Posts

চিন্তা

তাজিয়া, স্মৃতি ও প্রতিরোধের প্রতীক!

July 6, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

169
View

৬১ হিজরির কারবালায় নবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদ। ইসলামকে নিজের ক্ষমতার ঢাল বানিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই গণহত্যা চালানো হয়। ইয়াজিদ ও তার মদদপুষ্ট হাফেজ (এখানে উল্লেখিত ‘হাফেজ’ হলেন ইয়াজিদের সময়কার সেই তথাকথিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যারা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করলেও ন্যায়ের পক্ষে নয়, বরং ক্ষমতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন), কাজি, মোয়াজ্জিনদের একটি দল তখন ইসলামের নামে এ হত্যাযজ্ঞকে ‘বৈধ’ ঘোষণা করেছিল।

এই ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না -মুসলিম নামধারী শাসকেরাই নবীর পরিবারকে তৃষ্ণায় কাতর করে হত্যা করেছিল। তারা মিম্বর দখল করে নবীর জামাতা হযরত আলীকে অভিসম্পাত দিত, আর হোসাইনকে ‘বিদ্রোহী’ বলে চিহ্নিত করত।

আজ যারা তাজিয়া মিছিল কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রা ও লোকজ প্রতীককে ‘বিদআত’ বা ‘হারাম’ বলে, তারা মূলত সেই একই চিন্তার উত্তরসূরি -যারা ইতিহাসকে মুছে ফেলার খেলায় নিযুক্ত। তারা চায় স্মৃতিহীন, একমাত্রিক, একপেশে আরবকেন্দ্রিক একটি সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে। কিন্তু ইতিহাস কেবল বিজয়ীর হাতে নয়, শহীদের রক্তেও লেখা হয়। সেই রক্তের দাগ কখনো শুকায় না।

কারবালার প্রান্তরে নবী পরিবারের রক্তপাত কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, বরং এক পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় নির্মমতা। তৃষ্ণার্ত শিশুদের আহাজারি, বিবি সখিনার পালকি, কাসিমের রক্তাক্ত বিয়ের রাত কিংবা হোসাইনের রক্তভেজা ঘোড়া -এসব নিছক ধর্মীয় আচার নয়; এগুলো এক জীবন্ত প্রতিরোধ, এক চলমান শোকগাথা।

তাজিয়া তাই কেবলমাত্র শিয়া চেতনার একমাত্রিক অনুশীলন নয়, বরং শাসক শ্রেণির ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টার বিরুদ্ধে এক অবিনাশী সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ।

যেমনভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার পেঁচা বা হাতিকে 'ইসলামবিরোধী' আখ্যা দিয়ে আমাদের লোকসংস্কৃতিকে দমন করতে চায় এক শ্রেণি, তেমনি তাজিয়ার প্রতীকগুলোকে 'বিদআত' বলে খারিজ করে দিতে চায় ওই একই শ্রেণি। কিন্তু বহুত্ববাদী সমাজ কায়েম করতে চাইলে অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিয়ে তাদের কৃত্য, লোকাচার ও সংস্কৃতিকে সমান সম্মান দিতে হবে। নিজেরটাই একমাত্র সত্য ভাববার মধ্যে অহম আছে কিন্তু সর্বজনস্বীকৃত মানবতাবাদী বাহাদুরি নেই।

আমরা বরাবর মজলুমের পক্ষের লোক। মীর মশাররফ হোসেন রচিত মহাকাব্যিক উপন্যাস বিষাদ সিন্ধুর আখ্যান ভুলিনি। ১০ মহররম আশুরার শোকাবহ দিনে মজলুম ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবার পরিজনকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।

ফারদিন ফেরদৌস 
৬ জুলাই ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login