Posts

গল্প

《অন্তর্জাল》

July 6, 2025

taher khan

59
View

ঢাকার অন্ধকার একঘেয়ে রাতে, রিদওয়ান তার ছোট ঘরে বসে কাজ করছিলো।

তার পুরনো ল্যাপটপের স্ক্রিনে অসংখ্য কোড আর ফাইল ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

এক হাতে কফির শেষ ফোঁটা, আর হাতে পেনড্রাইভ।


 

“রাজীবের দেওয়া ফাইলটা দেখি তো,” সে মনে মনে বললো।

ফাইলের নাম — ‘do_not_open’।

নামটাই যেন আর একটু ক্লিক করলেই ঝামেলা!


 

রিদওয়ান চায় না ঝামেলা, কিন্তু কৌতূহল তাকে ঠেকাতে পারলো না।

মাউসের ক্লিকেই ফোল্ডার খুলে গেলো।


 

ফোল্ডারের ভিতরে ছিলো একটা ভিডিও ফাইল — নাম ‘cam_capture_145.mp4’।


 

ভিডিও চালু করতেই, অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ এক গাড়ির হেডলাইট জ্বলল।

ক্যামেরা একটু কাঁপছে, যেন কেউ গোপনে ক্যামেরা ধরেছে।

গাড়ির পাশে কয়েকজন অজানা মুখে লোক এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরেছে।

তার গলা ধরা হয়েছে, কেউ ছুরি ধরিয়ে দিয়েছে।


 

একজন গম্ভীর কণ্ঠ শুনালো —

“Protocol Seven active. Make sure the witness is erased.”


 

রিদওয়ানের হৃদয় দ্রুত স্পন্দন শুরু করলো।

ভিডিও শেষে ফাইলটি নিজেই লক হয়ে গেলো।

তার সামনে কম্পিউটার স্ক্রিনে এসে ভেসে উঠলো একটি মেসেজ —


 

“You saw something you shouldn’t have. They’re coming.”


 

রিদওয়ানের হাত কাঁপতে লাগলো।

তখন বাইরে, তার ঘরের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো একটা কালো গাড়ি।

অদ্ভুত এক নীরবতা চারপাশে।


 

এটাই ছিলো তার জীবনের সেই মুহূর্ত —

যেখানে সে জানতো, আর পিছনে ফিরে যাওয়ার পথ নেই।


 

রিদওয়ানের মন আজ ভীষণ অস্থির।

রাতের সেই বার্তা আর গাড়ির ছবি তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।


 

সকালে উঠতেই সে লক্ষ্য করলো —

‘do_not_open’ ফোল্ডারটা তার ল্যাপটপ থেকে হঠাৎ গায়েব!

কোথাও খুঁজে পেলো না।


 

দুপুরে বন্ধু সাজিদ এসে বললো,

“কাল রাতে তোদের বাড়ির কাছে একটা কালো গাড়ি দেখা গেছে। কেউ গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছিল।”


 

রিদওয়ান শুধু মাথা নাড়লো। সে কিছু বলতে চাইল না।


 

সন্ধ্যায়, দরজার ঘণ্টা বাজলো।

দরজা খুলতেই আয়শাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে একটু চমকে উঠলো।


 

“রিদু, আমি তোকে খুঁজছিলাম,” আয়শা বললো।

“তোর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এসেছি। আমি জানি, তোকে ঝামেলায় ফেলা হচ্ছে।”


 

রিদওয়ান জিজ্ঞেস করলো,

“তুই কি কিছু জানিস?”


 

আয়শা একবার চারপাশে তাকিয়ে আস্তে বললো,

“তোকে এখনই কিছু বলতে পারবো না, কিন্তু এটা জানিস — যেটা তোর কাছে এসেছে, সেটা শুধু একটা ফাইল না... এটা একটা যুদ্ধের শুরু।”


 

আয়শা একটা ছোট ফাইল-হোল্ডার এগিয়ে দিলো।

“এটা রেখে দে। কাজে লাগবে,” সে বললো।


 

রিদওয়ান ফাইলটা হাতে নিলো, কিন্তু তার ভিতরে একটা অজানা ভয় ধীরে ধীরে জমে উঠতে লাগলো।


 

চুপচাপ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে, রিদওয়ান হঠাৎ প্রশ্ন করলো—


 

"আয়শা, তুই কিভাবে জানলি আমার কাছে তথ্য আছে?"


