ।🫵

ফারদিন ফেরদৌস 
৩ জুলাই ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login