রাজপুর ইউনিয়নের ছোট একটা গ্রাম সাইক চাইল । অপরুপ সুন্দরে ঘেরা এই গ্রাম । গ্রাম এর প্রধান ছিলেন ইয়াছিন নামে এক ব্যক্তি। মানুষ হিসেবে তিনি খুব ভালো ছিলেন । গ্রামের সব মানুষের সুখে দুঃখে তিনি পাশে থাকতেন । গ্রামের মানুষ ও তাকে সম্মান করতো ভালোবাসাতো । ইয়াছিন সাহেবের দুই ছেলে এক মেয়ে ছিলো। ওনার ছেলে মেয়েরাও অনেক ভালো ছিলো। বাবার মতো তারাও এলাকার মানুষের জন্য সব সময় ভালো কিছু করার চেষ্টা করতো । ইয়াছিন সাহেবের বড় ছেলের বিয়ে হয় কিছু দিন আগে। তিনি গ্রামের সব এতিম ও অসহায় মানুষদের তার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় । কয়েক দিনের মধ্যে শুনেছি তার মেয়ে মিনা মণির বিয়ে । মিনা মণির খুবই ভালো একটা মেয়ে । গ্রামের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার একটা প্রথা আছে । অভিভাবকেরা ধারণা করে মানে সম্মানে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই তারা বাঁচে। কিন্তু মিনা মণি তাদের এই ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে অভিভাবকদের বুঝিয়েছে । মেয়েরাও যে ছেলেদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারে তা বুঝিয়েছে ।মিনা মণি তার ভাইদের সহায়তায় একটি পাঠশালা খোলে যেখানে গরিব অসহায় ছেলে মেয়েদের বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হয় ।মিনা মণি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করিয়ে তা শহরে নিয়ে বিক্রি করে । সেই টাকা মহিলাদের দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছে । মিনা মণির বিয়ের দিনটা চলেই এলো ।শুনেছি সে বলেছে তার বিয়ের জন্য যে টাকা খরচ করবে তা দিয়ে যেনো যাদের থাকার ঘর নেই তাদেরকে ঘর করে দেওয়া হয় । অনেকটা ছোট করেই তার বিয়েটা দেওয়া হয় । মিনা মণি যে রকম উদার মনের মানুষ সেই রকম সুন্দর ও ছিলো। লোকে বলতো তার হাসি দেখলেই নাকি মানুষের সারাদিন ভালো যায় ।তার স্বামী নাকি অনেক ধনী ঘরের ছেলে শহরে থাকে তাকেও নাকি শহরে নিয়ে যাবে। মিনা মণির শহরে যাওয়ার কথা শুনে রনি কান্না করা শুরু করে দিয়েছে ঠিক মতো খাবার খায় না । রনির কথা শুনে মিনা মণি ও তার স্বামী রনির সাথে দেখা করে ।
তার স্বামী রনিকে অনেক আদর করে এবং বলে মণি আবার আসবে তোমরা যখন আস্তে বলবে আর তোমাদের ও যখন মণি কে দেখতে ইচ্ছা করবে তোমরা চলে আসবে আমাদের বাসায় । রনি হলো মিনা মণির পাঠশালার একজন ছাত্র। রনি সারাদিন মিনা মণির সাথে থাকতে পছন্দ করে। মিনা মণির জন্য পাগল সে । মিনা মণি শহরে চলে যায়। গ্রামের মানুষ যখন ডাকে সে চলে আসে তাদের প্রয়োজনে । গ্রামের এক মহিলা ছিলো আমেনা নামে । আমেনার স্বামী সন্তান কেউই ছিলোনা ।সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামের কোন মানুষ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি ।মিনা মণি যখন আমেনার অসুস্থতার খবর শুনতে পায় তখন সে এসে আমেনাকে শহরে নিয়ে যায়। তার বাসায় রাখে চিকিৎসা করায় তার সেবা যত্ন করে সুস্থ করে গ্রামের দিয়ে যায় । একদিন মিনা মণির স্বামী তাকে বলে মণি তুমি তোমার পাঠশালার বাচ্চাদের কয়েক দিনের জন্য শহরে নিয়ে এসো। তাদের কে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাতে তারা খুশি হবে আর কিছু শিখতে পারবে। মিনা মণি গ্রামে আসে বাচ্চাদের মাকে বলে । মায়েরা বলে মাগো তুমি এমনি আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছ এখন শুধু শুধু টাকা খরচ করার দরকার নাই। মিনা মণি তাও তাদেরকে বুঝিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে আসে ।মিনা মণি ও তার স্বামী বাচ্চাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাচ্চাদের সাথে অনেক আনন্দ করে । এই আনন্দ হঠাৎ তৈরি হয় বিষাদে । তারা যে বাসে করে ঘুরা ঘুরি করছিলো হঠাৎ সেই বাসটা দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে । কোন বাচ্চার হাত ভাঙ্গে,কোনটার পা ভাঙ্গে,কারো মাথা ফাটে । এরমধ্যে একটা বাচ্চার দুই টা চোখ নষ্ট হয়ে যায়।মিনা মণি ও তার স্বামী দুইজন ই আঘাত পায় শরীরে। মিনা মণির স্বামী সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।মিনা মণি যখন মানতে পারে একটা বাচ্চার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নতুন চোখ দিতে পারলে বাচ্চাটা আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে ।মিনা মণি তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে বাচ্চাটাকে তার একটা চোখ দান করে । যখন বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায় এবং মিনা মণি ও সুস্থ হয়ে যায়। তখন বাচ্চার মা মিনা মণির কাছে গেলে মিনা মণি বলে চাচী আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার জন্য আজ আপনার বাচ্চার এই অবস্থা। চাচী বলে না মা তুমি আজকে আমার বাচ্চার জন্য যা করেছো সারা জীবন আমরা তোমার কাছে ঋণী থাকবো। মিনা মণি যে ত্যাগ স্বীকার করেছে , গ্রামের মানুষ সারা জীবন তা মনে রাখবে ।