Posts

উপন্যাস

তৃষ্ণার্ত_চোখ_পর্ব_২

July 5, 2025

আয়শা রায়হান

Original Author আয়শা_রায়হান

Translated by পর্ব--২

61
View

কিছু সময় পূর্বে বিয়ে সম্পুর্ণ হয় ওয়াদী আর হোমায়রার, ওয়াদী মাথা নিচু করে বসে আছে। আজ জীবনের সবচাইতে নিষ্ঠুর কাজ সে হোমায়রার সাথে কেরে ফেলেছে বাসায় কেউ হোমায়রাকে মেনে নিবে না। ওয়াদী জানে তবুও কেনো মনকে আটকাতে পারলো না। বাবা ভাই আর দূরের কিছু মানুষ নিয়ে সে বিয়েটা করেছে। বাবা এই বিয়েটা হওয়াতে নারাজ হয়েছে তা তার মুখ দেখে বুঝতে পারছে। বিয়ে ভেঙে দিতে যৌতুক দাবি করলো, জায়ানের সাহায্যে তাকেও আটকাতে চাইলো। নানা চিন্তা ভাবনা মথায় এসে ভীড় করছে।কি হবে ফাইরুজের সাথে মানবে কি সবাই, নাকি ওর জন্য মেয়েটার কষ্টে দিন কাটবে। 

ওয়াদীর ভাবনার মাঝে কারো ডাক শুনে চমকে তাকায় সে,রায়হান মিষ্টি হেসে বলে ,
—বাবা ঘরে আহো।
ওয়াদী কোনো কথা বলেনা, চুপচাপ উঠে দাড়ায় রায়হান শেখের পিছু চলে। মাঝ পথে রায়হান ডেকে উঠে ,
—এইযে হোমায়রার মা কই আছোছ, জামাইরে ঘরে নিয়া যাইতে কইছোছ নি কাউরে। 
কেয়া দূরে দাড়িয়ে বলে উঠলো,
—তুমি ঘরে যাও
ওয়াদী কিছুটা বিব্রত অবস্থায় পড়েছে, সে কি করে একা একা বউয়ের কাছে যাবে । জায়ানও বাবার সাথে বসে আছে  বলতেও পারছেনা তাকে তার বউয়ের কাছে দিয়ে আসতে।ওয়াদী মনে মনে বলে,
—দয়াকরে আমাকে একটু বউয়ের কাছে নিয়ে চল। 
ওয়াদী কি করবে একাই যাবে ঐ ঘরে, যেখানে তার সঙ্গিনী প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী বসে আছে। 
ওয়াদী ঠিক করলো সে একাই যাবে,এতো ভেবে লাভ নেই তার বউ কে কি বললো তাতে তার কি আসে যায় পা বাড়ালো ঘরের দিকে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। 
তৃষ্ণার্ত চোখে দেখলো লাল বেনারসি পরিহিত ষোড়শী কন্যাকে। যে দরজার শব্দে হতেই ডাগড় ডাগড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।


😯😯😯

কবুল বলার পড় থেকে এক জায়গায় বসে আসে হোমায়রা, বাবার সাথে অভিমান থাকলেও কান্না থামাতে পারেনি। এতো সময়ে মা দেখাই পেলোনা, ছোট ভাইটাকে আজ সারাদিন দেখেনি হোমায়রা ভাই ছাড়া সে থাকতে পারে না তাইতো কান্না আটকে রাখতে পারেনি সে। 
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই মনে হলো হয়তো মা এসেছে, কিন্তু না মা আসেনি আসলে তো কথা বলতো তার সাথে। কে আসলো দেখার জন্য চোখ তুলে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, এতো সুন্দর পুরুষ। 

ভেজা ভেজা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,এতো লাম্বা পেটানো শরীর ফর্সা গায়ের রং ঘাড় পর্যন্ত সিল্কি কালো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে এতেই কি সুন্দর লাগছে। বাজ পাখির মতো তার চোখের দৃষ্টি। খাড়া নাক চাপ দাড়ি মানিয়েছে তাকে,

