Posts

গল্প

অজানা গ্রামের আঁধারে

July 6, 2025

Manish Biswas

48
View

গ্রীষ্মের রোদ যেন শহরের দেয়াল ছুঁয়ে পুড়িয়ে দিতে চাইছিল চারপাশ। স্কুল ছুটি পড়তেই চারজন বন্ধু ঠিক করল—এবার শহরের কোলাহল ছেড়ে একেবারে প্রকৃতির কোলে কোথাও হারিয়ে যাবে। কোথায় যাবে কেউ জানত না, শুধু জানত, নতুন কিছু চাই। অজানা, অচেনা, একটু গা ছমছমে, একটু রোমাঞ্চকর।

এই চার বন্ধু—
মণীশ, ছিমছাম চেহারা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, অদ্ভুত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর রহস্য সমাধানের জন্য পরিচিত নিজের বন্ধুদের মধ্যেই।
মিলন, হাসিমুখের ছেলে, মজা না করলে যার পেট চলে না।
দিব্যায়ন, যার চোখে ক্যামেরা থাকুক বা না থাকুক, সবকিছুই সে কেমন জানি অন্যভাবে দেখে—ছবির চোখে।
পৃথ্বীরাজ, কাগজে তুলির ছোঁয়ায় সে সময়কে ধরে রাখতে পারে।

তাদের গন্তব্য—গোপালপুর। এক পাহাড় ঘেরা, বনঘেরা, ছোট্ট এক গ্রাম, যার নামও শহরের মানচিত্রে ঠিকমতো নেই।

গ্রামে পৌঁছেই তারা প্রথম লক্ষ্য করল—এখানে মানুষজন যেন সবসময় চুপচাপ। মুখে হাসি নেই, অথচ অদ্ভুতভাবে সবাই ভয় পায় কিছু একটা। কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলে না, শুধু চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলে—
“সন্ধ্যার পর বাইরে যাস না বাবা…”

এইরকম এক সন্ধ্যায়, গ্রামের এক প্রান্তে বাঁশঝাড়ের কাছে তাদের দেখা হল রাধিকার সঙ্গে।

দুর্দান্ত চেহারা, চোখে বিদ্রোহের আগুন, হাতে বাঁশি—সে ছিল মোড়ল হারাধন মণ্ডলের মেয়ে। গ্রামের প্রায় সব কিছুর উপর তার একচেটিয়া দখল। দুষ্ট ছেলেদের ভয়, বুড়োদের ভরসা আর মেয়েদের অনুপ্রেরণা।

প্রথম দিনেই সে জিজ্ঞাসা করল মণীশকে,
"তোমরা কী জন্য এসেছো এখানে?"

মণীশ জবাব দিল, “ভ্রমণ, বিশ্রাম… আর কিছু রহস্য থাকলে সেটাও সমাধান।”

রাধা এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকল তার দিকে।
“রহস্য পেতে চাইলে, গোপালপুর তোমার জন্য ঠিক জায়গা। কিন্তু একবার ঢুকলে ফেরার রাস্তা কষ্টের হতে পারে।”

পরের দিন সকালে জানা গেল, গ্রামের মাঝখান দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে, তার পাড়ে কয়েকদিন পরপরই এক একজন মানুষ অদ্ভুতভাবে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। কে বলছে—ভূতের কাজ, কেউ বলছে—জলপরী টেনে নিচ্ছে।

কিন্তু মণীশ জানত—এতদিনের অভিজ্ঞতায় সে শিখেছে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূত হচ্ছে মানুষ নিজেই।

সে সিদ্ধান্ত নিল—এবার সন্ধ্যা নামার আগেই রহস্যের জাল খুলতেই হবে।

মিলন গ্রাম ঘুরে ঘুরে লোকদের থেকে গল্প জোগাড় করছিল। দিব্যায়ন ক্যামেরা হাতে রাতের অন্ধকারে নদীর পাড়ের ছবি তুলছিল। পৃথ্বীরাজ বাঁশঝাড় আর নদীর মাঝখানের ছোট্ট দ্বীপের একটা স্কেচ করছিল, যেখানে অনেকেই বলত—“ওখানেই সে থাকে।”

আর মণীশ—সে খুঁজে বের করল গ্রামের পুরনো দলিলপত্র, যেখানে দেখা গেল—নদীর ওই দ্বীপ একসময় চোরাচালানকারীদের গোপন ঘাঁটি ছিল। সেই পথ আবার চালু হয়েছে কী?

রাধিকা পাশে এসে দাঁড়াল। “তুমি ঠিক বুঝেছো। আমি অনেকদিন ধরেই সন্দেহ করছিলাম, কিন্তু একা পারছিলাম না। আমি তোমার সঙ্গে আছি।”

সন্ধ্যা হল। চার বন্ধু আর রাধা মিলে পৌঁছাল সেই দ্বীপে।

সেই মুহূর্তে তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ল এক দল লোক—নদীপথে রাতের আঁধারে গাঁজা ও অস্ত্র পাচার করছিল। তারা বোঝে ফেলেছিল, এইসব নিখোঁজ হওয়া আসলে অপহরণ, যাতে গ্রামের মানুষকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা যায়।

মণীশ তার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে, মোবাইলে রেকর্ড করা তথ্য দিয়ে, পুলিশে খবর দিয়ে, পুরো চক্রটিকে ধরিয়ে দেয়।

গাঁজা, অস্ত্র, অপহরণ—সব ফাঁস হয়। গ্রাম হাসি ফিরে পায়। আর গ্রামের মোড়লও মেনে নেয়—তার মেয়ের সাহস আর শহরের ছেলেদের মেধা একসঙ্গে কী করতে পারে।

শেষ দিন সকালে, মণীশ যখন ফিরছে, রাধা তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

“তুমি চলে যাচ্ছো?”

“হ্যাঁ। রহস্য ফুরিয়েছে।”

রাধা একটু হেসে বলল, “ভালোবাসার কোনো রহস্য থাকবে না? ওটাও কি সমাধান করে ফেলেছো?”

মণীশ একটু থেমে বলল, “ভালোবাসা সমাধান নয়, সেটা অনুভবের জায়গা। যদি তুমি চাও, আমিও ফিরে আসব... এই গ্রামের নয়, তোমার জন্য।”

রাধা হেসে মাথা নিচু করল। আর মণীশের চোখে পড়ল সেই হাসি—যে হাসিতে অন্ধকারের সমস্ত রহস্য ছায়া হয়ে মিলিয়ে যায়।

শেষ।
(চাইলে এই গল্পের ধারাবাহিকতা বা সিকুয়েল লেখা যেতে পারে, যেখানে রাধা ও মণীশ জুটি মিলে নতুন রহস্যে নামে।)

Comments

    Please login to post comment. Login