Posts

গল্প

অদ্ভুত কবরস্থান পর্ব- ১

July 5, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

96
View

পর্ব ১: নিঃশব্দ কবরস্থান

 আগমন শহরের এক সাহসী যুবক, নাম জুনায়েদ। ভৌতিক গল্পে বিশ্বাস নেই। সে সাংবাদিকতা পড়ে, আর নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য রহস্যঘেরা জায়গায় গিয়ে ভিডিও বানায়। অনেকদিন ধরেই “নিঃশব্দ কবরস্থান” নিয়ে নানা গল্প শুনে সে ঠিক করে—এইবার ওখানে যাবে, কাহিনি খুঁজবে, আর প্রমাণ করবে—সব ভূতের গল্প বাজে।

 গ্রামের সতর্কবার্তা গ্রামে পা রাখতেই লোকেরা অস্বস্তি নিয়ে তাকায়। দোকানদার থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম সবাই বারবার একই কথা বলে—“ভাই, ভুলেও ওখানে যেও না।”

এক বৃদ্ধ এসে কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলে, “ওখানে যারা গেছে, আর ফেরেনি। যারা ফিরেছে, তারা মানুষ থাকেনি।”

জুনায়েদ হেসে বলে, “বুড়ো মানুষদের ভয় দেখে লাভ নেই। আমি রাত ১১টায় কবরস্থানে যাব।”

 রাত্রি শুরু রাতের খাওয়া সেরে, ক্যামেরা, টর্চ, মাইক্রোফোন, পাওয়ারব্যাংক আর হেডল্যাম্প নিয়ে রওনা হয় সে। কবরস্থানের দিকে এগোতেই পথ ফাঁকা হয়ে যায়। বাতাস কেমন ভারী—জমাট, যেন ঘাড়ের ওপরে বসে কেউ নিশ্বাস ফেলছে।

 কবরস্থানে প্রথম পদক্ষেপ কবরস্থানে ঢুকতেই একটা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বুকের ভেতর ঢুকে যায়। চারপাশে কুয়াশার মতো কিছু, কিন্তু স্পষ্ট নয়। কবরগুলো ছড়ানো-ছিটানো। কিছু নতুন, কিছু শত বছরের পুরনো। কিন্তু আশ্চর্য—সব কবরেই মোমবাতি জ্বলছে! কে জ্বালাল?

 অদ্ভুত আওয়াজ হঠাৎই সে শুনল মাটির নিচ থেকে ফিসফিস শব্দ, যেন কবরগুলো কথা বলছে। কেউ বলছে, "আরেকজন এলো… আরেকজন…"

ক্যামেরা অন করতেই স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে যায়। রেকর্ড বাটন নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। হেডল্যাম্প জ্বলে, নিভে, আবার জ্বলে।

 খোলা কবর একটা কবরের ঢাকনা নেই। ভেতরে তাকাতেই দেখে কঙ্কাল নেই, কিন্তু রক্তমাখা কাপড় পড়ে আছে। হঠাৎ কবরের ভেতর থেকে কালো হাত বের হয়ে তার পা ধরে ফেলে। জুনায়েদ ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরে আসে, কিন্তু সে পড়ে যায় আরেকটা কবরের ওপরে। কবরটা ফেটে যায়, মাটি ঢুকে পড়ে তার জামার ভেতর।

 ভয়াল চেহারার শিশু তার সামনে দাঁড়িয়ে এক বাচ্চা মেয়ে। তার চোখ নেই, শুধু কালো ফাঁকা গর্ত। মেয়েটি বলে, “আমার জন্য ফুল এনেছো?” তারপর হঠাৎ চিৎকার করে হেসে ওঠে। মুখ ফেটে যায়, আর ভেতর থেকে শত শত পিঁপড়ে, পোকা বের হয়ে আসে। সেগুলো ছুটে আসে জুনায়েদের মুখের দিকে। সে দৌড় দেয়।

 শেষ নেই এই কবরস্থানের সে বুঝতে পারে—যেদিকেই দৌড়াক না কেন, সে আবার একই জায়গায় ফিরে আসে। কবরস্থানের গাছগুলো নড়ছে না, কিন্তু ছায়া ঘন হয়ে আসছে। রাত গভীর হতে হতে তার হাত-পা জমে যাচ্ছে।

 শূন্য কণ্ঠ পেছন থেকে হঠাৎ কণ্ঠ ভেসে আসে, “আমরা ঘুমাই না, আমরা অপেক্ষা করি… তোদের মতো হাস্যকর সাহসীদের জন্য…” সে ঘুরে দেখে, তারই মত দেখতে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো আবেগ নেই। শুধু বলে, “তুই তো এখন আমাদের।”

 কবর ফেটে আগুন মাঝখানে এক বিরাট কবর ফেটে যায়। ভেতরে দেখা যায় লাল রঙা জ্বলন্ত শিখা। আগুনের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক প্রাণী—অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক শিয়াল। তার হাতে রক্তমাখা ঘড়ি। সে বলে, “তোর সময় শেষ।”

 শেষ ক্যামেরা রেকর্ডিং জুনায়েদ চিৎকার করে উঠে, কিন্তু শব্দ বের হয় না। ক্যামেরার লেন্সে শুধু দেখা যায় তার ফাঁকা চোখ। তার শরীরটা জমে যাচ্ছে, মাটির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

শেষে, কেবল একটাই শব্দ শোনা যায় — “আরেকজন এলো… আরেকজন…”

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login