কাশি শব্দ শুনে চোখ নামিয়ে নিলো হোমায়রা ছি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলো লোকটা কি ভাবছে তাকে। 
অনুভব করলো লোকটি তার পাশে বসেছে, এবার চোখ তুলে শরীরে দিকে তাকালো।হোমায়রা ভাবছে লোকটি বিয়ে করতে এসেছে কিন্তু শার্ট আর ফর্মাল পেন্ট পরে। কালো শার্ট সাদা পেন্ট বাম হাতে ঘড়ি ডান হাতে সুতোর মতো কিছু বাধা পায়ে ফর্মাল জুতা, শার্ট এখন ইন করা নেই উপরের বুতাম খোলা, হেমায়রার চোখ আটকালো ওয়াদীর ঘাড়ে বড় করে একটা কাটা দাগ দেখে। এতে যে পুরুষটির সৌন্দর্য আরো দিগুণ হয়ে গিয়েছে, চোখ নামিয়ে নিলো নিজের কাজে বেশ বিরক্ত হলো হোমায়রা,


ওয়াদী বসে একবার আরচোখে দেখলো হোমায়রাকে, তার দিকে তাকিয়ে ছিলো মেয়েটা ভেবেই বাকা হাসলো। 
ওয়াদী গলা পরিস্কার করে বললো
—ভালো আছো ফাইরুজ, 
হোমায়রার গলা কাঁপছে কথা বলতে পারছে না মনে হচ্ছে কেউ হয়তো কণ্ঠনালী রোধ করে রেখেছে। হোমায়রাকে উত্তর দিতে না দেখে ওয়াদী বললো, 
—আমার সাথে কথা বলতে চাওনা ফাইরুজ। 
হোমায়রা ধিরে ধিরে বললো,
—ভা ভালো আ আছি। 
—আমাকে জিজ্ঞেস করবেনা, 
হোমায়রা অবুঝের মতো করে বললো 
—কি জিজ্ঞেস করবো।
—আমি কেমন আছি, 
হোমায়রা লজ্জা পেলো নিজের করা বোকামিতে, ওকে লজ্জা পেতে দেখে ওয়াদী বললো,
—তোমাকে কিন্তু লজ্জা পেতে দেখে আমারও লজ্জা লাগছে ফাইরুজ, 
হোমায়রা অবাক হয়ে বললো 
—আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে না আপনি লজ্জা পাচ্ছেন। 
—কথা শুনে কি বুঝা যায় বলো, তোমার বিশ্বাস না হলে আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছি। 
হোমায়রা চোখ তুলি তাকালো ওয়াদীর দিকে, 
ওকে তাকাতে দেখে ওয়াদী হেসে দিলো। হোমায়রা বুঝলো ও কি বোকামি করেছে, লজ্জা আর অসস্তিতে দম বন্ধ লাগছে।

🥀🥀🥀🥀


ঘরে প্রবেশ করলো জায়ান বললো 
—ভাইয়া চলো বাবা অপেক্ষা করছে আমাদের বেরোতে হবে, 
—হু, রায়হান সাহেবকে বল আসতে, 
—আচ্ছা আমি বলছি। 
বলেই জায়ান চলে গেলো জায়ান এখোনো ভাবিকে দেখেনি তবে সে খুশি ভাই বিয়ে করে নিয়েছে পছন্দের মানুষকে।

রায়হান কেয়া দুজনেই আসলো একসাথে, তবে মেয়ের কাছে গেলেন না। আরচোখে একবার তাকালেন মেয়ের দিকে, হোমায়রা কি ভেবে বললো, 
—মা মেহমেদ কোথায়, আজ সারাদিন ওকে দেখিনি সারাদিনে একবারও  আমার কাছে আসলোনা কেনো। 
হটাৎ করে ওয়াদী দাড়িয়ে বললো,
—রহমান সাহেব আমাদের এখন বেড় হতে হবে, বাব অপেক্ষা করছেন। 
কেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আন্টি আপনি ফাইরুজকে নিয়ে আসেন, আমি বাহিরে যাচ্ছি। 
ওয়াদী রহমানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো, 
ওয়াদীর সাথে বেড়িয়ে পড়লেন কিছু দূর যাওয়ার পর ওয়াদী বললো,
—আমাদের বেড় হওয়ার সাথে সাথে আপনার জিনিস পেয়ে যাবেন চিন্তা করবেন না, আমি ওয়াদা ভঙ্গ করিনা। শুধু আমাকে দেয়া কথা রাখলেই হবে নয়তো যানেন কি হবে, আব্বা। 
কথা বলা শেষে বাকা হেসে চলে গেলো ওয়াদী, রহমান মাটিতে বসে পড়লেন কি হয়ে যাচ্ছে কি করবেন তিনি হাত পা বাধা তার। মেয়েটার অভিমান হয়েছে আর কথা বলবেনা তার সাথে আর দেখতে পাবেনা মেয়েকে বুকটা ফাকা ফাকা লাগছে দুজনেই তার সন্তান তাহলে কি করে করলেন এসব। ভাবতেই চোখ ভরে আসলো, উঠে দাড়িয়ে হাটতে লাগলেন 
কোথায় যাবেন জানেন না তবে মেয়েকে দেখলে আর নিজেকে সামলাতে পারবেন না।


