পর্ব ৬: বিচ্ছেদ ও পুনর্মিলন
বস্তির ছেলেটি রাকিব আর কোটিপতির ছেলে মেহেদী—তাদের বন্ধুত্ব এখন হয়ে উঠেছে জীবন-ভিত্তি। রাকিব প্রতিদিন সকালবেলা কাজে যায়, সন্ধ্যায় ফিরে এসে মেহেদীর দেওয়া নতুন খাতায় লেখে, আর রাতে ক্লান্ত শরীরে পড়ে থাকে মাটির ঘরের মেঝেতে। কিন্তু তার মনে শান্তি ছিল—পাশে মেহেদী ছিল বলে।
কিন্তু সবকিছু বদলে গেল এক দুপুরে।
মেহেদীর বাবা একদিন অফিস থেকে এসে হঠাৎ মেহেদীকে জিজ্ঞেস করলেন,
— “তুই রিকশাওয়ালার ছেলের সাথে কোথায় কোথায় যাচ্ছিস?”
— “বাবা, সে আমার বন্ধু,” মেহেদী গলা শক্ত করে বলল।
কিন্তু মেহেদীর বাবার মুখ কালো হয়ে গেল। তিনি ধমক দিয়ে বললেন, “তোর মত একটা বড়লোকের ছেলে একটা গরিব ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়? সমাজ কী বলবে?”
তিন দিন পরেই মেহেদীকে হঠাৎ পাঠিয়ে দেওয়া হলো মালয়েশিয়ায় তার মামার কাছে, সেখানে পড়াশোনা করার জন্য। কোনো বিদায় নেই, কোনো কথা বলার সুযোগ নেই।
মেহেদী যাওয়ার আগের রাতে খুব কাঁদল। সে রাকিবের জন্য একটা চিঠি লিখে তার দরজার ফাঁকে গুঁজে দিয়ে গেল।
চিঠিতে লেখা ছিল—
“রাকিব,
তুই ছিলি আমার জীবনের সবচেয়ে সত্যিকারের মানুষ। হয়তো আমি চলে যাচ্ছি, তবুও তুই আমার ভাই। তোর স্বপ্ন ছাড়িস না। আমি তোর অপেক্ষায় থাকব, আবার ফিরব।
— তোর বন্ধু, মেহেদী।”
রাকিব চিঠি হাতে পেয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকল। তারপর ধীরে ধীরে চোখের জল পড়ে কলমের কালি মুছে দিল।
এরপর তিন বছর কেটে গেল।
রাকিব পড়াশোনা চালিয়ে গেল, অনেক কষ্ট করে কলেজে ভর্তি হলো। বাবার যত্ন নিল, মায়ের চিকিৎসা করাল, আর নিজের স্বপ্নকে ধরে রাখল শক্ত করে।
একদিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলো।
সবাই চমকে গেল—ঢাকার সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয়েছে রাকিব হোসেন, এক বস্তির ছেলে!
সেই দিন সন্ধ্যায়, যখন সে দরজায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিল আনন্দে… ঠিক তখনই পিছন থেকে এক পরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলো,
— “তুই কি আবার কাঁদছিস, বড়লোক?”
রাকিব ঘুরে দাঁড়াল।
মেহেদী দাঁড়িয়ে আছে!
তিন বছর পর আবার চোখে চোখ।
রাকিব কিছু বলতে পারল না, শুধু বুকে জড়িয়ে ধরল বন্ধুকে।
পাশে দাঁড়িয়ে মানুষজন দেখছিল, কিন্তু তাদের কাছে সেটা ছিল কেবল দুই ছেলের দেখা, কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল দুই জগতের মিলনের মুহূর্ত।