Posts

গল্প

অদ্ভুত কবরস্থান পর্ব- ২

July 5, 2025

Fijon Qurayish

81
View

পর্ব ২: কোনোদিন সকাল হবে না

 সাদ এবং রাতের দুঃস্বপ্ন সাদ, গ্রামের এক তরুণ, ছোটবেলা থেকেই কবরস্থানের গল্প শুনে বড় হয়েছে। কিন্তু জুনায়েদের ঘটনা তার মনকে নাড়িয়ে দেয়। সে প্রতিদিন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে—একটি ফাটা কবর থেকে লম্বা হাত বের হয়ে তাকে টানছে, আর চারপাশে কবরের মাথায় আগুন জ্বলছে।

 ফিরে আসা জুনায়েদ! তৃতীয় রাতে, হঠাৎ ভোররাতে দরজায় কড়া নাড়ে কেউ। দরজা খুলে দেখে, বাইরে দাঁড়িয়ে জুনায়েদ। কিন্তু তার মুখে কোনো ভাব নেই, চোখ দুটো পুরো সাদা। সে শুধু বলে, “আমার ক্যামেরা ফিরিয়ে দাও।” সাদ ভয় পেয়ে পেছনে সরে যায়, কিন্তু জুনায়েদ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়, যেন কুয়াশার মাঝে মিলিয়ে যায়।

 অভিশপ্ত ক্যামেরা পরদিন সাদ খুঁজে পায় সেই ক্যামেরা—গ্রামের পুকুরঘাটে পড়ে আছে। সে চালাতে গেলে শুধু শোনা যায় ফিসফিস আওয়াজ, আর দেখা যায় ভয়াল সব দৃশ্য: কবর ফেটে যাচ্ছে, ছায়ামূর্তি হাঁটছে, আর কেউ একজন চিৎকার করছে—“আমার জায়গা দাও!”

 কবরস্থান ডাকে সেই রাতেই সাদ শুনতে পায় এক নারীকণ্ঠ—“তুমি এলে না কেন? তুমি আমাদের একমাত্র আশা…” সে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখতে পায়, তার বিছানায় একজোড়া কাদামাখা পা! কাদার ছাপ ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে গেছে দরজার দিকে…

 জেগে থাকা মৃত সাদ ঠিক করে, ক্যামেরার রহস্য উদঘাটন করতেই হবে। সে রাত ১২টায় কবরস্থানের দিকে পা বাড়ায়। তার পেছনে কে যেন ছায়ার মতো হাঁটছে। ঢোকার সাথে সাথে সে দেখে—সব কবরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ছায়ামূর্তি। তারা তাকিয়ে আছে তার দিকেই। একসাথে বলে উঠল, “তুমি আসছো... অবশেষে।”

 পুরনো কবর – নতুন নাম একটি কবরের ফলকে সে দেখতে পায় নিজের নাম—“সাদ বিন নাসির। মৃত্যু: আজ রাত।” তার হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে যায়। চারপাশে কবরগুলো ফেটে যেতে শুরু করে। মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে হাত, চোখ, ছেঁড়া চুল।

 জান্তব ছায়া পেছনে এক ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। মুখ নেই, শরীর কাঁদায় গড়া, আর তার হাতে আছে শিশুর কাটা পুতুলের মাথা। ছায়াটি বলল—“তুই তো কথা দিয়েছিলি… আসবি বলেছিলি… ভুলে গেলি?”

 কবরস্থানের নিচের শহর মাটি ধসে পড়ে সাদ নিচে পড়ে যায়। সে দেখে, কবরস্থানের নিচে আছে এক লাল আলোয় ভরা বিশাল ঘর, যেখানে কঙ্কালগুলো বসে আছে চেয়ার ঘিরে। তারা সবাই চিৎকার করে বলে, “আমাদের ঘর ফিরিয়ে দাও! আমরা ভুলে গেছি কিভাবে ঘুমোতে হয়!”

 সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে কোন এক অদৃশ্য ঘড়ি টিকটিক করছে। ছায়ারা বলে, “যদি ভোর হয়ে যায়, তুমি আর মানুষ থাকবি না।” সাদ দৌড় দেয়, কিন্তু তার শরীর ভারী হয়ে গেছে। তার পায়ের নিচে মাটি নয়, বরং মৃতদের হাড়।

 কবরের পেছনে জীবন এক বুড়ি, যে বহু বছর আগে মারা গেছে, তার সামনে আসে। বলে, “তুই যদি বাঁচতে চাস, তোকে কাউকে দিয়ে যেতে হবে।” সাদ চিৎকার করে: “কী দিয়ে যেতে হবে?” বুড়ি হাসে—“তোর নাম।”

 কবর ফিরে পায় নতুন নাম সাদ দৌড়ে কবরস্থানের বাইরে চলে আসে, কিন্তু এক নতুন কবরের ফলক দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেখানে খোদাই করে লেখা—“জুনায়েদ আহমেদ – ফিরে আসবে আবার।” আর নিচে—“সাদ বিন নাসির – অপেক্ষমাণ…”

তারপর… হাওয়ার মতো মিলিয়ে যায় সব। গ্রামের কুকুর রাতভর চিৎকার করে। এবং ফিসফিস আওয়াজ ভেসে আসে— “এখন আর কোনোদিন সকাল হবে না…”

Comments

    Please login to post comment. Login