কেয়া মেয়েকে নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো ওয়াদী দাড়িয়ে ছিলো।জায়ান পাশেই আছে ওয়াদীকে বলছে, 
—ভাই, ভাবিতো কান্না করে না নতুন বউ না বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় কান্না করে। 
জায়ানের কথার গুরুত্ব না দিয়ে বললো, 
—বাবা কোথায়। 
—তুমি যখন ভাবির বাবার সাথে কথা বলছিলে তখন বাবা সবাইকে নিয়ে চলে গিয়েছে। 
—কারো কাছে না বলেই চলে গেছেন, 
—না ভাবির বাবা মা কে বলেছেন পরেই বেড়িয়েছেন, 
—ও


😢😢😢


ওয়াদী দাড়িয়ে দেখছে লালা বেনারসি পড়া মেয়েটিকে যে আজ থেকে তার সঙ্গিনী, শরীরে কোনো গহনা নেই না আছে কোনো প্রসাধনীর ব্যবহার। চোখে কাজল পরেনি টিপ দেয়নি অথচ কি মুগ্ধতা কি মায়া যেনো চোখ সরানো দায়।

গাড়ির সামনে আসতেই হোমায়রা চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো না সে কাদবে না বাবাকে আর দেখলো না মেহমেদ আর বাসায় আসলো না মা ছাড়া কেউ নেই তার পাশে। 
চোখের পোলক ঝাপটে নিজেকে সামলে নিলো, কিছুতেই আজ কাদবে না। 
ওয়াদী দরজা খুলে দিলো বললো 
—গাড়িতে বসো ফাইরুজ, 
হোমায়রা মায়ের দিকে তাকায় মা কাঁদছে মুখে আঁচল চেপে হোমায়রা মাকে ঝাপটে ধরলো। শব্দ হীন কান্না করলো হোমায়রা চোখ থেকে পানি পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দ নেই 
—মা আমি সত্যি চলে যাবো, রেখে দাওনা তোমার কাছে আমি কি করে থাকবো মা ও মা বলোনা। 
কেয়া কথা বলছে না কান্নার দাপটে তার গলা ভেঙে আসছে 
হোমায়রা নিরব আর্তনাদ তার বুকে গিয়ে বিধছে। 
ওয়াদী হোমায়রা হাত ধরলো বললো 
—আমরা আবার আসবো, এখন চলো। 
বলেই জায়ানকে তাড়া দিলো 
—জায়ান গাড়িতে বস দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। 
জায়ান সাথে সাথে গাড়িতে বসে গেলো, হোমায়রা মাকে ছাড়তে চাইছে না কেয়া নিজেকে সামলে নিলেন মেয়েকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললেন 
—তুই যা আর কান্দন লাগবো না জামাই দাড়াইয়া আছে, গাড়িতে গিয়া বস যা। 
হোমায়রা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো, কিছু না বলেই গাড়িতে বসলো। ওয়াদী এক পলক তাকিয়ে দেখলো, আবার ঘুরে শাশুড়ীকে বললো,
—আচ্ছা আন্টি আসি তাহলে ভালো থাকবেন, আর রহমান সাহেবকে বলবেন চিন্তা না করতে ঠিক হয়ে যাবে সব কিছু। 
বলেই গাড়িতে উঠে বসলো, গাড়ি চলে যাচ্ছে দূর থেকে দাড়িয়ে  দেখলো রহমান।

হোমায়রা জানালার দিকে তাকিয়ে আছে, মনটা বিষাদে ভরে আসছে পাশে বসা মানুষটাকে এখন বিরক্ত লাগছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে টুপটাপ, হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিচ্ছে তা আবার পড়ছে। হোমায়রাকে কান্না করতে দেখে ওয়াদী বললো, 
—আজ যতো পারো কাদো না করবো না কারণ এর পর থেকে এই গ্রামে আর আসতে পারবে না কখনো।


তৃষ্ণার্ত চোখ 
আয়শা রায়হান

Comments

    Please login to post comment. Login