 

আয়শা তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ…

তার চোখে ছিল না ভয়, না বিস্ময় —

শুধু এক অদ্ভুত ঠান্ডা হাসি।



 

সে ঠাণ্ডা গলায় বললো,

“সব সময় না জানলেও চলেও না, রিদু। কিছু জিনিস সময় হলে বুঝতে হয়।”


 

“তুই ঠিক করে বল, আয়শা। এটা কাকতালীয় না। আমি কাউকে কিছু বলিনি, ফাইলের কথা তো একমাত্র আমি জানি!”

রিদওয়ান জোর দিয়ে বললো।


 

আয়শা একটু হেসে বললো,

“আবার ভাবছো আমি তোমার শত্রু?”


 

তারপর সে চোখ সরিয়ে বললো,

“আমি অনেক কিছু জানি, রিদু। কারণ আমিও এই খেলার একটা অংশ। কিন্তু আমি চাই না তুমি ক্ষতি পাও।”


 

এই বলে আয়শা দ্রুত উঠলো।

তার যাওয়ার সময় রিদওয়ান বললো,

“তুই কার হয়ে কাজ করিস? আমার না অন্য কারো?”


 

আয়শা দরজা খুলে বেরিয়ে যাবার সময় শুধু বললো—

“যে সত্যিটা দেখায় না, সে-ই সবচেয়ে বিপজ্জনক।”


 

দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।



 

---


 

রাত ১১:৫৭


 

রিদওয়ান ল্যাপটপে আয়শার দেওয়া ফাইলটি খুললো।

ফাইলের ভিতরে কিছু নম্বর কোড আর অদ্ভুত লোগো:

🔺 P-7 Internal Track List

তার নিচে লেখা ছিলো —

“লক্ষ্য: তথ্য বহনকারী ব্যক্তি – ID#00071”


 

রিদওয়ানের চোখ আটকে গেলো...

ID নম্বরটা তার নামের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

মানে?


 

তাকে আগেই টার্গেট করা হয়েছিলো!




 

রিদওয়ান আয়শার দেওয়া ফাইল খুঁটিয়ে দেখছিল।

প্রতিটি কোড, প্রতিটি নাম তার চোখে ঝাপসা হয়ে আসছিল —

কিন্তু এক জায়গায় সে থেমে গেলো।


 

একটি নাম —

Dr. Tamjid Rahman

লিখা ছিল তার পাশে:

“টার্গেট-৭: অ্যাসেট এক্সপোজার রিস্ক”


 

ড. তামজিদ তার ছোটকালের শিক্ষক, যে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন বছরখানেক আগে।

তাহলে… প্রোটোকল-৭ শুধু এখন নয়, বহু আগেই কাজ শুরু করেছে।



 

---


 

🕶️ রাতে


 

রিদওয়ান সিদ্ধান্ত নেয় — সে চুপ করে বসে থাকবে না।


 

সে আয়শার পেছনে অনুসরণ শুরু করে।

একটা হালকা ট্র্যাকিং অ্যাপসে সে আয়শার ফোনের লোকেশন ধরে ফেলে।


 

বিকেল ৫টা।

আয়শা ঢুকেছে পুরান ঢাকার এক পুরনো পরিত্যক্ত বাড়িতে।

চারদিকে ধ্বংসস্তুপ, আর ভিতরে আলো নেই।


 

রিদওয়ান দূর থেকে দেখে — আয়শা কারো সাথে কথা বলছে।

তাদের একজন মাথায় হুড পরে আছে। আরেকজন ভিডিও কলে কী যেন দেখাচ্ছে।


 

সে শব্দ পায় না, কিন্তু একটা নাম শুনে তার গা শিউরে ওঠে—


 

“Phase Two begins tonight.”



 

---


 

🔍 ফিরে এসে


 

রিদওয়ান তার ঘরে ফিরে গিয়েই ফাইল খুলে দেখলো —

নতুন একটা ফোল্ডার যুক্ত হয়েছে আয়শার পেনড্রাইভে।


 

ফোল্ডারের নাম:

Shadow_Network

ভিতরে গোপন নোট, ছবি, আর একটি ভয়েস ক্লিপ


 

 “পরবর্তী ধাপ শুরু হচ্ছে।

তথ্য সংগ্রাহক রিদওয়ান সফল হলে... আমাদের অস্তিত্ব টিকবে।

ব্যর্থ হলে... সব শেষ।”





 

---


 

🔚 পর্ব শেষে:


 

রিদওয়ান এখন জানে—

সে শুধু খেলার একজন নয়,

সে পুরো যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু।

আর আয়শা...

সে কী রিদুর পক্ষে?

না শত্রুর ছায়া?


 

Comments

    Please login to post comment. Login