Posts

গল্প

দুই জগত, এক প্রাণ" পর্ব- ৫

July 4, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

69
View

পর্ব ৫: একটি ঝড়, সব ওলট-পালট

বছরের শেষে একদিন রাকিবের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর, কাশি আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গেলে বলে—ফুসফুসে ইনফেকশন, ওষুধের খরচ প্রায় ১৫,০০০ টাকা।

রাকিবের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। ঘরে ভাঙা একটা চুলা ছাড়া কিছুই নেই। বাবার শরীরও ভালো না, কাজ করতে পারে না ঠিকমতো। মা'কে হাসপাতালে নিতে হলে টাকা চাই, কিন্তু কোথায় পাবে?

সে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। দোকানে কাজ নেয়—কখনো শাকসবজি কাটে, কখনো পলিথিন বহন করে, আবার কখনো রাস্তায় ঝাড়ু দেয়। সে কোনোভাবেই ভিক্ষা করে না—শুধু কাজ করে।

মেহেদী বেশ কিছুদিন রাকিবকে ক্লাসে দেখে না। ফোন নেই, ঠিকানা জানা—তাও সেই বস্তিতে গিয়ে হাজির হয় একদিন। দেখতে পায়, রাকিবের চোখে ক্লান্তি, মুখে হতাশা।

রাকিব প্রথমে লজ্জা পায়। বলে, “তুই চলে যা, তোর মতো বড়লোক ছেলেরা আমার দুঃখ বোঝে না।”

মেহেদী উত্তর দেয়, “আমি তোর বন্ধু রাকিব, আমি টাকা দিতে আসিনি, পাশে দাঁড়াতে এসেছি।”

রাকিব বোঝে না, মেহেদী কি সত্যিই বুঝতে পারে তার কষ্ট?

তবে মেহেদী ফিরে গিয়ে তার বাবার ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা চুরি করে—মায়ের ওষুধ কিনে চুপিচুপি রাকিবের দরজার নিচে রেখে আসে।

রাকিব পরদিন সকালে মা'র চোখে সুখ দেখে কাঁদে। ওষুধ দেখে সে প্রথমে সন্দেহ করলেও পরে খোঁজ নিয়ে জানে—মেহেদী করেছে।

সে রাগে আগুন হয়। গিয়ে বলে, “তুই আমার দয়ায় বাঁচাতে চাস? আমি দান চাই না!”

মেহেদী কাঁপা গলায় বলল, “তুই আমার বন্ধু, দয়া নয়। আমি শুধু চেয়েছি, তোর মা সুস্থ থাকুক। তোকে হারালে আমারও সব শেষ।”

তারা দুজনেই তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে। কারণ বন্ধুত্বের আসল অর্থ তখন তারা হৃদয় দিয়ে বোঝে।

তবে ভাগ্যের অন্ধ ঝড় তখনো থেমে থাকেনি। এই বন্ধুত্ব হয়তো আরও বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে চলেছে…

Comments

    Please login to post comment. Login